তুহিন শুভ্র মন্ডল>>
ভারত এবং বাংলাদেশের আন্ত:সীমান্ত নদীগুলিকে সুরক্ষা দিতে দুই দেশের যৌথ অংশগ্রহণ অতীব জরুরী।কিছুদিন আগে বাংলাদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলেনে একথা গুলোই তুলে এনেছিলাম। আমাদের সভ্যতা নদীমাতৃক । নদী আমাদের জীবন, জীবিকা।নদী সুস্থায়ী অর্থনীতির একটা সূচক।আমাদের সংস্কৃতিতে, উপাচারে নদী জড়িয়ে রয়েছে।নদী পরিবহণের অন্যতম মাধ্যম । অথচ সেই নদীগুলির প্রতি কি আশ্চর্য উদাসীনতা!! ভারতবর্ষের দক্ষিন দিনাজপুর আমার জন্মভূমি। সেখানকার নদীগুলির বর্তমান অবস্থা মোটেও ভালো নয়।
আত্রাই, টাংগন, ইছামতি,পুনর্ভবা, যমুনা, ব্রাহ্মণী, শ্রীমতি, শ্রী ইত্যাদি নদীগুলির অবস্থা ভাল নয়।জলহীনতা, জলদূষন, নাব্যতা কমে যাওয়া, মাছেদের হারিয়ে যাওয়া, নদীর বুকে জমি দখল এমনকি মালিকানা যুক্ত জমি, নদীর বুকেই চাষবাস নদীকে মৃত্যু পথযাত্রী করে তুলছে। অথচ নদীকে ঘিরে সুনির্দিষ্ট কোন নীতি নেই, পরিকল্পনা নেই। নেই কোন একমুখী কার্যসূচী। নদীকে ঘিরে যাদের জীবন’-জীবিকা আবর্তিত হতো সার্বিক ভাবে তাদের উপর নেমে এসেছে ভয়ংকর সংকট। তারা অন্য অনিশ্চিত পেশায় চলে যেতে বাধ্য হচ্ছে।তৈরী হচ্ছে রিভার রিফিউজি ।বিষয়টাতে নজরই দেওয়া হচ্ছে না।
ভারত- বাংলাদেশ আন্ত:সীমান্ত নদী আত্রাই ।দক্ষিণ দিনাজপুরের উপর দিয়ে প্রবাহিত এই সাতান্ন/আটান্ন কিমি দীর্ঘ নদীতে একসময় পাওয়া যেত কত মাছ! তার মধ্যে মহাশোল, বাঘা আড়, বৌ বা পুতুল, গাগর, গজার, বেলেসহ প্রায় তিরিশ রকমের মাছ এপারের এই নদীতে দেখা যায় না।
ভারতবর্ষের দুই দিনাজপুরের প্রায় সব নদীগুলিই উপরোক্ত সমস্যার শিকার। এবারের বাংলাদেশ সফরে আন্তর্জাতিক সম্মেলেনে-এ বিষয়গুলি তুলে ধরা ছাড়াও বাংলাদেশের বিশিষ্ট নদীকর্মী ও রিভারাইন পিপলের মহাসচিব শেখ রোকন এবং স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক কামারুজ্জামান মজুমদার এর সাথে বিস্তারিত কথা হয়েছে।
বাংলাদেশের নদীগুলিও কমবেশী একই সমস্যার শিকার।পরবর্তীতে বাংলাদেশের উত্তর অংশে অবস্থিত দিনাজপুর, জয়পুরহাট, নওগাঁর সচেতন নাগরিকদের সাথে কথা বলে দেখেছি সমস্যার ভয়াবহতা তাঁরাও উপলব্ধি করছেন।বালুরঘাটসহ জেলায় “নদীর কাছে এসো” একটা কাজ আমরা শুরু করেছি।সেখানে বিভিন্ন নদীর পারে প্রশাসক, পৌরপতি, পঞ্চায়েত প্রতিনিধি, কবি, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, নাট্যজন, ছাত্র- ছাত্রী, সচেতন নাগরিক, মৎস্যজীবী, নদী পারের বাসিন্দা সবাইকে আনার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।আশা করি চেতনা ফিরবে।
আর আন্তঃসীমান্ত নদীগুলি যেহেতু দুই দেশের বিষয় তাই যৌথ নদী ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন। আর এই বিষয়ে জনমত তৈরীর একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে বলে মনে করি।তাই মতপার্থক্য ঘুচিয়ে দুই দেশকে এক হতে হবে। আর এই নিয়ে দুই বাংলার নদী বন্ধুদেরও এক হতে হবে।নদী বিষয়ক অনলাইন পত্রিকা রিভার বাংলা ডট কমকে ধন্যবাদ যে এমন একটি উদ্যোগ তারা গ্রহণ করেছেন। আগামীতে ভারতবর্ষে একটি যৌথ নদী কনভেনশন করবো।আসুন আমরা সবাই এক হই।