রাজেশ ধর এর গল্প-  ‘জলমুক্তি জিন্দাবাদ’

রাজেশ ধর এর গল্প-  ‘জলমুক্তি জিন্দাবাদ’

‘দাদ্দু, জলমুক্তি কী গ!’ চুপ করে থাকে বিষাণ সিং। কাঁধের ছেঁড়া রঙচটা লাল গামছা দিয়ে পিঠটা ঝেড়ে নেয়। মনে হয় দু-চারটে ডেউয়া পিঁপড়ে ঘুরঘুর করছে। এখনো কামড়ায়নি। বড্ড বিষ, জ্বালা করে! ‘হেই দাদ্দু, এই গামছাটো হামাক দিবা কিন্তুক। হামি ইটো লিয়ে শাড়ি বানাইবো।’ একটুখানি হাসে বিষাণ। আবার তাকিয়ে থাকে ‘দামোদরজীর’ দিকে। বর্ষা এসে গেছে, তাও দু’সপ্তাহ। কিন্তু আকাশে কালো মেঘ কই! ‘দামোদরজীর’ বুকে জল নেই। তিন মাইল চওড়া নদীর বুকে আড়াআড়ি হাত তিরিশেক জল। তার মাঝে হাত নয়-দশ গভীর, মানে বুক সমান জল। তবে স্রোত আছে। লোকজনেরা নদীকে জানে। এখানে,…

রাজেশ ধর এর গল্প “শেকল”

শেকল

“এত দেরি করি আসলি, চলে কী করি? একগাদা লোক দাঁড়ায়ে রয়েছে ঘণ্টা ধরি!” “কী করব? খেয়া তো দরকারের জন্যি। কত্ত সমিস্যের লোক আসতি নাগে। সবারে না নি এলি হয়। সক্কলের জন্যি দাঁড়ায়ে থাকতি হয়।” “হ, লগেন মাঝি,.তোমার মাথাডা এক্কেবারে গিইছে। কেডা কখন আসপে তার জন্যি তুমি ঐ পারে দাঁড়ায়ে থাকপা আর এই পারের লোকেরা রোদের তাপে বেগুন পোড়া হবে? তোমারে নে তো আর পারা যায় না!” “তা কী করবা কর! করি নাও… দুডো পারই তো এই ফুডিডার নাকি? ফুডিনদীর একপারের লোকের সুক দেখতে গি, অন্য পারের লোকে কষ্ট পাবে, তা…

নদী একটাই ।। রাজেশ ধর

রাজেশ

‘নদী’…কলকল, কলকল… ঢেউতোলা এই শব্দটা প্রথম কবে শুনেছিলাম ? কবে প্রথম ‘নদী’র ডাকে  বুকের রক্ত ছলকে উঠেছিল? প্রথমবার কবে জেনেছিলাম নদী আসলে জলের ধারা…সে জল শীতল, মিষ্টি আবার কখনও নোনা পানি!  সেদিন কি জেগেছিলাম? নাকি ছিলাম ঘুমিয়ে…স্বপ্নের মধ্যে? দুই কুল…দুপারকে বেঁধে রাখতে রাখতে এক নিমেষেই নদী… সব গিলে খেয়ে নিতে পারে!  নির্বিচারে মুছে যেতে পারে– ডাঙা, ফসল, গাছপালা,… সাতমহলা কীর্তির অহংকার। নদী নাকি সে নিয়তি? তারই বা জ্ঞান হল কবে? জানি না…বলতে পারব না। দুই.  জন্ম থেকে প্রায় বছর তিরিশ পর্যন্ত এক বিশাল ঘিঞ্জি শহরে বাস আমার। সে শহরের পশ্চিম…

রাজেশ ধর এর গল্প- “চুপিকথা”

রাজেশ ধর ।। এখানে একটা নদী আছে, নাম চুপি।  চুপিতে এখনো জোয়ারভাটা খেলে। জোয়ারভাটা তো নদীতে খেলবেই। কিন্তু মল্লিকদাদু…আমাকে দেখলেই ডাকে। তারপর বলে, “ কীরে মধুর নাতি, দাদু কেমন আছে? নদীতে যেতে পারে এখনো মাছটাছ ধরতে?  ছোটবেলায় নদীতে, বিলে  ডোঙা নিয়ে একসঙ্গে কত মাছ ধরেছি…” মল্লিকদাদু নদীর দিকে তাকিয়ে থাকে, আমিও তাকাই চুপির দিকে। হয়তো সকালের মেঘলা আকাশের রঙে চুপিকে তখন সবজে দেখাচ্ছে, ভাটির টানে  কচুরিপানাগুলো ফিরে যাচ্ছে তাদের পুরোনো জায়গায় যেখান থেকে আবার জোয়ারের টানে তারা ফিরে আসবে। নয়তো বিকেলের লাল আলো নিভে যাওয়া ছাই ছাই আকাশ আর একটু হলেই  নেমে আসবে চুপির বুকে। মল্লিকদাদু সকাল-বিকেল নদীর ঘাটে আসে। কলকাতার কোন বড় কলেজে নাকি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূগোল পড়াত মল্লিকদাদু। আমাকে প্রায়ই…