নদীবিজ্ঞানে একথা বলা হয় যে নদীব্যবস্থাপনা করতে গেলে খাঁড়ির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।খাঁড়ি ভালো থাকলে নদী ভালো থাকবে। কিন্ত দক্ষিন দিনাজপুরের ক্ষেত্রে আমরা অনেক সময়ই লক্ষ্য করছি দু একটি ব্যতিক্রম ছাড়া খাঁড়ি ব্যবস্থাপনাতে খুব বেশী কাজ এগোয়নি। এ প্রসঙ্গে প্রথমেই কাশিয়া খাঁড়ির নাম উল্লেখ করতে চাই।
দক্ষিণ দিনাজপুরের দুটি প্রধান নদী আত্রেয়ী ও পুনর্ভবা। দুটি নদীকে সংযুক্ত করতো কাশিয়া খাঁড়ি। কিন্ত এই খাঁড়ি টিকে কেন বারবার অধিবাসীদের নিজেদের খনন করার উদ্যোগ নিতে হচ্ছে? সম্প্রতি গতবছরের মতো এবারও রাধানগর, গোপিনগর, ভাতশালা, বাদমুল্লুক কিসমত, গঙ্গাসাগর গ্রামের অধিবাসীরা নিজেরাই খাঁড়িকে খনন করলো। কিন্ত কেন? কারণ আত্রেয়ী নদী থেকে আর জল আসছে না খালে। আর তার ফলেই কৃষিকাজ বন্ধ। দশটি সরকারী সেচ প্রকল্প বন্ধ হয়েছে প্রায়। অথচ পন্চায়েত কিংবা জেলাপরিষদকে বারবার জানিয়েও কাজ হয়নি। তাই কোদাল নিয়ে এবং জে সি বি ভাড়া নিয়ে নিজেরাই প্রায় পাঁচশো মানুষ নেমে পড়লো খাঁড়ি খননে যাতে নদী থেকে জল আসে।
এটা একটা উদাহরণ। আমরা রাজস্থানে দেখি এমন। যেখানে জলপুরুষ রাজেন্দ্র সিং-এর নেতৃত্বে সরকারের সাহায্য ছাড়াই জল নিয়ে আসার প্রক্রিয়া বেশ সফল।সেটা একরকম।কিন্ত যেখানে প্রশাসন কাশিয়া খাঁড়ি খননের একটা মাস্টার প্ল্যান নিয়েছে সেখানে এই অবস্থা কেন হবে? কেন উদ্যোগ নেবেনা স্থানীয় পঞ্চায়েত ও জেলা পরিষদ। পনের টি গ্রামের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত এই খাঁড়ি ছিল একসময় কৃষি ও যোগাযোগের মাধ্যম। বাস্তুতান্ত্রিক ভারসাম্য ও জীববৈচিত্রের আধার। জীবন ও জীবিকার নির্ভরযোগ্য আশ্রয়। সেই খাঁড়ির প্রতি এত অবহেলা কেন?
স্থানীয় কৃষক উত্তম দাস, পরিতোষ মহন্ত, বাদল সিংহরা জানান, কারো উপর ভরসা রাখতে না পেরে নিজেরাই গতবারের মতো নদী থেকে জল আনার চেষ্টা করেছি।কিন্ত এভাবে কতদিন? আমরা প্রশাসনের সহযোগিতা চাই। আমরা শুনেছি যে কাশিয়া খাঁড়িকে কেন্দ্র করে খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্ত যেখানে আত্রেয়ী নদীর সাথে সংযুক্ত হয়েছে কাশিয়া খাঁড়ি সেখানেই এই উদ্যোগ কেন নেওয়া হচ্ছেনা?
নদী ও খাঁড়িকে রক্ষা করতে সাধারণ মানুষের নিজের তাগিদে এই উদ্যোগ দৃষ্টান্তযোগ্য। এমনটা দেখা যায়না। কিন্ত প্রশ্ন হচ্ছে এভাবে কতদিন?