রিভার বাংলা’র বৈশাখী আয়োজনে লিখেছেন, কলকাতার নদী আন্দোলনের সংগঠক অনুপ হালদার – সম্পাদক
ভারতবর্ষ নদী মাতৃক দেশ। অর্থাৎ এই সভ্যতার জন্মদাত্রী নদী।পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে এই নদীর প্রভাব আরো বেশি ভাবে লক্ষ করাযায়।নদী যেমন এদেশের সমাজ, সভ্যভায়, সংস্কৃতি তে বিরাজমান তেমনই আমাদের মনের মনি কোঠায় নদী চীরকাল ই জায়গা করে নিয়েছে। নদীর সাথে আমাদের সম্পর্ক খুবই গভীর ও নিবিড়।আগেও মানুষ নদী কে ব্যবহার করে এসেছেন নৌকা দিয়ে, সেচ দিয়ে, মাছধরে,কিন্তু বিগত কয়েক দশকে আমাদের পুঁথিগত শিক্ষা আমাদের প্রকৃতির প্রতি সেই শ্রদ্ধার জায়গা কে দুরে সরিয়ে দিয়ে আমাদের ঔদ্ধত্য কে বড় করে তুলেছে প্রকৃতির সাথে তালমিলিয়ে না চলে আমরা বারবার প্রকৃতি কে জয়করার নেশায় মেতে উঠেছি আর সেখানেই যত সমস্যার সুত্রপাত।
গঙ্গোত্রী হিমবাহ থেকে উৎপন্ন হয়ে ফারাক্কা পর্যন্ত গঙ্গা নদীর গতি পথে একেরপর একটি বাঁধ গঙ্গার অবিরল ধারাকে স্তব্ধ করে দিয়েছে গঙ্গোত্রীর মাত্র ৮ % জল ফারাক্কায় আসে গঙ্গার মধ্যগতির উপরিভাগ কে বাঁচিয়ে রেখেছে একটি মাত্র মনুষ্য কতৃক প্রায় ৪৫ কিমি কাটাখাল।ফলে ভাগীরথীর জলপ্রবাহ কমেযাওয়ার সাথেসাথে তার বহুশাখা নদী উপনদীর মৃত্যু হয়েছে।
এমনিই একটি পূর্ব বাহিনী নদী লাবন্যমতী বা নোয়াই বর্তমানে এটি নোয়াই খাল। উৎস উত্তর ২৪পরগনার ব্যরাকপুরে ভাগীরথীর পূর্বপাড়ে অবস্থিত ভাগীরথী নদীর জলেই পুষ্ট প্রায় আনুমানিক ৩লক্ষবিঘার একটি বিল (বরতির বিল) থেকে। মোহনা হাড়োয়া গাঙ উত্তর২৪পরগনার মধ্যমগ্ৰাম আর নবব্যরাকপুর জনপদের মধ্য দিয়ে বিস্তৃত নোয়াই খাল এখন একটি আঞ্চলিক ড্রেন। অথচ একসময় এটিই একটি চঞ্চলা নদী ছিল।একদা পর্তুগিজ ইছাপুর আরখড়দহ খালপথে পাড়ি জমাত এবং খালপথেই ঢুকেপড়ত লাবন্যমতী তে এরপর হাড়োয়াগাঙ, বিদ্যাধরী, রায়মঙ্গল পেরিয়ে চলে যেত পূর্ববঙ্গে।
এই নদীকে ঘিরেই বসবাস করেন প্রায় সাড়ে ৫লক্ষাধিক মানুষ কিছু দিন পূর্বেও প্রচুর মৎস্যজীবী ছিলেন এই নদীর পাড়ে।বর্তমানে এটি দখল হতে হতে প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে।এছাড়াও পৈরবর্জ্য, কারখানার বর্জ্য, হাসপাতালের বর্জ্য, কোথাও আবার নদীর মাঝে বাঁশ ও কাঠের বাক্স বানিয়ে তাতে গবাদি পশু পচিয়ে তা দিয়ে ব্যবসা করাহয়।এছাড়াও রয়েছে অসংখ্য গেঞ্জিওকাপড় রংএর কারখানার জল এসে মিসে এটিকে কার্যত একটি অভিশপ্ত করেতুলেছে। নদীটি বর্তমানে ৬টি পৌরসভা ও ১৫টি পঞ্চায়েতের জলনিকাশির একমাত্র পথ।আবর্জনায় যার পথ অবরুদ্ধ।ফলে আল্পবৃষ্টি তেই মধ্যমগ্ৰাম,দক্ষিণ দমদম, সোদপুর, নবব্যরাকপুর, রাজারহাট জলজমে যাচ্ছে।এছাড়াও বদ্ধজলে বাড়ছে মশামাছির উপদ্রব।অন্যদিকে বাড়ছে ভূগর্ভস্থ জলের সংকট।আর্সেনিক, নাইট্রেট, এরমত বিষ মিশছে পানীয় জলে দেখাদিচ্ছে মারনরোগ।নোয়াই এর ৮/৯টি শাখাও উপনদী গুলিকে (খড়দহ খাল সিসি১, কেসি৪,এল এল১, এল১,বানিকন্ঠ,সূতীখাল,ফতেশা ) খুঁজতে আজ ইতিহাসের পাতা ওল্টাতে হবে।
ভাবতেই অবাক লাগে যে নদীই একদিন সভ্যতার জন্মদিয়েছিল আজ সেই সভ্যতায় নদীর মৃত্যু কে তরান্বিত করছে। নদী কে আমাদের দেশে মাএর সাথে তুলনা করাহয়।আগেওমানুষ নদীকে ব্যবহার করতেন নদীর নিয়ম মেনে।তাকে রক্ষাও করতে জানতেন।বন্যা শুধুমাত্র অভিশাপ ই ছিল না।তখন বন্যা ছিল আর্শীবাদ।
উত্তর বিহারের মানুষেরা কোশি নদী কে নিয়ন্ত্রণ জানাতেন বছরের একটি নির্দিষ্ট সময় নদী যেন তাদের কাছে আসে। বন্যা একদিকে যেমন পলিমাটি দিয়ে যাবে, পুকুর ভরামাছ দেবে, আর সারাবছরের জন্যনিচু জমি, বিল, বাঁওড়, জলাভূমি তে জলের সঞ্চয় করে রেখে দেবে যা বিগত দিনে ওইসব মানুষ গুলির বাঁচার রসদ।এখন আমরা আর নিচু জমি রাখিনি, খালগুলো দখল হয়েগেছে সুতরাং ওই উৎবৃত্ত জল রাখার আর জায়গা নেই।তার ওপর আস্বাভাবিক হারে মাটির নিচের জল তুলে নেওয়া।এই দুইই প্রাকৃতিক ভারসাম্য কে চরমভাবে বিঘ্নিত করছে।
আরো পড়তে পারেন….
ভালো থেকো নদী আমার আত্রেয়ী
নববর্ষের প্রত্যাশা : ভালো থাকবে আমার নদী সুতি
নদী এখন ভূগোলের নয় ইতিহাসের বিষয়
কলকাতা সবুজমঞ্চের পশ্চিমবঙ্গের নদী বাঁচাও কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক। যুক্ত আছেন বিজ্ঞান দরবার নামের একটি সংগঠনের সাথে। সংগঠনটি ১৯৯০ সাল থেকেই নদীও ভূগর্ভস্থ জল নিয়ে কাজ করে। এছাড়া তিনি নদীয়া, হুগলী উত্তর ২৪পরগনা, ও দক্ষিণ ২৪পরগনার জেলার হারিয়ে যাওয়া নদী নিয়ে (vedio & stil photography documentation) কাজ করছেন।