আবহমানকাল ধরে নদী আমাদের পুষ্ট করেছে। আমাদের উপহার দিয়েছে সভ্যতা, সংস্কৃতি। আমাদের বেঁচে থাকার রসদ দিয়েছে। কিন্ত আমরা কি দিচ্ছি নদীকে? একথা ভাবার সময় বহু আগেই চলে গিয়েছে।
তবু এই সময় আবার কথাগুলো বলছি। কেন? কারণ দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে আমাদের। তাই আরো একবার বলা যাক নদীর কথা, বুঝে নেওয়া যাক দায়িত্ব। ঠিক করে নেওয়া যাক কর্মপরিকল্পনা। বহুদিন ধরেই বলে আসছি যে নদী গুলি হয়ে উঠেছে গ্রেট ডাস্টবিন। শহরের ও নাগরিকদের যাবতীয় নোংরা- আবর্জনা ফেলার জায়গা। যার জন্য ক্ষতি হচ্ছে নদীর জল ও সেখানে থাকা উদ্ভিদ ও প্রাণীদের।
নদীর বুক থেকে অবৈধ বালি উত্তোলন। জল দূষণের ফলে মাছেদের সঙ্কট। নদী ভাঙনের ভয়ংকর প্রবণতা। ক্ষতিগ্রস্ত নদী বাঁধ। নদীতে জল হীনতা।নাব্যতা হ্রাস, ভয়ংকর বন্যা। নদী দখল হয়ে যাচ্ছে। দেখবে? কারা দেখবে? নদীর মালিক কে? ধরে নেওয়া যাক সরকার। তাহলে কোন সরকার? কেন্দ্র না রাজ্য? অনেকে বলবেন, বিভিন্ন দপ্তর ও বিভাগ তো রয়েছে নদীর বিভিন্ন বিষয় দেখার জন্য। সেচ দপ্তর, মৎস্য দপ্তর,ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তর,দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ, জেলা প্রশাসন, পৌরসভা- কিন্ত কাজ করতে গিয়ে দেখা যায় তাতে জটিলতা বাড়ছে।
যেমন ধরা যাক একটি নদীতেই উপরোক্ত সব সমস্যা আছে। আমরা দেখেছি এমন নদীর সংখ্যা অনেক ভারতবর্ষে। তাহলে সব সমস্যার জন্য আলাদা আলাদা করে অভিযোগ জানাতে হবে, আলাদা আলাদা দরবার করতে হবে। দেখা গিয়েছে তাতে কাজ দেরি হয়। অভিজ্ঞতা বলে বিভিন্ন দপ্তরের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবে নদীর সমস্যাসমূহের দিকে দৃকপাত করা হচ্ছে না। সমস্যা মেটা তো দূরের কথা। কার কতটুকু দায়িত্ব সেটা নিয়েও সন্দিহান বিভিন্ন দপ্তর।
কিন্ত যদি একটাই দপ্তর থাকতো? তাহলে এটা হতোনা।আরেকটি প্রসঙ্গও এখানে উল্লেখ করতে চাই। তা হলো- আমাদের নদীকেন্দ্রিক পরিকল্পনা কোথায়? অর্থাৎ নদীকে কেন্দ্রে রেখে কি পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে? যে নদী জীবন-জীবিকার প্রতিরুপ তার জন্য আমরা কি ভাবছি? তাই সবার আগে যে নদী আমাদের সভ্যতা, সংস্কৃতি, জীবন, জীবিকা দিয়েছে তার মর্যাদার জন্য, তার দিকে দৃষ্টি ফেরাতে, তার সমস্যার কথা শুনতে ও জানাতে, সমাধান করতে সবার আগে একটা পৃথক নদী দপ্তর চাইছি এবং জোরালো ভাবেই চাইছি।
আরো পড়তে পারেন…
নদী দখল হয়ে যাওয়া উদ্বেগজনক : মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম
পাকুন্দিয়ায় রিভার বাংলা নদীসভা’র কমিটি গঠন
ঘোড়াউত্রা নদীর ভাঙ্গন রোধ: বাস্তবতা ও করণীয়- মহিবুর রহিম