বিশ্বজুড়ে উষ্ণায়নের করাল গ্রাসে পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই বিষয়ে এখন আর কারো কোন সন্দেহ নেই। তুন্দ্রা জলবায়ুর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বাস্তুতন্ত্র হোক বা ক্রান্তীয়। হ্যাবিট্যাট লসের ঘটনাও ঘটছে পৃথিবী জুড়ে। নদীর জলেও তার প্রভাব পড়েছে। সমস্যাতে পড়ছে নদীর জলে থাকা মাছেরা। আত্রেয়ী নদীতে আগের তুলনায় মাছের সংখ্যা কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ হিসাবে উঠে এল এমনটাই। আত্রেয়ী নদী দক্ষিণ দিনাজপুরের প্রধান নদী। তার মাছের সংখ্যা ও বৈচিত্র্য দুটোই কমছে। নদী পাড়ের মানুষ ও মৎস্যজীবীদের সচেতনতা নিয়ে, বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে সরব পরিবেশ প্রেমী সংগঠন দিশারী সংকল্প। বিভিন্ন ভাবেই তারা মাছ কমে যাওয়ার ও মৎস্যজীবীদের সঙ্কটের বিষয়টা তুলে ধরেছে। কিন্ত কেন কমছে মাছ? অন্য কারণ গুলোর সাথে জলবায়ু পরিবর্তনেরও কি কারণ আছে? আছে।
এমন টাই জানিয়েছিলেন মৎস্য বিশেষজ্ঞ বিশ্বজিত গোস্বামী। বিশ্বজিত বাবু, দীর্ঘদিন ধরে মাছ নিয়ে গবেষণা করছেন। যুক্ত আছেন মাঝিয়ান কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রে। তার কথায়- এখন জলের উষ্ণতা আগের তুলনায় অনেক বেশী হয়েছে। এতদিন যা স্বাভাবিক ছিল সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। এতে মাছেদের ব্রিডিং গ্রাউন্ডের অবস্থার পরিবর্তন হবে। ফলে মাছের উৎপাদন কমতে পারে। মাছেদের রোগাক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা বাড়বে।
প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য, কিছুদিন আগে আত্রেয়ী নদীতে পরপর দুবার মাছ মরে ভেসে উঠেছে। আগে আত্রেয়ীতে বাংলাদেশ থেকে উজানে প্রচুর মাছ আসত। রাইখরের জোয়ারও দেখেছে এখানকার মানুষ। এখন সেসব অতীত। আগে সুবর্ণখলকি,বাঘাড়, ভেউস, কাচকি, মহাশোল, আংরোস, মুরকুশ এইসব মাছগুলো প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যেত। কিছুই আর পাওয়া যায় না এখন। ফলে নদী সংলগ্ন প্রায় পাঁচ হাজার মৎস্যজীবী পরিবার সংকটে। তারা পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছেন। তৈরি হচ্ছে অন্যরকম আর্থ- সামাজিক সংকট। এখন এসবের সাথে যুক্ত হয়ে গেল জলবায়ু পরিবর্তনের কথাও। সমগ্র পৃথিবীতেই এখন জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে চর্চা চলছে ভীষণ। তার মোকাবিলায় বিভিন্ন পদক্ষেপও নেওয়া হচ্ছে। নদীর মাছের বৈচিত্র্য ও সংখ্যা কমে যাওয়ার সমস্যার মোকাবিলা কিভাবে হবে তা নিয়েই দিনরাত ভেবে চলেছেন নদী ও পরিবেশ কর্মীরা।