একযোগে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে এখনই : বিআইডাব্লিউটিএ চেয়ারম্যান

কমোডর এম মোজাম্মেল হক চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডাব্লিউটিএ)

বিআইডাব্লিউটিএ চেয়ারম্যান এম মোজাম্মেল হক এর এই সাক্ষাৎকারটি আজ দৈনিক কালের কন্ঠে প্রকাশিত হয়। সাক্ষাৎকারটির প্রাসঙ্গিকতা বিবেচনা করে রিভার বাংলা  ডট কমের পাঠকদের জন্য প্রকাশ করা হলো। কৃতঞ্জতা দৈনিক কালের কন্ঠ। – সম্পাদক রিভার বাংলা (একটি নদী বিষয়ক পত্রিকা)

‘নদী দখলমুক্ত করার এ অভিযান অনেকটা যুদ্ধের মতো। এ যুদ্ধে সংশ্লিষ্ট সব সরকারি সংস্থার অংশগ্রহণ দরকার। এ ব্যাপারে রাজনৈতিক অভিপ্রায় সরকার স্পষ্ট করেছে। কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার সবচেয়ে ভালো সময় এখনই।’ আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেল পুনরুদ্ধারের চলমান অভিযান প্রসঙ্গে কথাগুলো বললেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডাব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান কমোডর এম মোজাম্মেল হক।

এক সপ্তাহের অভিযানে অনেক স্থাপনা ভাঙা হয়েছে। এসব অবৈধ স্থাপনা ভেঙে অপসারণের কাজটা এখন নৌপরিবহন সংস্থাই করছে, তবে এর খরচ অবৈধ দখলদারকেই বহন করতে হবে বলে জানিয়ে দিলেন তিনি। মোজাম্মেল হক বলেন, ‘তাদেরকে আমরা পেনালাইজ করব। যাদের শনাক্ত করতে পারব, তাদের কাছে আমরা রেজিস্ট্রি ডাকযোগে বিল পাঠিয়ে দেব।’ গতকাল নিজ দপ্তরে কালের কণ্ঠ’র সঙ্গে আলাপকালে তিনি রাজধানী ঢাকাকে ঘিরে চারটি নদী সংরক্ষণে গৃহীত ও পরিকল্পিত নানা উদ্যোগ, বৃত্তাকার নৌপথের সম্ভাবনা নিয়েও কথা বলেন।

নদীকে দখলমুক্ত করার এ অভিযানকে টেকসই করতে হলে পানি উন্নয়ন বোর্ড, ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, রাজউক, দুই সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানকে সম্পৃক্ত করা আবশ্যক বলে মনে করেন বিআইডাব্লিউটিএর প্রধান। তিনি জানান, আগামী রবিবার নৌপরিবহনমন্ত্রীর সভাপতিত্বে একটা সমন্বয়সভায় এসব সংস্থাকেও আহ্বান জানানো হবে। এর পর থেকে সমন্বিত অভিযান চলবে। এতে এক সংস্থার কাজের সঙ্গে অন্য সংস্থার ‘ওভারল্যাপিং’ এড়ানো সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

বিআইডাব্লিউটিএ চেয়ারম্যান জানান, বুড়িগঙ্গা-আদি বুুুড়িগঙ্গার পাড় ঘেঁষে যে বেড়িবাঁধ তৈরি হয়েছে তার বাইরের দিকে ২০ ফুট থেকে ১৫০ ফুট পর্যন্ত জমি অধিগ্রহণ করা আছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের। সেই জমি চিহ্নিত করে উদ্ধারে ওই সংস্থার ভূমিকা লাগবে। তিনি বলেন, ‘অনেকে কাগজপত্র নিয়ে এসে দাবি করছে, পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে জমি লিজ নিয়েছে, ডিসি অফিস থেকে লিজ নিয়েছে। সেখানে স্থাপনা তৈরির অনুমোদন আছে তাদের। আমরা সবাই বসে দেখব। একযোগে কাজ করব। নদীর মধ্যে সরকারি সম্পত্তি কেউ অবৈধভাবে দখল করে রাখতে পারে না। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা সিটি করপোরেশন, এখন যেখানে অভিযান চলছে সেটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায়। আমরা দক্ষিণের মেয়রের সহযোগিতা চাইব।’

বিআইডাব্লিউটিএর চেয়ারম্যান জানান, ঢাকা শহরকে ঘিরে বৃত্তাকার নৌপথ তৈরির পাশাপাশি নদীর পারে আশুলিয়া, শিরনির টেক, পূর্বাচল বা চাহিদা থাকলেও অন্য কোথাও তিন থেকে চারটি ইকো পার্ক তৈরি করা হবে, গত বছর শীতলক্ষ্যার পারে যেমনটি করা হয়েছে সেটির আদলে। ১০ হাজার স্থায়ী সীমানা পিলার বসানো হবে। তিন থেকে সাড়ে তিন কিলোমিটার ওয়াকওয়ে তৈরি হবে, পাশে সবুজ বনায়ন, নদীর পারে স্থায়ী রেলিং হবে, পেছনে পিলার বসানো হবে ৬০ ফুট পাইলিং করে। বৃত্তাকার নৌপথে ১৯টি আধুনিক জেটি হবে, যাতে বড় জাহাজ ভিড়তে পারে। ওয়াকওয়ে নির্মাণসহ রাজধানীকে ঘিরে আরো কিছু নদীভিত্তিক উন্নয়নকাজের জন্য ৮৫০ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।

আহসান মঞ্জিলকে ঘিরে দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা তৈরির পরিকল্পনাও রয়েছে তাঁদের। সে জন্য সোয়ারিঘাট থেকে ফলের আড়ত স্থানান্তর দরকার, এ ব্যাপারে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানান বিআইডাব্লিউটিএ চেয়ারম্যান। কমোডর এম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘এটি সরানো গেলে আহসান মঞ্জিলে আমরা পর্যটনের মনোরম পরিবেশ তৈরি করব।’

আরো পড়তে পারেন….

বুড়িগঙ্গাতীর উদ্ধার অভিযান : প্রায় ১২০০ স্থাপনা উচ্ছেদ

আত্রেয়ী দিয়ে ভারত-বাংলাদেশ লঞ্চ চলবে, এমন স্বপ্ন তো দেখাই যায়

বাংলার নদী বাঁচাও গন কনভেনশন

সংশ্লিষ্ট বিষয়