অবাক হচ্ছেন!! মনে করছেন পুনর্ভবা এমন করতে পারে? নদীটাই তো জলই থাকেনা।তাহলে? এবার নীচের ছবিটা দেখুন তো! কি মনে হচ্ছে?চোখকে বিশ্বাস করতে পারছেন না? তবুও এটাই সত্যি। সাম্প্রতিক কালে যে নদীটা বারবার আলোচনায় উঠে এসেছে তা হলো পুনর্ভবা। একশো ষাট কিলোমিটার দৈর্ঘ্য, তিন থেকে আট কিলোমিটার প্রস্থ এবং গড়ে প্রায় দুই মিটার গভীরতার এই নদীটি গঙ্গারামপুর, তপন সহ চুয়ান্ন কিলোমিটার প্রবাহিত। মহাভারতে, সন্ধ্যাকর নন্দীর রামচরিতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে উল্লিখিত এই নদীটার বর্তমান অবস্থা খুবই শোচনীয়। বর্ষার দুই মাস ছাড়া যেমন জলই থাকে না এই নদীর।
গত কয়েকদিন ধরে পুনর্ভবার সমীক্ষাতে নিযুক্ত থাকায় নদীটাকে আরো কাছ থেকে চিনতে পারছি। পুনর্ভবার গতিপথে চয়নাবাস, হরিতলা ঘাট, চম্পাতলী, জাহাঙ্গীরপুর, গঙ্গারামপুর, তপন, করদহ ইত্যাদি জায়গায় নদী এইসময় শুকিয়ে কাঠ। সমরু মিঁয়া, লোকমান আলি, কাঞ্চন মিত্ররা জানান পুনর্ভবাতে বর্ষার সময় ছাড়া জল থাকে না। আগে কত মাছ পাওয়া যেত!কত ধরণের জাল ধিয়ে ধরা হতো সেই মাছ।এখন আর কিছুই নেই।হতাশ তারা। সেই নদীতে ভাঙ্গন?
ঠিক তাই। আর সেই ভাঙ্গনে একটি স্কুল আর আস্ত একটি গ্রাম নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে। আর তাতেই মাথায় হাত স্কুলের প্রধান শিক্ষক আর গ্রামবাসীদের। দেবীপুর গ্রামের গলিপদ রায়, ফিলিপ কিস্কুরা জানান- দুহাজার সতের সালের বন্যাতে নদীর ভাঙন এমন অবস্থা নিয়েছিল যে কি বলবো! আর একবার বিধ্বংসী বন্যা হলে বোধহয় পুরো গ্রামটাই চলে যাবে। আমাদের গ্রামের প্রাইমারি স্কুলটি বিপজ্জনক অবস্থাতে আছে।আমরা খুব ভয়ে আছি।
দক্ষিণ দেবীপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ওমপ্রকাশ সেন জানান, অবস্থা সত্যিই ভয়ংকর। বারবার পঞ্চায়েত, প্রশাসনে দরবার করেছি।বারবার বলায় সেচ দপ্তর থেকে বালির বস্তা দিয়ে আপৎকালীন ব্যবস্থা করে দিয়েছে। কিন্ত চিরস্থায়ী কাজ দরকার।কারণ আর একবার বড় বন্যা হলেই স্কুলটা আর থাকবে না।আর স্কুলটা না থাকলে গ্রামটাও থাকবে না।
হতাশ তার গলাতেও। কি বলছেন পঞ্চায়েত প্রধান?
এক নং সুকদেবপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ডলি রায় জানান, পুনর্ভবা নদীর ভাঙ্গনে খুবই শোচনীয় পরিস্থিতি। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদে নিরানব্বই লক্ষ টাকার প্ল্যান জমা দেওয়া আছে। কিন্ত পাশ হয়নি। কবে হবে বুঝতে পারছি না। ইতিমধ্যেই পুনর্ভবা নদীকে বাঁচাতে, তাকে ঘিরে জনমত তৈরি করতে একগুচ্ছ উদ্যোগ নিয়েছে পরিবেশপ্রেমী সংস্থা দিশারী সংকল্প ।দাবী তুলেছে পুনর্ভবা অ্যাকশন প্ল্যানের। পুনর্ভবা একটি আন্ত: সীমান্ত নদী। তার একটি আন্তর্জাতিক নদী সমস্যার দিকও আছে। সেটাও চিহ্নিত করেছে দিশারী সংকল্প।খুব শীঘ্রই তারা পুনর্ভবাকে ঘিরে রাজ্য ও কেন্দ্রিয় সরকারের কাছে দ্বারস্থ হবে।
এদিকে সামনে বর্ষাকাল। আবার যদি সেই ভয়ংকর বন্যা হয়?? চিন্তাতে স্কুল শিক্ষক, গ্রামবাসী সহ সবাই।আমরা কি একটি স্কুল, আস্ত একটি গ্রাম নিশ্চিহ্ন হওয়া ঠেকাতে পারবোনা?