।। রিভার বাংলা ডট কম ।।
ভৈরবের মেঘনা নদী নিয়ে আমার অনেক স্মৃতি।
খুব বেশি দিন আগের কথা নয়, এ নদীর ‘কাকচক্ষু জল ‘-এর খ্যাতি ছিল।
নদীগবেষকরা এ কথাও বলেছেন, মেঘনা নদীর পানি বিশুদ্ধতার দিক থেকে সারা পৃথিবীর মধ্যে শীর্ষে। আর সেই নমুনা-পানি সংগ্রহ করা হয়েছিল মেঘনা নদীর ভৈরব এলাকা থেকে। মেঘনা নদীর মাছের স্বাদ এ কারণেই এত বেশি। কালের আবর্তে মেঘনা নদী এর ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। নগর বিস্তার, পুঁজির সর্বগামীতার আঁচে দেশের অন্যান্য নদীর মতো ভৈরবের মেঘনাও শ্রীহীন, লাবন্যহীন হয়ে পড়েছে।
ধান কটার মরসুমে ভাটি এলাকায় যেতো রঙিন পালতোলা শত শত নৌকা। মেঘনার সে কী বাহার! ধানকাটা শেষে নৌকাবহর যখন ফিরত, আবারো রং ছড়ানোর দৃশ্য। এ কদিন তো নদী পারের মানুষের ঘরে ফেরা থাকত না! রঙিন পালের নৌকার সঙ্গে চোখের ভাষায় কথা বলে সময় কাটত। জেলে নৌকার ভিড়, সে তো ছিল সারা বছরের দৃশ্য। ভিন্ন মাছ, ধরার নৌকাও ভিন্ন। দ্বিতীয়ার চাঁদের মতো বাঁকানো, উজ্জ্বল রঙের একধরনের নৌকা, দৃশ্যটা এত বছর পরও চোখে লেগে আছে। নদীতে জেলেনৌকা কদাচিৎ চোখে পড়ে।
তবে, আজকাল কয়লা বোঝাই বড় জলযান আসে। অন্ধ হাতির মতো ভিড়ে থাকে, লোকজন শোরগোল ক’রে কয়লা খালাস করে। নদীর পার ভ’রে স্থাপনা হচ্ছে, বাড়ছে মানুষের কোলাহল। একসময় ভৈরবের মেঘনা নদীর ওপর একটা রেল সেতু ছিল। এখন দুটো। আরো আছে একটি সড়ক সেতু। যান চলাচল বেড়েছে।
নদী পারে হরেক বাণিজ্যবসতি। কিন্তু প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং নির্জনতার আনন্দ হারিয়ে যাচ্ছে।
এত কিছু পরও মেঘনা নদীর প্রেমের মুগ্ধতা থেকে চোখ ফিরাতে পারি না। এখনো, মেঘনা মেয়েটিকে মনে হয় আমার মন খারাপ সারানোর ওষুধ এবং পথ্য।
তারিখ: ০৪.০৯.২০১৮/১৯.০৬.১৪২৫ * এই লেখার শিরোনামটি কবি আহসান হাবীবের একটি বিখ্যাত কবিতা থেকে ধার করা।
ফারুক মাহমুদ : কবি ও সাংবাদিক ।