কলকাতা [ভারত]: ভারতের সাধারণ নির্বাচন আসন্ন, সেই বাজারে এক দল গরীব খুঁজছেন দান করে আশীর্বাদ নেবে বলে তো আরেক দল শত্রু নিকেশ করে জোড় দেখাতে চায়। আমরা ভাবি ২৬ বছরের এক তরুণ ব্রহ্মচারী আত্মবোধানন্দজী ১৬১ দিন অনশন তপস্যা করে আত্মবলিদান দিতে চলেছেন তাঁর প্রাণ রক্ষা হয় কিসে? সেই খোঁজেই একের পর এক ধর্ণা অবস্থান প্রতীকি অনশন কর্মসূচী করে চলেছে দেশ জুড়ে ।
আজ তেমনি অবস্থান ছিল, নদীয়া জেলার কন্দখোলা গ্রামে, শান্তিপুরে,বাবলা পঞ্চায়েত অঞ্চলে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা তাঁদের মায়ের হাত ধরে এসেছিল অবিরল-নির্মল গঙ্গার দাবী তোলা বাংলার নদী কর্মীদের হাত শক্ত করতে। আমরা আমাদের কথা বলে চলবো প্রতিনিয়ত, এই বিশ্বাস নিয়ে যে ধারাবাহিকতাই পথ তৈরী করবে। নদীয়ার যুগবার্তা আজকের কর্মসূচীর আহ্বান করে। শান্তিপুর সহ নদীয়ার বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রগতিশীল সাহিত্য প্রেমী সহ পরিবেশ আন্দোলন কর্মী সাথীরা অবস্থানে ছিলেন।
এই কথা শুনে, নদী বাঁচাও জীবন বাঁচাও হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপে পরিবেশবিদ অমিতাভ আইচ বললেন- ‘আমরা খালি চাকরির দাবী নিয়ে অনশন দেখে অভ্যস্থ’।
ঠিকইতো আমরা অনশন দেখি চাকরির জন্য, হস্টেলের জন্য, লোকপাল বিল এর জন্য।কারখানা বন্ধ করতে অনশন দেখেছি। কিন্তু প্রকৃতির জন্য, গঙ্গা নদীর অবিরল নির্মল ধারা ফিরিয়ে দিতে আমরণ অনশন এ কল্পনার অতীত। আজ ব্রহ্মচারী আত্মবোধানন্দজী দেশের নতুন আইকন। অসংবেদনশীলতার সমস্ত রেকর্ড ভেঙে চলা কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে সন্যাসী আত্মবলিদান করছেন অথচ প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধ জিগির তুলতে ব্যাস্ত তীব্র অবহেলায় । যদিও স্পষ্টভাবে বুঝতে হবে এ আন্দোলন নিছক কোন একটি সরকারের বিরুদ্ধে নয় নদী বাঁচাও জীবন বাঁচাও আন্দোলন গড়ে উঠছে, নদী ব্যবহারের ধারণা ও পদ্ধতি বদল এর দাবীতে।
নদী ব্যবহারের ধারণা ও পদ্ধতিই নদী মৃত্যুর প্রধান কারণ সে বিষয়ে আমাদের সচেতন করতে। গঙ্গা কে মা জ্ঞানে পূজা করা ভারতবাসীর কাছে এ অনশনের কারণ বোঝাতে হবে নদীকে শুধু আরতি করলে নদী নিজে বাঁচবে না আমাদের ও বাঁচিয়ে রাখতে পারবে না। আবার বলতে হবে এ শুধু সন্যাসীদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়। মনে করাতে হবে, নিকারাগুয়ায় বা আরো অনেক মেহনতি মানুষের স্বার্থে চলা লড়াই-আন্দোলনে যখন পাদ্রীরা, ধর্মীয় নেতৃত্ব আন্দোলন এ সামিল হয়েছিলেন সেই ইতিহাস, তখন সেই সামিল হওয়াকে তাত্বিকেরা ব্যাখা করেছিলেন, “লিবারেশন থিওলজী” দিয়ে।
যে ধর্ম চর্চা মেহনতি মানুষের স্বার্থে। যখন হিন্দু ধর্মের বিশ্বাসী সন্যাসী ভবিষ্যতের স্বার্থে এ লড়াইকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন তখন আমার কি শুধু ভোটের অঙ্ক করবো না এই লড়াইকে, এই আত্মবলিদান কে আন্দোলন গড়ে তোলার হাতিয়ার বানাবো। প্রকৃতি বেঁচে থাকলে প্রকৃতির উপর অধিকার মেহনতী মানুষের কাছে থাকলে তবেই তো আসবে পরিবর্তন, আমূল পরিবর্তন ।