ভারতের দক্ষিণদিনাজপুর থেকে : আচ্ছা বলুন তো যারা জেলে অর্থাৎ মৎস্যজীবী করোনা পরিস্থিতির ফলে তাদের অবস্থা কি? কি আবার? যথা পূর্বং তথা পরং।অর্থাৎ সোজা ভাবে বললে একই। করোনা পরিস্থিতির আগেও যা, পরেও তা। আর মাঝি দের অবস্থা? তাদেরও তো একই।
কেন? সেই কথাতেই আসছি। তবে হ্যাঁ, মৎস্যজীবী বা জেলেদের করোনায় আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা তুলনায় বেশি। সে কথাও বলবো।
খুব সহজ ভাবে বলা যেতে পারে গত এক মাস থেকে করোনা ভাইরাসের ভয়াল দিক আমাদের সামনে এসেছে।এই এক মাসে নদীর অবস্থা কি ভাল হয়েছে? উত্তর হচ্ছে না।বর্ষা মরশুম আসতে এখনও অনেক দেরি।এই সময় নদী বক্ষে স্বাভাবিক ভাবেই জলের পরিমাণ কম থাকে।আর গত পঁচিশ- তিরিশ বছরে নদীতে জলের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য ভাবে কমেছে।জলই যদি না থাকে তাহলে মাছ থাকবে কি করে?
এই প্রসঙ্গে বলা যায় যে, ভারতবর্ষ ও বাংলাদেশের বর্তমানে উল্লেখযোগ্য একটি আন্তঃসীমান্ত নদী।হ্যাঁ, একে অভিন্ন নদী বলা যেতে পারে কেননা নদীপ্রবাহের গায়ে কাঁটাতার কেউ বসাতে পারেনি।সীমান্তের বেড়াজাল দিয়ে আটকানো কারোর সাধ্যি নয়।কিছুদিন আগে শিক্ষার্থীদের দিয়ে একটি নাট্য উপস্থাপনা করেছিলাম তার নাম ‘ আত্রেয়ী’র উপাখ্যান’। সেখানেও আমরা দেখিয়েছিলাম যে নদীর কোন দেশ নাই।তো সেই আত্রেয়ী নদীতে জলের সাথে সাথে এক সময়ে প্রাপ্ত প্রচুর ধরণের মাছও গায়েব হয়ে গেল।
কি সেগুলি? বালিচাটা, বেলে, খয়রা, গাঙ কই, রিঠা, কাউরা কাটা, ঘাড় বেকি বা ছ্যাপ চাটা,পাকোস, কুচা, ভ্যাদা, বাচা,মহাশোল, বাগাড়, পুতুল বৌ, বাম বা বাইম, মুরলি বাচা, পুঁইয়া, গজার, কর্তি, কাকলা, খশল্লা, গলদা চিংড়ি এসব মাছ কোথায় হারিয়ে গেল জলের সাথে সাথে?
তাহলে মাছ যদি না থাকে মৎস্যজীবীদের কি হাল হবে সহজেই অনুমেয়।আর কেমন আছে মাঝিরা? আগে যেমন নৌকা পারাপার হতো নদীতে।কিন্ত জল না থাকার দরুন নৌকা পারাপার বন্ধ হয়ে গিয়েছে।আরও একটা কথা।যোগাযোগ ব্যবস্থা যত উন্নত হয়,ব্রীজ হয়েছে যত দুপাড়ের মানুষের যোগাযোগের জন্য তত ,নৌকায় পারাপারের প্রয়োজনীয়তা কমেছে ততো। যদিও পুরোপুরি লকডাউনকে মান্যতা দিচ্ছেনা মানুষ।তাই একদম অল্প হলেও চোখে পরছে ঘাট পারাপার।তথাপি তুলনায় তারা করোনা ভাইরাসের পরিপ্রেক্ষিতে একটু কম বিপজ্জনক জায়গায় আছে। যদিও এই সময় বলে না মাঝিদের অবস্থা অনেক দিন আগে থেকেই সঙ্কটপূর্ণ।ফলে করোনার জন্য তারা যে আলাদা করে বিপদে পড়বে এমনটা নয়।
কিন্ত করোনার জন্য জেলে বা মৎস্যজীবীদের বিপদ বাড়বে।প্রশ্ন হচ্ছে কি করে? কারণ পেট বড় বালাই।তাই যতই মাছের সংখ্যা কমে যাক নদী থেকে মাছ ধরতে তারা যাবেই।ফলে বাড়ির বাইরে তারা যাবেই।তাই মানুষের সংক্রমনে আসার সম্ভাবনা তাদের বেশি।
আবার যদি পরিবারের প্রয়োজন মিটিয়ে সে মাছ বিক্রেতা দের কাছে সে বিক্রি করে তাহলে আরও বেশি মানুষের সংস্পর্শে আসার সম্ভাবনা তার।ফলে একজন মৎস্যজীবী ও তার পরিবারের করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটার আশঙ্কা বেশি।
এমনই দুজন মৎস্যজীবী খগেন হালদার, শিবনাথ হালদার।তাদের কথায় ‘ নদীতে জল আর মাছ কমে যাওয়ায় যেমন আমরা বিপদে তেমনই করোনা ভাইরাসের জন্যও আমরা আতঙ্কিত।’
কিছুদিন আগে কথা হচ্ছিল মৎস্যজীবী পরিবারের সন্তান ঝন্টু হালদারের সাথে। তার কথায় ‘জেলে ও জেলেদের পরিবার সমস্ত রকম ভাবেই সংকটে’।
করোনার জন্য ভয় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে তাই নদী পাড়ের মৎস্যজীবীদের মধ্যে বেশি।তাই বলাই বাহুল্য সঙ্কটে তারা।
কবে এই করোনা আপদ বিদায় নেবে সেই দিকেই তাকিয়ে মৎস্যজীবী ও মাঝিরা।কেননা সবার আগে তারা মানুষ।আর সমগ্র মানব জাতিই করোনা ভাইরাসের জন্য আক্রান্ত।
আরো পড়তে পারেন….