নদী ও পরিবেশ নিয়ে সামগ্রিক ভাবনা কোন রাজনৈতিক দলেরই নেই!  

পুনর্ভবা-ব্রাহ্মনী নদী বাঁচাতেই হবে, এটাই সময়ের দাবী 

দক্ষিণ দিনাজপুর, কলকাতা [ভারত] থেকে>>

ভোট দুয়ারে কড়া নাড়ছে। ভারতবর্ষের সমস্ত রাজনৈতিক দল তাদের নির্বাচনী ইস্তাহার প্রকাশ করছে। যার দিকে গভীর আগ্রহে তাকিয়ে ছিলো দেশের নদী ও পরিবেশ কর্মীরা। এবার আশা করা গিয়েছিলো যেভাবে নদী ও পরিবেশ রক্ষার দাবীতে হাজারো মানুষ, মৎস্যজীবী পথে নেমেছে, গণ কনভেনশন হয়েছে, বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে নদী ও পরিবেশ নিয়ে লাগাতার বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছেন, লোকসভা ভোটে রাজনৈতিক দলগুলো এই বিষয়টা গুরুত্ব দিয়ে দেখবে। কেননা নদী ও পরিবেশ সরাসরি আমাদের জীবন- জীবিকার সাথে যুক্ত। অথচ তা নিয়ে কোন উচ্চবাচ্য নেই। ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়কে চরম উপেক্ষাই করেছে রাজনৈতিক দলগুলি

এই বিষয়ে কথা হচ্ছিল রাজ্যের বিশিষ্ট নদী ও পরিবেশ চিন্তাবিদ নব দত্ত’র সঙ্গে । নব দত্ত বলেন- ‘ কোন রাজনৈতিক দলেরই নদী ও পরিবেশ নিয়ে কোন সামগ্রিক ভাবনা নেই। আমরা আগামী ৬ এপ্রিল কলকাতা প্রেস ক্লাবে এই নিয়ে আলোচনা করবো’।

বিশিষ্ট নদী ও পরিবেশ কর্মীদের মধ্যে জ্যোতির্ময় সরস্বতী বলেন- ‘ সব রাজনৈতিক দলের নেতা- নেত্রীদের কাছে সাধারণ মানুষ প্রশ্ন করুক- বিপন্ন নদীগুলি নিয়ে তারা কি ভাবছেন? শুধু ভোট চাইলেই হবে না।প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে’।

বিশিষ্ট নদী ও পরিবেশ কর্মী বিবর্তন ভট্টাচার্য বলেন- ‘আমরা বাম ডান সব দলেরই নির্বাচনী ইস্তাহার দেখেছি। কেউই উন্নয়নের নামে যে ভয়ানক ভাবে নদী ও পরিবেশ ধ্বংস হচ্ছে তার উল্লেখ করেননি। যাদের কাজ পরিবেশ বিক্রি তারা পরিবেশ বাঁচাবে?” বলে গভীর প্রশ্ন ছুঁড়েছেন তিনি।

নদী বিশেষজ্ঞ সুপ্রতীম কর্মকার বলেন” কংগ্রেস তার ম্যানিফেস্টোতে পরিবেশের কথা উল্লেখ করেছে ঐবং পরিবেশের জন্য তারা উচ্চস্তরীয় কমিটি গঠন করে এই বিষয়ে কাজ করবেন জানিয়েছেন ।কিন্ত বড় বাঁধ নিয়ে কি ভাবনাচিন্তা তাদের সেকথা তারা উল্লেখ করেননি”।

নদী ও পরিবেশ বন্ধু রাহুলদেব বিশ্বাস একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোকপাত করেছেন। তার মতে- আসলে রাজনৈতিক দল তাই বলে যেটা সাধারণ মানুষ শুনতে চায়।আমরা গাছ,নদী এসব নিয়ে কিছু শুনতে চাইনা, তাই তারাও বলে না, ভোটের ইস্যুও হয় না।যেদিন নদী ও পরিবেশ জনগণের কাছে একটা বড় বিষয় হস হয়ে উঠবে সেদিন রাজনৈতিক দল গুলি শুধু পরিবেশ পরিবেশ করবে।সেই দিন আনার চেষ্টাই আমাদের করতে হবে।সবুজ শতাব্দী আনার লড়াই জারি রাখতে হবে।”

পরিবেশ বা নদী যদি সুরক্ষিত না থাকে তো কিসের ভোট?
পরিবেশ বা নদী যদি সুরক্ষিত না থাকে তো কিসের ভোট?

এছাড়াও রাজ্যের অনতম নদী ও পরিবেশ কর্মী কল্লোল রায়, তাপস দাস, অনুপ হালদার, মুনমুন কীর্তনীয়া, সঞ্জিত কাষ্ঠ প্রমুখরা বিভিন্ন সময়েই নদী ও পরিবেশের রক্ষায় কাজ করতে গিয়ে তাদের হতাশাই ব্যক্ত করেছেন। কিছুদিন আগে সবুজ মঞ্চ রাজ্য নদী বাঁচাও কমিটির উদ্যোগে কলকাতার মহাজাতি সদনে একটি গণ কনভেনশনে বলেছিলেন বিশিষ্ট নদী ও পরিবেশ কর্মী প্রদীপ চট্টপাধ্যায় বলেছিলেন ” মৎস্যজীবীরা জল অপচয় না করে জলের ব্যবহার করে।জাল যার জল তার নীতি চাই”। কিন্ত কি অদ্ভূত মৎস্যজীবীদের বিষয় টিও গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছেনা, হয়নি।

সবুজ মঞ্চের সম্পাদক নব দত্ত বলেন- ‘ বাংলা কে নদীমাতৃক বলা হয়। অথচ নদীর দায়িত্ব নির্দিষ্ট করে কারও নেই, আমরা পৃথক নদীমন্ত্রক চাই’।

ভারতবর্ষের সাত দফা লোকসভা ভোট এগিয়ে আসছে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বালুরঘাট লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী অর্পিতা ঘোষ বলেছেন ” রাজ্যের মূখ্যমন্ত্রী বিভিন্ন সভায় এবং আমি নিজে সংসদে নদীর প্রসঙ্গ তুলেছি”।

আর বিজেপি প্রার্থী সুকান্ত মজুমদার বলেছেন- ‘কেন্দ্রীয় সরকার নদীকে গুরুত্ব দিয়েছে”।

সে তো জিজ্ঞেস করার পর বলেছেন।কিন্ত স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে? নিজেদের নির্বাচনী প্রচারে? তেমনটা এখনও শোনা যায়নি। তাহলে কি নদী ও পরিবেশ এই ভয়ংকরতম সময়েও ফোর্থ সাবজেক্ট হয়েই থাকবে? মূল ধারায় আসবে না? এটাই এখন কোটি টাকার প্রশ্ন। তবে এটা নিশ্চিত যে, যেভাবে নদী ও পরিবেশ কর্মীরা তাদের সর্বস্ব দিয়ে নদী ও পরিবেশ রক্ষা করতে প্রাণপাত করছে তাতে রাজনৈতিক দলগুলি আর বেশীদিন এই অতীব গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারবে না

আরো পড়তে পারেন….

ফুলেশ্বরীর আত্মকথা

মহানন্দা মহা আনন্দে একদমই নেই : মহানন্দা এখন নিরানন্দা

“নদী হারিয়ে যাচ্ছে বলে এ দেশে নজরুল, সুকান্ত ও জসীম উদ্‌দীনের মতো কবি আর জন্মাবে না”

সংশ্লিষ্ট বিষয়