বাংলা নববর্ষ আর ক’দিন পরেই। বিভিন্ন দিকেই প্রস্তুতি এখন তুঙ্গে। ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এবার অভিনব ভাবে নদী ভাবনায় মঙ্গল শোভাযাত্রা করছে। তার জন্যই অভিনন্দন জানিয়ে শুভেচ্ছা বার্তা দিলেন ভারতবর্ষের নদী ও পরিবেশ চিন্তক তুহিন শুভ্র মন্ডল
আসছে নববর্ষে ‘নদী’কে থিম করে মঙ্গল শোভাযাত্রা করবে ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। একথা দিনকয়েক আগে জানান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান। মঙ্গল শোভাযাত্রায় থাকবে নদীর বার্তা, নদীর অনুষঙ্গ, মাছ, নৌকার প্রতিকৃতি ইত্যাদি।এমন অভিনব ভাবনার কথা জানার পরই শুভেচ্ছা বার্তা দিয়ে অভিনন্দন প্রদান করলেন ভারতবর্ষ থেকে নদী ও পরিবেশ চিন্তক তুহিন শুভ্র মন্ডল। আজ সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল মেলে তা পাঠিয়ে দিয়েছেন তিনি। বাংলাদেশ নদীমাতৃক। তাই বাংলাদেশের জনজীবনে নদীর গুরুত্ব অপরিসীম ।
ইতিমধ্যে বাংলাদেশ সরকার নদ- নদী বাঁচানোর জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। স্লোগান উঠছে: ” নদী বাঁচলে বাঁচবে দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ “। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমগ্র ছাত্র- ছাত্রীদের নিয়ে এইরকম নদী কেন্দ্রিক ভাবনায় যথেষ্ট সাড়াও পড়বে মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল এবং এই সময় এই উদ্যোগের গুরুত্বও অনেক।বিশেষ করে যখন বাংলাদেশে এই সময়্ই সর্বোতভাবে নদী সুরক্ষার একটা ব্যাপক কর্মকান্ড শুরু হয়েছে।
এই বিষয়ে তুহিন শুভ্র মন্ডলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান- ‘ অভূতপূর্ব এই ভাবনা ও উদ্যোগ ।এই বিষয়ে ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির অধ্যাপক দেবাশীষ বিশ্বাসের সাথেও কথা হয়েছে। নদীর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন একটি আয়োজন গভীর অর্থবাহী।আমার এত ভালো লেগেছে বিষয়টি জেনে যে আমি অভিনন্দন ও শুভেচ্ছাও জানিয়েছি। নদী ও পরিবেশের একজন ছাত্র হিসাবে বলতে পারি এইরকম উদ্যোগ আরও যত হবে ততই মানুষের মধ্যে নদী চেতনা বাড়বে। রিভার বাংলাও বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে ভাবছে, তাদেরও আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।’
নীচে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে পাঠানো অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা ইমেল সংযোজন করা হলো-
মাননীয় অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান
উপাচার্য জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়,
ঢাকা, বাংলাদেশ
প্রথমেই আপনাকে নদীমাতৃক সবুজ অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি আগামী নববর্ষের মঙ্গল শোভাযাত্রার থিম হিসাবে ‘নদী’কে নির্বাচন করার জন্য ।একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে এটি একটা অসাধারণ সময়োপযোগী ভাবনা।প্রায় পনের বছর ধরে ছাত্র- ছাত্রীদের নদী ও পরিবেশের শিক্ষায় পাঠদান করে চলেছি।কখনও শ্রেণীকক্ষে কখনও পথে নেমে।কেননা ছাত্র- ছাত্রীরাই ভবিষ্যত। ওরাই বিভিন্ন জায়গায় থেকে নিজের নিজের কাজের মধ্য দিয়ে নতুন দেশ গড়বে। তাই এখন থেকেই ওরা যদি নদী ও পরিবেশের শিক্ষায় সচেতন হয় তাহলে উন্নততর ভবিষ্যত রচিত হবে।একেবারে সঠিক আপনার ভাবনা, যা আমার হৃদয়কে অনুরণিত করেছে।
গত ছয় মাসে ঢাকা ও বাংলাদেশে তিনটি নদী ও পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক সম্মলনে উপস্থিত থেকে দেখেছি এবং অনুভব করেছি যে নদীমাতৃক বাংলাদেশের নদী বাঁচাতে সর্বোতভাবে একটি ইতিবাচক প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। নদীকে জীবন্ত সত্তা ঘোষনা করা হয়েছে, খাল- বিল,নদ- নদীকে নদীকে দূষণ ও দখলমুক্ত করতে সদর্থক দৃঢ় পদক্ষেপের কথা ঘোষনা করেছে বাংলাদেশ সরকার, নদী কমিশনকে শক্তিশালী করা হয়েছে ইত্যাদি।এগুলো সময়ের নিরিখে ভীষণ জরুরী একটা উদ্যোগ।
তাই নদী ও নদীর অনুষঙ্গে,নৌকা, মাছের প্রতিকৃতি, নদী রক্ষার বার্তা সহযোগে এই যে ঐতিহ্যবাহী মঙ্গল শোভাযাত্রা- এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের তেইশ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে ও যুব প্রজন্ম এবং বৃহত্তর ক্ষেত্রে ব্যাপক সাড়া পড়বে বলে আমার বিশ্বাস ।যে কর্মদ্যোগ ভবিষ্যতের ক্ষেত্রেও দিকনির্দেশক হয়ে উঠবে বলে আমার ধারণা।
আমার বাড়ি ভারতবর্ষের আত্রেয়ী নদী পাড়ে।আপনাদের যা আত্রাই।আসলে তো একই ।অভিন্ন সেই যাত্রা।আত্রেয়ী পাড় থেকে আপনাদের এই অনন্য উদ্যোগকে আরও একবার কুর্ণিশ জানিয়ে সফলতা প্রার্থনা করি।আশা রাখি এভাবেই ভবিষ্যতেও নদী ও পরিবেশের অভিমুখে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মঙ্গলযাত্রা প্রবহমান থাকবে।তাহলে আমরাও বাঁচবো, বাঁচবে আমাদের সংস্কৃতি।
নমস্কারান্তে তুহিন শুভ্র মন্ডল
নদী ও পরিবেশ চিন্তক
বালুরঘাট দক্ষিণ দিনাজপুর
পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।