আফজল হোসেন আজম এর কবিতা “নদীকথা”

পূবেতে বন্দনা করি জগৎ বন্ধু ভানুশ্বর

নিধিরবি উঠে তুমি বিশ্ব করো যে পসর।

পশ্চিমে বন্দনা করি মক্কা ও মদিনায়

দয়াল নবী শুয়ে আছে নয় কারো যে অজানা।

দক্ষিনে বন্দনা করি বঙ্গোপ সাগর

যে সাগরে বাইয়া খাইতো চান্দু সওদাগর।

উত্তরে বন্দনা করি হিমালয় পর্বত

যেথায় ঋষি মনি ঠাঁকুর সদায় থাকতো ব্রত।

এইবারে নদ- নদীর কথা যাবো তোলে

তারা সবি মানবস্বত্তা এ ভূ- মন্ডলে।

সৃষ্টিকর্তার অপার লীলা নদ ও নদী

বসুন্ধরা রুগ্ন হবে তাদের হারাই যদি।

হিমালয়ের হিমবাহে আসিলো মা গংঙ্গা

মায়েরকোলে শুয়ে আমরা আজ চতুরঙ্গা।

পদ্মভূষণ করলো মোদের কণ্যা তারি যমুনা

মেঘনারকূলে মোর বসতি তাহারি নমুনা।

নদীর ছবি
আফজল হোসেন আজম এর কবিতা “নদীকথা”

ব্রক্ষ্রপুত্র ঠাঁকুরপুত্র চলে বলে সেরা গোত্র

বুড়িগঙ্গা বুড়ি হলেও ঢাকানগর কাঁধে বাঁধা জন্মসার সূত্র।

গড়াই নদীর উজান গড়ান এখনো যে চলে

গৌরি নদীর কূলে এখনো কাশফুল দোলে।

কংস মামার ধব্বংস আনলো তাদের নাতিপুতি

রূপসা খোকসার কপালেতে কেন এই দূর্গতি।

আত্রাই এ সাঁতরায় না দৃষ্ট ছেলের দল

সাঙ্গু বেডার পাঙ্গু নাই টলটল নাইরে জল।

হাড়িভাঙ্গার হৃদয় পাঁজর ভাংলো ভূমিদস্যুর দলে

মহানন্দার আনন্দ কাইড়া নিলো কমিন আর বৈতালে।

নরসুন্দার আগাল মাথায় এলোকেশে ভরা

বেতাই সুতি শ্বাসকষ্টে জিন্দা থাইক্যা মরা।

আছেন যত দেশবাসী শোনেন দিয়া মন

নদী বাঁচলে সবে বাঁচবেন না বাঁচলে মরণ।

নদী ও নারীর থাকিলে যৌবন

তবেই না কালাচান্দের মুখ হয় রে দর্শন।

তিতাস নদীর পানির মাঝে মাছের হয় মরণ

তুরাগ বোরাক শীতলক্ষ্যায় বিষাক্ত কার্বন।

ফেনী মনি কালনি এখন আছে বড্ড রেগে

 ঘোড়াউত্রা সুরমার মাঝে বালিচোর দেখ রে।

তিস্তার মাঝে দিলো তারা কাঁটাতারের বেড়া

ওপারেতে সোনার ফসল এপারেতে চড়ে শুধু ভেড়া।

বার্মা আর বাংলাদেশের মধ্যে বহে নাফ

চোরাকারবার চলে হেথায় বাংলার অভিশাপ।

চন্দ্রাবতীর ঘুম দিলো নদী ফুলেশ্বরী

এইখানেতা বাড়ি আমার ছটফটাইয়া মরি।

কপোতাক্ষ শুকনো এখন মাইকেল নাই বেঁচে

সনেটের পদ্য শোনতে যাইবো কার কাছে।

কর্ণফুলীর কর্ণরাজা এখনো যে দাতা

তাইতো সরকার ভাবছে তারে বিদুৎ নির্মাতা।

মেঘালয় ধলাই ষাটওলি নদী কুশিয়ারা

নূড়িপাথর নিয়ে নামছে অট্রালিকা হইতেছে যে গড়া।

বিশ্বনদী দেখি যদি সকল দেশের তরে

টেমস্ এ বসে শেক্সপিয়র ইলিয়ড আর ইডিপাস গড়ে।

নীলনদ আমাজানে কতো রত্ন আনে

মিশৌরি মিসিসিপির খবর কয় বাঙ্গালে জানে।

তাইগ্রিস ইউফ্রেতিস রক্তঝরা স্মৃতি

নদীবিনে মোদের জীবন দুখের পদ্যগীতি।

বিষাদময় জীবন এখন মরা নদীর দেশে

সিন্ধুর বিন্ধু বাঁচতে দিলে গাইবো বাউল বেশে।

নদীর দেশের মানুষ মোরা নদীকে বাঁচতে

নদীর বুকে মেরো না আর কাঁচা ধানে কাস্তে।

আপনি আমি সবাই মিলে নদীকে বাঁচাই

নদী হলো হৃদস্পন্দন  নদীর কোন দেশ নাই।

………………………………………………………………………………………………..

আরো পড়তে পারেন…

বিশ্ব মা দিবস: আমরা কি নদীকে মা বলার যোগ্য ?

হালদায় তেল দূষণ, নদী কমিশন নড়ুন-চড়ুন – গওহার নঈম ওয়ারা

 

সংশ্লিষ্ট বিষয়