বিশ্বের থিয়েটারের আলোচনায় প্রবেশ করবো না, সরাসরি বাঙলা থিয়েটারে আসি। লেবেদভের ভূমিকা বাংলা থিয়েটারে অনস্বীকার্য। তারপর থেকে বাংলা থিয়েটারে যত বিষয় এসেছে তার বৈচিত্র্যের কথা লিখলে তা লিখে শেষ করা আমার ক্ষেত্রে প্রায় অসম্ভব। আজ এই বিশ্ব নাট্য দিবসে আমার মনে হচ্ছে নদীর কথা। যার কথা বর্তমান থিয়েটারে উঠে আসা খুব জরুরী। তার সঙ্গে এই প্রশ্নটাও করতে চাই আজ যে থিয়েটারের বিষয় হিসাবে নদী কতটা উপযুক্ত? বা এইভাবেও বলতে পারি যে থিয়েটার কি নদীর বিষয় হতে পারে? এই কথা ভাবতেই আমার মনে পড়ে যাচ্ছে দেবেশ রায়ের তিস্তা পাড়ের বৃত্তান্তের কথা। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদ্মা নদীর মাঝির কথা। বা এই তো কিছুদিন আগে তীর্থঙ্কর রায়ের অন্তরে প্রস্তর প্রস্তরে অন্তরের কথা। যা দক্ষিণ দিনাজপুরের অরণী নাট্য সংস্থা মঞ্চস্থ করলো। এই নাটকে উঠে এসেছে শ্রীমতি নদীর কষ্টের কথা। আর আমার কথা বলি আত্রেয়ীর উপাখ্যান নামে একটি নাটক নির্মানের কথা ভাবছি। যেখানে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া আত্রেয়ী নদীর কষ্ট, নদী পাড়ের মানুষের যন্ত্রনা আর নদীর সমস্যা সমাধানের কথা তুলে ধরবো। তুলে ধরবো নদীকে কেন্দ্র করে মানুষের আন্দোলনের কথা।
এই পরিপ্রেক্ষিতেই ভাবা যাক নদীর কোন্ কোন্ বিষয় থিয়েটারে তুলে ধরা যেতে পারে? নদী তো জীবনেরই প্রতিরূপ। অভিজ্ঞতা বলছে সেই জীবন যখন আক্রান্ত তখন সেই আক্রান্ত জীবনের কথা বলা যায়। বরং বলতে পারি বলা উচিত। রামকৃষ্ণ পরমহংস বলেছেন ‘ থিয়েটারে লোকশিক্ষে হয়’। আজকেই ফেসবুকে আমার একটি পোস্টের প্রতি উত্তরে তিন জন ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন থিয়েটার চেতনা জাগায় (সংযুক্তা গুহ নিয়োগী), গণচেতনার হাতিয়ার থিয়েটার (অশেষ দাস)। আর একজন বলেছেন থিয়েটার তাকে দর্শক হিসাবে শিক্ষার আলো দিয়েছে (স্বর্ণায়ু মৈত্র)। থিয়েটারকে কেন্দ্র করে তো আমরা নদীর কথা মানুষের কাছে পৌছে দিতে পারি।
মানুষের চেতনায় আঘাত হেনে নদীচেতনা বৃদ্ধিতে সাহায্য করতে পারি। নদীর দূষণ, নদী দখল, নদীর জীববৈচিত্র্য হ্রাসের সমস্যাকে তুলে ধরতে পারি। নদী পাড়ের মানুষ যাদের জীবন ও জীবিকা নদীর সাথে যুক্ত তাদের হাহাকার, আর্থিক ও সামাজিক দুর্গতির কথা সামনে আনতে পারি। নদী সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারি মানুষের মনে। প্রশাসনের সামনে নদীর সমস্যা ও সমাধান তুলে ধরতে পারি। আজ বিশ্ব নাট্য দিবসে সেই কথা বারবার মনে পড়ছে।জনচেতনা বৃদ্ধি করতে থিয়েটার ও নদী একে অপরে মিশে যাক। দুই বাংলাতে নদী রক্ষার দাবী উঠছে, আন্দোলন জোরদার হচ্ছে। থিয়েটারের মাধ্যমে এই কথা আরও পৌছে যাক সমাজের মধ্যে, মানুষের মধ্যে। বেশী করে উঠে আসুক নদীর হাহাকারের কথা, নদীর কান্নার কথা। নদী যে ভাল নেই একথা জনে জনে বলে দেওয়ার প্রয়োজন আছে এখন। নদীকে কেন্দ্র করে থিয়েটার ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে উঠুক। মানুষের চেতনা ফিরুক। বাঁচুক নদী, মানুষ, পরিবেশ ও ভবিষ্যত ।