ব্রীজই মেরে ফেলেছে সিংগুয়া নদীকে

বাংলাদেশকে নদীমাতৃক দেশ বলা হলেও বর্তমানে দেশের অনেক নদী মৃত প্রায়। ইতিমধ্যে অনেক নদী তার নাব্যতা হারিয়েছে। প্রাকৃতিকভাবেই নদ-নদীগুলো তাদের নিজস্ব গতিতে চলে। নদীতে বাঁধ, অবৈধ দখল, মাটিভরাটসহ বিভিন্ন আবর্জনা ফেলে মানুষ নদীর গতিপথে বাঁধার সৃষ্টি করছে।

অপরিকল্পিত নকশায় নদীতে নীচু করে ব্রীজ নির্মাণ করায় নদী তার নাব্যতা হারাচ্ছে, নদীর গতিপথে বাধাঁ সৃষ্টি হচ্ছে। যার ফলে যে কোন সময় প্রাকৃতিক দূর্যোগ তৈরি হতে পারে।

সিংগুয়া নদীটি পাকুন্দিয়া উপজেলার এগারসিন্দুরের খামাবিল হতে উৎপন্ন হয়ে গচিহাটা ও নিকলী হয়ে ঘোড়াউতরায় মিলিত হয়েছে। নদীটির দৈর্ঘ্য (প্রায় ২২.৪ কি.মি) কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া , কটিয়াদী, নিকলী এবং কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার মানুষ এই নদী থেকে বিভিন্নভাবে উপকৃত হচ্ছে।

ছবি: রিভার বাংলা।

এই নদীতে এক সময় বাঁশের সাঁকো দিয়ে মানুষ পারাপার হতো, সাঁকো দিয়ে পায়ে হেঁটে, শিশুদের কোলে করে, বাই সাইকেল নিয়ে মানুষের হাতে হাত ধরে নদী পার হতো। নদীতে চলত পাল তোলা নৌকা, কুমাররা মাটির তৈরি জিনিস নৌকায় সাজিয়ে নিত, মানুষ কম খরচে মালামলাল একস্থান থেকে অন্যস্থানে নিত।

সিলেট বিভাগসহ হাওরাঞ্চল ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা বর্ষাকালে নৌকায় করে ধান, চাল, পাট, কাঠ ও কাঁচামাল পাকুন্দিয়া উপজেলার কালিয়াচাপড়া বাজারে নিয়ে আসত। সময়ের পরিবর্তনে দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় এই নদীতে অনেক ব্রীজ হয়েছে, মানুষের যাতায়তের সুবিধার জন্য।

উন্নয়নের নামে সিংগুয়া নদীতে অপরিকল্পিতভাবে একাধিক ব্রীজ নির্মাণ করায় নদী তার নাব্যতা চিরতরে হারিয়েছে। পাকুন্দিয়া উপজেলার পাটুয়াভাঙ্গা ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান সাহাবউদ্দিন আহমদের বাড়ির সামনে একটি ব্রীজ নির্মাণ করা হয়েছে। যা মহিষবেড় ও বালিয়াপাড়া আহুতিয়া গ্রামের সংযোগ করা হয়েছে, এই ব্রীজটির নীচ দিয়ে বর্ষাকালে নদীর পানি চলাচলে বাঁধার সৃষ্টি হয়। শুকনো মৌসুমে মাটি থেকে ব্রীজের নীচে ১০-১২ ফুট উচ্চতা থাকে, এসময় ব্রীজের নীচ দিয়ে নৌকা চলাচল তো দূরের কথা কলাগাছের বেলা নিয়েও চলাচল সম্ভব নয়। এরকম ব্রীজ নির্মাণ করা মানে নদীর গলায় ফাঁস দিয়ে নদীকে মেরে ফেলা। এ রকম ব্রীজ নির্মাণে মানুষের সুবিধার চেয়ে অসুবিধাই বেশি হচ্ছে। নদী তীরের মানুষের দাবি এরকম ব্রীজ ভেঙ্গে উঁচু করে ব্রীজ নির্মাণ করে ,নদী খনন করে সিংগুয়া নদীর যৌবন ফিরিয়ে দেওয়া হোক।

লেখক- এম জে এইচ বাতেন, সদস্য, রিভার বাংলা নদীসভা, কিশোরগঞ্জ জেলা কমিটি।

সংশ্লিষ্ট বিষয়