সম্প্রতি বাংলাদেশের শান্ত সমাহিত সমুদ্রসৈকত কুয়াকাটাতে অনুষ্ঠিত হলো চতুর্থ ইন্টারন্যাশনাল ওয়াটার কনফারেন্স। যার পাশেই রয়েছে পটুয়াখালি পাখিমারা বাজার। এখানেই রয়েছে এশিয়ার একমাত্র ওয়াটার মিউজিয়াম। সে এক অন্য রকম ভাবনা। জলকে কেন্দ্র করেই যে একটা মিউজিয়াম গড়ে তোলা যায় তা দেখে বিস্মিত হতে হয়। সে নিয়ে লিখবো অন্য একদিন। ফিরে আসি আন্তর্জাতিক জল সম্মেলনের কথায়। ভারতবর্ষের একমাত্র প্রতিনিধি হিসাবে উপস্থিত থেকে আমাদের প্রাণের আত্রেয়ী নদীকে আরো একবার নতুনভাবে উপস্থাপিত করলাম।
নতুন বিষয়টি কি? আসলে অ্যাকশন এইড আয়োজিত এই জল সম্মেলনের বিষয়বস্তু ছিল “রিভার-এ লিভিং বিয়িং”। নদী যে জীবন্ত সত্ত্বা তাকেই কেন্দ্রে রেখে আবর্তিত হয়েছে নদী, জল ও পরিবেশ সম্পর্কিত বিভিন্ন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ইস্যু। বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিলো ট্রান্সবাউন্ডারী রিভার বা আন্তঃসীমান্ত নদী, যা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। আপস্ট্রিম ও ডাউনস্ট্রিমে দুটো দেশ থাকলে নদী ব্যবস্থাপনায় একটা জটিলতা তৈরি হয়। ভারতবর্ষ- বাংলাদেশের চুয়ান্নটি নদী এই দুইদেশের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত। তার মধ্যে ভারতবর্ষের দক্ষিণ দিনাজপুরের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত এই জেলার প্রধান নদী আত্রেয়ীও আছে। বাংলাদেশের অংশে যার নাম আত্রাই। আর এই নদীকে কেন্দ্র করেই দুই দেশের সাধারণ মানুষ যারা নদীর সুরক্ষার কথা ভাবেন তারা যৌথ নদী ব্যবস্থাপনার কথা ভাবছেন।নদীকে সুরক্ষা দিতে চেয়ে এটা কি দৃষ্টান্ত নয়? যেখানে কাঁটাতার কিংবা সীমান্ত কোন বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছেনা। একটা বৃহত্তর দৃষ্টিকোন থেকে নদীর জন্য ভাবছে মানুষ। এটা কি উদাহরণযোগ্য নয়?
ইতিমধ্যেই যেখানে বালুরঘাটে এবং বাংলাদেশে মিটিং হয়েছে, নদীবক্ষ পর্যবেক্ষন হয়েছে এবং একসাথে কাজ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। দক্ষিন এশিয়ার নদী সংরক্ষণ কর্মসূচীর এমন নমুনা আশা জাগায় বৈকি! এ নিয়েই ছিলো আমার উপস্থাপনা।”পিপলস্ মুভমেন্ট টু সেভ আত্রেয়ী রিভার”এই ছিল আমার বলার বিষয়।
যেখানে বলবার চেষ্টা করেছি আত্রেয়ী নদীর স্থানীয় সমস্যাগুলির সাথে সাথে কিভাবে এটি আত্রেয়ী বাঁচাও আন্দোলন হয়ে উঠলো, কিভাবে তাতে যুক্ত হলো দুই দেশের নদী পাড়ের মানুষ। লক্ষ্য করলাম আত্রেয়ী কিংবা আত্রাই নিয়ে আগ্রহ বাড়ছে। আমার ধারণা অচিরেই এটি আন্ত:সীমান্ত নদী সমস্যার আলোচনায় তিস্তার মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হয়ে উঠবে যেখানে এই দিকটিও খেয়াল করা হবে যে একটি নদীকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মানুষ মিলিত হচ্ছে, এক হচ্ছে।
এই প্রসঙ্গে গভীরভাবেই কথা হচ্ছিল বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান নদী সুরক্ষা সংগঠন রিভারাইন পিপল-এর মহাসচিব শেখ রোকনের সাথে। রোকনও দুই দেশের সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণে নদী সুরক্ষার বিষয়টিতে যথেষ্ট আশাবাদী যে আত্রেয়ী কিংবা আত্রাইতৈ এই ক্ষেত্রে যদি আমরা একটা উদাহরণ গড়তে পারি তাহলে অন্য নদী কিংবা অন্য দেশেও তা অনুসরণযোগ্য হতে পারে। এটা আমার স্বপ্ন। আমরা পথ দেখাবো পৃথিবীকে।
আন্তর্জাতিক সংগঠন অ্যাকশন এইডের কান্ট্রি হেড ড. ফারহা কবিরও দেখলাম দুই দেশের মানুষের এক হয়ে নদী সুরক্ষার বিষয়টিতে আগ্রহী এবং আমার বক্তব্যের শেষে এই কার্যধারায় যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে সন্তোষ প্রকাশ করলেন। এগুলোইতো আশার দিক। এগুলোইতো বলে দেয় আমরা সঠিক পথে এগোচ্ছি। আমরা আজ যা করবো, আগামীতে সেই পথেই এগোবে এশিয়া ও বিশ্ব।