তাহলে কি এখন থেকে তাই? মানে নদীর অধ্যায় আর ভূগোলে পড়ানো হবে না। এখন থেকে ইতিহাসে পড়তে হবে।কি এমন হলো যে এমনটা হলো? ভাবছেন তো! আসলে পরিস্থিতি যে দিকে এগোচ্ছে তাতে খুব শীঘ্রই বোধহয় সেই দিন আসতে চলেছে যখন নদী আর থাকবেনা।নদী ছিল বলতে হবে।অতীত কাল। আর অতীত কালের বিষয় তো ইতিহাসেই পড়ানো হয়।
আগামী প্রজন্ম কি নদী দেখতে পাবে? এই প্রশ্ন এখন মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।একটি পরিসংখ্যান বলছে পশ্চিমবঙ্গের সতেরটি নদী হারিয়ে গিয়েছে।সাতাত্তরটি নদী হারিয়ে যাওয়ার পথে।তাই বিভিন্ন জায়গাতে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তাই এভাবেই বলি যে নদী নেই হয়ে গিয়েছে।হচ্ছে।তাই নদী আর ভূগোলের কোন বিষয় নয়।নদী এখন অতীত ইতিহাসের পথে।
কি হবে যদি নদী না থাকে? নদীর জল শুকিয়ে যায়? শহরের? জেলার, রাজ্যের? দেশের? এমনকি মানুষের ও ভবিষ্যতের? একথা জানতে চেয়েছিলাম বর্তমানের শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম সোস্যাল মিডিয়াতে। তাতে বিভিন্ন বয়সের সচেতন মানুষ গুরুত্বপূর্ণ সব মন্তব্য করেছে। একঝলক দেখে নেওয়া যাক তারা কি বলেছেন?
সন্দীপন গাঙ্গুলি লিখছেন- নদী শুকিয়ে যাওয়া মানে সভ্যতা থমকে যাওয়া, জীবন শুকিয়ে যাওয়া।সংযুক্তা গুহ নিয়োগী লিখছেন- নদীর উপর মানুষ নানাভাবে নির্ভরশীল। সেটাই তো বিনষ্ট হবে।প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দরকার।খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা লিখেছেন অভিষেক ঝাঁ।তার কথায়- মানুষের দ্বারা নদী শুকিয়ে গেলে সেটা একটি অঞ্চলে গণহত্যার চেয়েও বেশী মারাত্নক ; আন্ত: প্রজাতি বায়োস্ফিয়ার হত্যা এবং কয়েক প্রজন্ম ধরে সেটি চলে। প্রাবন্ধিক অশেষ দাস লিখেছেন- নদীর জল চোখের জলে পরিনত হবে।
বাস্তবিকই কিন্ত তাই।নদীর সাথে মানুষ ও তার জীবন- সংস্কৃতি যেভাবে যুক্ত তাতে এই অবস্থাই হবে বৈকি! সচেতন যুবক- যুবতী দের মধ্যে অন্যতম পলাশ দেবনাথ, তনুশ্রী প্রামাণিক। তাদের কথায়- নদীমাতৃক দেশ আমাদের ।নদী শুকিয়ে যাওয়া মানে তো জীবন শুকিয়ে যাওয়া। আর জলের অপর নাম তো জীবন।জলই যদি না থাকে তাহলে মানুষ, রাজ্য, দেশ এসবের অস্তিত্বই তো থাকবে না ।অমৃতা মুখার্জি বিষয়টা এমন ভাবতে নারাজ।তার কথায় – গ্রীষ্মকালে সব নদী শুকিয়ে যায়, বর্ষাকালে ফিরে আসে।কিন্ত যখন তাকে মনে করিয়ে দেওয়া হয় যে যদি আর না ফেরে নদীর জল? তখন?চিন্তিত ও হতাশ হয়ে পড়েন তিনি। সুতপা দাশগুপ্ত জানিয়েছেন নদী নেই মানে সব শেষ।কিন্ত অরিন্দম চন্দ আসন্ন ভোটের ডিউটি নিয়ে এতোটাই চিন্তিত যে নদী নিয়ে পরে ঠান্ডা মাথায় বলবেন জানিয়েছেন ।
কিন্ত পরে বলার পরিস্থিতি থাকবে তো? নদী সেই সুযোগ দেবে তো? সেটাই কিন্ত কোটি টাকার প্রশ্ন। তবে হতাশা কিন্ত শেষ হচ্ছেনা ।বিনিতা সেন, সুচেতা মজুমদার, শুভ্র চক্রবর্তী, উচ্ছাস কুন্ডুদের কথায় হতাশা ঝরে পড়ছে।সুচেতা বলছেন ভবিষ্যত ধ্বংসের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে।বিনিতা বলছেন- নদী শুকিয়ে যাওয়া মানে খাদ্য পিরামিড নষ্ট হয়ে যাওয়া। শুভ্র বলছেন জীবন সাময়িক ভাবে বিপর্যস্ত হবে। আর উচ্ছাস বলছেন- এমনটাই হওয়া উচিত ।তাহলে মানুষের শিক্ষা হবে। শান্তনু মিশ্র একটি মারাত্মক কথা বলেছেন। নদীর ভোটার কার্ড থাকলে নদী বাঁচবে।নইলে কিছুই হবেনা। তার মানে বোঝা যাচ্ছে নদীর হারিয়ে যাওয়া নিয়ে সবাই কম বেশী উদ্বিগ্ন ।
কি হবে ভবিষ্যতে? নদী কি ভূগোলেরই বিষয় থাকবে নাকি ইতিহাস হবে? কি হবে বলা মুশকিল।কিন্ত যদি এমনই চলতে থাকে তাহলে নিশ্চিত যে নদীর ঠাঁই হবে ইতিহাসে। তাই তো ভবিষ্যত প্রজন্ম দের সচেতন করবার প্রয়াস সবসময়ই নিই যাতে পরিস্থিতি ভয়াবহ না হয়।নদী চিরতরে হারিয়ে না যায়।