নদীটা যে ডাস্টবিন নয় কবে বুঝবে মানুষ?

মানুষ

বালুরঘাট, কলকাতা [ভারত] : নদীটা যে ডাস্টবিন নয় কবে বুঝবে মানুষ? এই কথাটা আমার মাঝে মাঝেই মনে হয় যে একটা তথ্যচিত্র তৈরি করি ” River, The Great Dustbin”। তার কাজ অবশ্য শুরু করেছি। যাইহোক এটা আবার বেশী করে মনে হল যখন বাঙালির অন্যতম উৎসব দুর্গাপূজার পর নদীবক্ষ পরিষ্কারের সময় এলো।

বিসর্জনের পর প্রতিমার কাঠামো যখন পরিষ্কার হওয়ার সময় হল তখন কোথাও দেখা গেল তৎপরতা, কোথাও উদাসীনতা। একথা বলতেই পারি যে, বালুরঘাটে আমরা বিসর্জনের পর আত্রেয়ী নদীর সদরঘাটে কাঠামো তোলায় সহযোগিতা করি। নিজেরাও হাত লাগাই যতটা পারি। কেননা প্রতিমার গায়ে যে রং থাকে অনেক সময়েই তাতে থাকে লেড, ক্রোমিয়াম, হেক্সাভ্যালেন্ট ক্রোমিয়াম, ল্যাকার। তা যখন জলে মেশে তা থেকে জলদূষণ হয়।

তাই তৎপর থাকি। আত্রেয়ী সদরঘাটের পাশে যে অধিবাসীরা থাকে তারাই মূখ্য ভূমিকা গ্রহণ করে। ক্লাব, পারিবারিক পূজা মিলিয়ে প্রায় একশোটিরও বেশী প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়েছে এবার আত্রেয়ী সদরঘাটে। এত ভারি কাঠামো তুলতে যে পরিমাণ শক্তির লাগে তা কল্পনা করা যায় না। কিন্তু নদীপাড়ের সুরজরা দমবার পাত্র নয়। আমাদের যৎসামান্য সহযোগিতা জানিনা ওদের কতটুকু কাজে লাগলো, তবে আমাদের ভাল লেগেছে।

মনোজিৎ, কিঙ্কর, নীলাদ্রি, নেপালরাও হাত লাগালো। আমি কখনোই অন্যকে নির্দেশ দিয়ে নিজে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে পারিনা। তাই আমিও হাত লাগাই। বেশ কয়েক বছর থেকেই এই কাজটা করি। একবার তো পুরসভার কাছ থেকে সঠিক মজুরি না পেয়ে কেউ কাঠামো তুলছিলইনা। এদিকে জলদূষণের পরিমাণ বাড়ছে। বাড়ছে মাছেদের ক্ষতির আশঙ্কা। তাই আমরাই নিজেদের পকেটের টাকা দিয়ে এই কাজটা করিয়েছিলাম।

দক্ষিণ দিনাজপুরের আরেক নদী টাঙ্গনেও যাতে জলদূষণ না হয় তার জন্য তৎপর ছিল বুনিয়াদপুর পুরসভা। কিন্তু ভয়াবহ অবস্থা ছিল পুনর্ভবার।উত্তর দিনাজপুরের কুলিক কখন নদীতে এই ক্ষেত্রে কাজ হলেও ব্রীজ থেকে প্রতিমা ফেলতে দেখা গিয়েছে। মালদাতে মহানন্দার মিশন ঘাটে পরিষ্কার হলেও পুরাতন মালদাতে মহানন্দার ঘাটে খুব বাজে অবস্থা। নিজে গিয়ে সেটা দেখেছি। আমার মনে হয় পূজার মিটিং গুলো করার সময়ই প্রশাসন, পুরসভা ক্লাবগুলোর সাথে বিশেষ পরিকল্পনা নেওয়া উচিত। বিসর্জনের চারদিনের মাথায় ঘাট কেমন আছে তা দেখতে গিয়েছিল পরিবেশপ্রেমী সংস্থা দিশারী সংকল্পের সদস্য, সদস্যারা।

কিছু ক্ষেত্রে নদী চেতনা বাড়লেও আমাদের অনেক পথ হাঁটতে হবে। সচরাচর নজর থাকেনা আত্রেয়ীর চকভবানী শ্মশান ঘাটে। সেখানেও কয়েকটি ক্লাব প্রতিমা বিসর্জন দিয়েছিল। যথারীতি পড়ে রয়েছে কাঠামো। প্রতিমার সাজ সরঞ্জাম তো ছিলই তার সাথে ছিল মানুষের ফুর্তির নিদর্শন সরূপ মদ- বিয়ারের বোতল, মাটির হাঁড়ি, ভাঙা কাঁচের টুকরো, পচা পেঁয়াজের বস্তা, মরা হাঁস, গরুর হাড় ন্যাপকিন, বাচ্চাদের ডায়াপার, ডিটারজেন্ট, শ্যাম্পুর স্যাশে, শাড়ি, জামা- প্যান্ট, নাগরিক জীবনের কত কিছু উপকরণ।

আমরা দিশারী সংকল্পের পক্ষ থেকে মনোজিৎ, নীলাদ্রি আর আমি সব তুলে দিয়েছি। প্রশ্ন হচ্ছে এই কাজটা আগে থেকে পরিকল্পনা করে সুন্দর করে করা যেত না? আর সব কিছু ফেলার জায়গা কি নদী? নদীটা কি ডাস্টবিন? সেটা তো নয়।কবে আসবে সেই চেতনা? এই প্রশ্নটা রিভার বাংলার এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে জোরালো ভাবে তুললাম যে নদীটা যে ডাস্টবিন নয় এটা কবে বুঝবে মানুষ?

আরো পড়তে পারেন…

নদী রক্ষার দাবিতে জেগেছে জনতা, জেগেছে রাষ্ট্রনায়ক

ফেনী নদীর পানি চুক্তি : হাইকোর্টে রিট

নদী দখলকারীর তথ্য দিলে পুরস্কৃত করবে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়

সংশ্লিষ্ট বিষয়