আমার ছেলেবেলার বড়নদী ।। মু আ লতিফ

বড়নদী

আমি যখন ছোট ছিলাম তখন আমার একটা বড়নদী ছিলো। এখন আমি বড় হয়েছি, এখন সেই নদী ছোট হতে হতে প্রায় মিলিয়ে গেছে। আমি কোনোভাবেই আমার ছেলেবেলার নদীর সাথে একে মিলাতে পারি না। আমার মন ভারাক্রান্ত হয়, আমি বড় কষ্ট পাই। আথচ ছেলেবেলায় এই নদীই ছিলো আমার ভালোবাসা। আমার শৈশব-কৈশর নদীর জল, জলের নিরবধি বয়েচলা, বর্ষায় টই-টম্বুর স্রােতধারার সাথে মিশে ছিলো। শুধু কী তাই- আমার শরীর-মন ও আমার চৈতন্যকে বিকশিত করেছিলো আমার প্রিয় ভালোবাসার এই নদী। আমার জন্মভিটা থেকে তিন’শ গজ দূরেই ছিলো সেই নদী। সেই নদীতে সাঁতার কাটা, বন্ধুদের নিয়ে…

নদী নিয়ে কিছু কথা

কথা

আমি নদী ভালোবাসি। নদী নিয়ে যারা কাজ করেন তাদেরকে আমি সম্মান করি। কারণ, সত্যিকার অর্থেই এটি একটি মহৎ কাজ। নদী হলো ধরণীর প্রাণ প্রবাহ। মানুষের দেহের শিরায়-উপশিরায় রক্ত কণিকা যেমনটি প্রবাহিত হয়ে থাকে তেমনি নদীও ধরণীর দেহে সজিবতা বইয়ে দেয়। নদী বেঁচে থাকলেই মাটি সতেজ থাকে। তা না হলে মাটি শুস্ক ও মরুভূমিতে পরিণত হয়। নদীর প্রতি ভালোবাসা থেকেই যারা নদীর নাব্যতা চায়, সুরক্ষার জন্য কাজ করেন তাদের প্রতি আমার ভালোবাসা স্বাভাবিকভাবেই উৎসারিত হয়। আমি নদীকে ভালোবাসি। এই ভালোবাসা কেন জানি স্বতস্ফুর্ত এবং কোনো স্বার্থের সংকীর্ণতার কাছে দায়বদ্ধ নয়। এই…

‘ফিরে চলো নদীর টানে’

নদী ভাবনা

‘নদী একটি জীবন্ত সত্তা, এর আইনি অধিকার নিশ্চিত করুন’ এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ২২ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে পালিত হবে বিশ্ব নদী দিবস-২০১৯। এ উপলক্ষে রিভার বাংলা’র আয়োজন ‘নদী দিবসে নদী ভাবনা’। আজ প্রকাশ করা হল এই সিরিজের প্রথম লেখা- ‘ফিরে চলো নদীর টানে’ -লিখেছেন  আঞ্চলিক ইতিহাস-ঐতিহ্যসন্ধানী লেখক ও সাংবাদিক, মু আ লতিফ  ।- সম্পাদক নদীর সঙ্গে মানুষের রয়েছে নিবির সম্পর্ক। নদীকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে ভূ-প্রকৃতি,জনপদ, যাতায়াত, কাব্য-সঙ্গীত-সংস্কৃতি, শিল্পকলা এবং সভ্যতা। মানুষের মন-মনন-মনীষা নির্মাণেও নদীর রয়েছে ব্যাপক ভূমিকা। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এটা আরো খাঁটি কারণ এটি যে নদীমাতৃক দেশ। এর দেহ বিস্তৃত, পল্লবিত…

কিশোরগঞ্জের প্রাণ প্রবাহ নরসুন্দাকে বাঁচাতে আসুন সবাই ঐকবদ্ধ হই

কিশোরগঞ্জের

মানুষের মত নদীরও বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে। নদীর কেউ কোনো ক্ষতি করতে পারে না, ভরাট করতে পারে না, দখল করার কোনো এখতিয়ার কারো নেই। নদী তার স্বাভাবিক গতিতে প্রবাহিত হবে। আদালতও এর স্বীকৃতি দিয়েছেন। এটাই স্বাভাবিক এবং প্রকৃতির নিয়ম। কিন্তু মানুষ এর ব্যত্যয় ঘটাচ্ছে, নদীর সঙ্গে অন্যায় অচরণ করা হচ্ছে, যা মানুষের আচরণের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। নদীমাতৃক বাংলাদেশে নদীকে হত্যা করার একটা মহোৎসব চলছে। এমন একটা অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে যে এখন বাংলার সেই চেনারূপ, কলকল রবে নিরবধি বয়ে যাওয়ার রূপময়তা প্রায় নিঃশেষ। নদী নেই সর্বত্র নদীর লাশ বিদ্যমান। এ এক…

নরসুন্দার নাব্যতা ফিরে পাওয়ার এখনই সময়

নরসুন্দার নাব্যতা ফিরে পাওয়ার এখনই সময়

আমার ছেলেবেলার দেখা নরসুন্দা এখন আর দেখি না। এখন যা দেখি একে নদী বলা যায় না। আমার দেখা ৬০-৭০ দশকের নরসুন্দার অস্বিস্থ এখন বিলুপ্ত প্রায়। অথচ এখনও আমরা ওই নদী নিয়ে স্বপ্ন দেখি। কেন দেখি তার উত্তর আমারও জানা নেই। জীবন জীবনের উৎস খুঁজে, সে তার শৈশব, কৈশর আর যৌবনের জয়গান করতে ভালোবাসে। সেই স্বার্ণালি জীবনটারে মানুষ আবার ফিরে পেতে চায়। তাই তো মানুষ বারবার অতীতের কাছে ফিরে যায়। আমারও অতীত ছিলো, ছিলো কৈশর ও যৌবনের উচ্ছ্বাস। আমি নরসুন্দা পাড়ের মানুষ তাই আমার কৈশর আর যৌবনের সঙ্গে মিশে আছে খরস্রােতা…

আমার সখা নরসুন্দা : মু আ লতিফ (তৃতীয় পর্ব)

আমার সখা নরসুন্দা : মু আ লতিফ (তৃতীয় পর্ব)

নরসুন্দা নদীর উৎপত্তিস্থল হচ্ছে হোসেনপুরে। নরসুন্দা সেই হোসেনপুরে ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে উৎপত্তি হয়ে পূর্ব দিকে বয়ে কিশোরগঞ্জের বুক চিরে জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে মাকরসার জালের মত ছড়িয়ে গেছে। এটি কিশোরগঞ্জ শহরের বুকচিরে প্রবাহিত হয়ে পূবে করিমগঞ্জ হয়ে হাওরের ধনুতে মিশেছে। অ্যদিকে কিশোরগঞ্জ শহর হয়ে যশোদল হয়ে ও ভৈরবের দিকে চলে গেছে। এছাড়াও তাড়াইল, কটিয়াদিসহ জেলার অন্যান্য অঞ্চলের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়েছে। বলা যায় নরসুন্দা কিশোরগঞ্জকেই প্রতিনিধিত্ব করে থাকে। তাই নরসুন্দার সঙ্গে এখানকার জনসাধারণের রয়েছে এক প্রবল প্রাণোচ্ছ্বাসের অনুভূতি। নরসুন্দা নদীর নামকরণ নিয়েও এখানকার মানুষের মধ্যে প্রবল আাবেগ কাজ করে। জনৈক নিষ্ঠাবান…

স্মৃতিকথা : আমার সখা নরসুন্দা : মু আ লতিফ (দ্বিতীয় পর্ব)

স্মৃতিকথা : আমার সখা নরসুন্দা : মু আ লতিফ (দ্বিতীয় পর্ব)

কিশোরগঞ্জ শহর থেকে আনুমানিক ১৫ কিলোমিটার দূরেই ব্রহ্মপুত্র নদ। ছেলেবেলায় নরসুন্দায় সাঁতার কাটতে কাটতেই একবার মনে হলো যাই না একবার ব্রহ্মপুত্র নদ দেখে আসি। সাইকেলে চড়ে ক’জন বন্ধু চলে গেলাম হোসেনপুর। ব্রহ্মপুত্র স্বচক্ষে দেখলাম। প্রমত্ত ব্রহ্মপুত্রের বিশালতা দেখে অবাক হলাম। এর বিশালতা, ঢেওয়ের গর্জন এবং বড় বড় নৌকা দেখে চমকিত হয়েছিলাম। ছেলেবেলায় এটা ছিল আমাদের জন্য এক কৌতুহলি অভিযান ও নতুন অভিজ্ঞতা। সেদিন ব্রহ্মপুত্রের বিশালতা দেখে মনটাও যেন একলাফে বড় ও বিশাল হয়ে উঠেছিল। এখন পরিণত বয়সে এসেও সেই নদের স্বপ্ন দেখি। এখনো কল্পনা করি নরসুন্দা নদীপথে আমরা আবার হোসেনপুরে…

আমার সখা নরসুন্দা : মু আ লতিফ

আমার সখা নরসুন্দা

।। মু আ লতিফ ।। [প্রথম পর্ব] নরসুন্দা নদীর সঙ্গে আমার জন্মাবধি ভালোবাসা। আমার শৈশব-কৈশোর নরসুন্দার জল, জলের স্রােতধারা ও এর বালুচরের সঙ্গে মিশে আছে। নদীর নিরবধি বয়ে চলা, বর্ষায় টই-টম্বুর খরস্রােতা নরসুন্দার ছবি এখনো আমাকে উন্মনা করে। আমার শরীর-মন ও আমার চৈতন্যকে বিকশিত করেছে- আমার সখা নরসুন্দা। ছেলেবেলায় যে নরসুন্দাকে দেখেছি এখনো সেই স্মৃতিই মানসপটে আঁকা রয়েছে। খরস্রােতা যৌবনা নরসুন্দার কল্লোলধ্বনি এখনো কানে বাজে। ওই সময়ের নরসুন্দার শোভার কথা বললে এখন কেউ বিশ্বাস করবে না, জানি। কিন্তু ছেলেবেলার রোমাঞ্চকর স্মৃতি তো ভুলার নয়। কেউ বিশ্বাস করুক আর নাই করুক, সুখময়…