কিশোরগঞ্জের প্রাণ প্রবাহ নরসুন্দাকে বাঁচাতে আসুন সবাই ঐকবদ্ধ হই

কিশোরগঞ্জের

মানুষের মত নদীরও বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে। নদীর কেউ কোনো ক্ষতি করতে পারে না, ভরাট করতে পারে না, দখল করার কোনো এখতিয়ার কারো নেই। নদী তার স্বাভাবিক গতিতে প্রবাহিত হবে। আদালতও এর স্বীকৃতি দিয়েছেন। এটাই স্বাভাবিক এবং প্রকৃতির নিয়ম। কিন্তু মানুষ এর ব্যত্যয় ঘটাচ্ছে, নদীর সঙ্গে অন্যায় অচরণ করা হচ্ছে, যা মানুষের আচরণের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। নদীমাতৃক বাংলাদেশে নদীকে হত্যা করার একটা মহোৎসব চলছে। এমন একটা অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে যে এখন বাংলার সেই চেনারূপ, কলকল রবে নিরবধি বয়ে যাওয়ার রূপময়তা প্রায় নিঃশেষ। নদী নেই সর্বত্র নদীর লাশ বিদ্যমান। এ এক বিভৎসতা, করুণ পরিণতি। আর এসবই ঘটছে মনুষ্যরূপী লোভি ও অবিবেচকদের দ্বারা। সভ্য সমাজ ও রাষ্ট্রে এটা কাম্য হতে পারে না।

আমাদের প্রিয় নরসুন্দা, কিশোরগঞ্জের নরসুন্দা আজ মৃতলাশ। এর করুণ পরিণতি আমাদের দ্বারা ও আমাদের চোখের সামনেই সংঘটিত হচ্ছে। একদিন এই খরস্রোতা নদীকে ঘিরেই এ জনপদের পত্তন হয়েছিলো। এ নদীর পললে গড়ে উঠেছিলো এখানকার সভ্যতা, উজ্জল সংস্কৃতির। এ নদীর প্রবাহের মতই উদার ও গতিময় ছিলো এখানকার মানুষের মনোজগত। এখানকার জনসমাজে ছিলো শৃঙ্খলা, সখ্যতা ও সহমর্মিতার পরিবেশ। পথচলার একটা নিশানা ছিলো। আজ নদী নেই, তাই প্রাণহীন হয়ে গেছে এখানকার সমাজ ও গন্তব্যহীন হয়ে পড়েছে আমাদের ভবিষ্যৎ।

কিন্তু এটা তো কাম্য নয়। আমাদের প্রিয় কিশোরগঞ্জ এবং প্রিয় নরসুন্দাকে বাঁচাতে হবে। নরসুন্দার বর্তমান দুর্দশায় এখানকার সচেতন মানুষ ব্যকুল না হয়ে পারে না। নরসুন্দার বুকের ক্ষত এখানকার মানুষের মনকেও সমানভাবে রক্তাক্ত করেছে। শহরের মাঝ দিয়ে প্রবাহমান প্রকৃতির অবারিত জলধারা এ যে কি এক বিশাল সম্পদ এর এমন করুণ পরিণতি কখনো মেনে নেয়া যায় না। এই সম্পদকে পুনরোদ্ধারের প্রয়াস আমরা কামনা করি। আমাদের বিশ্বাস এখানকার সচেতন মানুষের কন্ঠের সঙ্গে সুর মেলাবেন এ আঞ্চলের সর্বস্থরের নেতৃবৃন্দ, তাঁরা দায়িত্ব নেবেন এই অচলায়তনকে ভাঙ্গার।

আমি আশা করবো প্রাথমিক পর্যায়ে আমরা নরসুন্দায় সব বর্জ্য ফেলা বন্ধ করার উদ্যোগ নিতে পারি। আমরা নরসুন্দার কচুরিপানা অপসারণ করতে পারি। নরসুন্দার দুপারের রাস্তা (ওয়াক-ওয়ে) চলাচলের উপযুক্ত করতে পারি। একটা সময় আমরা দেখেছি কত বড় বড় কাজ এখানকার সমাজ-সংস্কারকদের প্রচেষ্ঠায় সাধারণ মানুষের স্বতস্ফুর্ত অংশ গ্রহণের মাধ্যমে সহজে সমাধা হয়ে গেছে। এই নদীর কচুরিপানাও আমরা স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে অপসারণ করতে পারি। শুধু প্রয়োজন উপযুক্ত নেতৃত্ব ও আন্তরিক উদ্যোগ। এছাড়া ওয়াক-ওয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব পৌর কর্তৃপক্ষের। তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব আশা করি তারা পালন করবেন। তাহলে পথচারিদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন ও স্বস্থিদায়ক হবে। প্রাথমিক এ কাজগুলো সহজেই সমাধানযোগ্য ও সম্ভব।

অন্যদিকে নদীর প্রবাহকে বাঁধগ্রস্থ করেছে এমন সব স্থানকে চিহ্নিত করার উদ্যোগ নিতে হবে। তারপর এসব কি করে অপসারণ করা যায় তাও ভাবতে হবে। নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে একে খনন করতে হবে। কারণ জলের প্রবাহ হলো নদীর রক্তের ধমণি। একে পুনরুদ্ধার করতেই হবে। তাহলে নরসুন্দার প্রবাহের সঙ্গে এতদঞ্চলের মানুষের প্রাণে গতি সঞ্চারিত হবে। দলমত নির্বিশেষে সকলের প্রতি আহবান জানাই আসুন সবাই মিলে নরসুন্দাকে বাঁচাই ও এজন্যে ঐকবদ্ধ হই।

আরো পড়তে পারেন…..

আমার সখা নরসুন্দা : মু আ লতিফ

স্মৃতিকথা : আমার সখা নরসুন্দা : মু আ লতিফ (দ্বিতীয় পর্ব)

আমার সখা নরসুন্দা : মু আ লতিফ (তৃতীয় পর্ব)

সংশ্লিষ্ট বিষয়