জল নেই কোথাও, শুকনো নদীখাতের হাহাকার পৌঁছেছে মাটির নীচেও

জল

নদী জল ও পরিবেশের কথা বলতে শুরু করেছিলাম দু’হাজার পাঁচ সাল থেকে। তখন উত্তরবঙ্গে পরিবেশের কথা খুব জোরালো ভাবে শুরু হয়নি। পরিবেশপ্রেমী কিছু সংস্থা পরিবেশের কথা বলতে শুরু করেছে। আর আজ দু’হাজার উনিশ সালে শেষে সে কথা ভয়ংকর ভাবে বোঝা যাচ্ছে। কথা মিলে গেলে আনন্দ হওয়া স্বাভাবিক। কিন্ত এখানে তা হওয়ার কথা না। আত্রেয়ীতে এখন হয়তো জল আছে কিছুটা সেটা ব্যতিক্রম। কিন্ত অধিকাংশ নদী? পুনর্ভবা, টাঙ্গন, ইছামতি, শ্রীমতি, মহানন্দা ও অন্য নদীর অবস্থা ভয়ংকর। নদীতে জল থাকে না।ফলে নদীর জল কৃষিকাজে ব্যবহার করার অবস্থা এই মুহুর্তে প্রায় নেই। শুধু জেলা বা উত্তরবঙ্গে নয় একবার নদীর প্রশ্নে ও জলের প্রশ্নে তাকানো যাক সমগ্র দেশের দিকেই। চতুর্দিকেই নদী ও জলের হাহাকার। নদীখাত শুকনো, খটখটে। জলাশয় গুলিতে জল নেই। জলের উৎস গুলি থেকে জল পাওয়া যাচ্ছেনা। চড়া দামে জল কিনতে হচ্ছে। তাও সবাই পাচ্ছেনা। বাড়ি থেকে বহুদূরে জল আনতে গিয়ে নানান অসামাজিক ও অপ্রীতিকর ঘটনার সম্মুখীন হচ্ছেন মহিলারা। শিশুরাও বাদ যাচ্ছেনা।বহুদূর থেকে জল আনতে অনেক সময়ই স্কুলে যেতে পারছে না তারা। চেন্নাই তে জল নিয়ে হিংসা- সংঘর্ষের ঘটনা চরম বাস্তবকে সামনে এনেছে। বিদর্ভ কিংবা উত্তর প্রদেশের বেশ কিছু জায়গার পরিস্থিতিও ভয়াবহ।

আরো পড়তে পারেন….

নদীকে নদীর কাছে ফিরিয়ে দিন : ড. মুহাম্মদ ইদ্রিস আলী

দক্ষিণ দিনাজপুরেও জল নিয়ে বাজারের মত বসছে। জলের ট্যাঙ্ক এসে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য দাঁড়াচ্ছে ভাড়িলা, পাহাড়পুর, অভিরামপুরে। জলকষ্টের প্রতিকারের দাবীতে রাস্তা পর্যন্ত অবরোধ করছে মানুষ। হরিরামপুরের মতো জায়গাতে দোতালাতে পাম্প দিয়ে জল উঠছে না। তাই জলবাহকের বন্দোবস্ত করে জল তোলাতে হচ্ছে পারিশ্রমিকের বিনিময়ে । এটা তো আগে ছিল না আমাদের জেলায়।এই দিনও দেখতে শুরু করলাম।আগামীতে কি দিন অপেক্ষা করছে কে জানে! বৃষ্টির পরিমাণ করছে।কোথাওবা বৃষ্টির দেখাও নেই। নদীতে জল থাকবে কোথা থেকে? অথচ নদীতে জল ধরে রাখা একটা জরুরী ও ভাল কাজ হতে পারতো। নদী খনন করে নদী খাতের গভীরতা বৃদ্ধি অবশ্য কর্তব্য ছিল। সে কাজে এখনও ব্যর্থ আমরা। এখনও চূড়ান্ত ভাবে জল অপচয় হচ্ছে।মাটির নীচের জল শেষ হতে বসেছে। রাজ্যের বা রাষ্ট্রের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা কই? সাধারণ মানুষের ভূমিকাই বা কি??
এটা ঠিক যে এই ভয়ংকর পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আওয়াজ উঠতেশুরু করেছে। এখন আর শুধু নদী ও পরিবেশ কর্মীরা নয়, অনেকেই মুখ খুলতে শুরু করেছে। গাছ লাগানোর, জল সংরক্ষণের, নদী রক্ষার কথা বলছে আম আদমি। তাহলে কি আগামীতে জলের জন্য হিংসা, মারামারি পেরিয়ে যুদ্ধের দিকেই চলেছি ? এক বৃহত্তর জলযুদ্ধ ? নাকি জল বাঁচিয়ে জল সচেতনতার বার্তা নিয়ে জল যোদ্ধা হিসাবে আমরা জলসম্পদ ও পৃথিবীকে রক্ষা করতে পারবো? উত্তর আছে আমাদের কাজে ও ভবিষ্যত সময়ে।

আরো পড়তে পারেন….

হায় ইছামতি!

“নদী দখলমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম চলবে“

সংশ্লিষ্ট বিষয়