গেল ২২ সেপ্টেম্বর ছিল বিশ্ব নদী দিবস। যথার্থ প্রাণের দাবী নিয়ে এবারেও নদীমাতৃক বাংলাদেশে পালিত হয়েছে বিশ্ব নদী দিবস। ছোট বড় তেরো শত মতান্তরে সাতশো মৃতঃপ্রায় নদ-নদীর দেশ বাংলাদেশ। বিশ্বসভার নদী ভাবনা আর বাংলাদেশের নদীরক্ষা আন্দোলন এবার নাড়া দিবে স্ববেগে।নদীরক্ষা না হলে আর রক্ষা নেই।
সৌরজগৎ এর একমাত্র প্রাণের বসতি পৃথিবীনামক গ্রহের। ক্ষিতি অপঃ তেজ মুরৎ ও বোম এই পাঁচটি মূল উপাদানে পৃথিবীর সৃষ্টি। একটি উপাদানের পরিপূরক আরেকটি। প্রকৃতির অপার লীলায় একটি আরেকটির ফ্রিকোয়েন্সি যেন। আঠারো হাজার মাখলুক তারি বাস্তুুঃসংস্থান নিয়ে বেঁচে আছে।মাটিকে যৌবনা করে পানি আর পানিকে তেজালো করে অগ্নি। বাতাস নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। মহাদেশ ও মহাসাগরের দেহ বলয়ের মধ্যে বিজ্ঞানের নিত্যতা সৃষ্টি করে যাচ্ছে নদ ও নদী। ধনাত্মক ও ঋণাত্মক বৈদ্যুতিক চার্জ যেমন বিভিন্ন শক্তিকে বিভিন্ন শক্তিতে পরিনত করে বিদ্যুৎ তৈরি করছে তেমনি পৃথিবীর সব নদ-নদী পাহাড় ধেয়ে সাগরে নেমে বসুন্ধরাকে করেছে অনন্য।
তীরে লক্ষকোটি বছরের সভ্যতা কালের স্বাক্ষী। মানবদেহের রক্তপ্রবাহ আর পৃথিবীর বেলায় নদী থেকে সাগর।তাইতো জীবন্তস্বত্ত্বা। অন্যথায় অপঘাতে মৃত্যু। জীবের রেচক প্রক্রিয়ায় ইউরিয়া ও ইউরেন ত্যাগ আর পৃথিবীর বেলায় বর্জ্য ত্যাগের প্রধান মাধ্যম নদ- নদী থেকে মহাসাগর।তাইতো তিনভাগ জল আর একভাগ স্থল। গোলবেঁধেছে মানবসৃষ্ট বৈশ্বিক চাপ। যান্ত্রিক রেঁনেসার কালো ধোঁয়ার শ্বাসকষ্টে বায়ুমণ্ডলীয় রুগ্নতা আবহাওয়া ও জলবায়ুর উপর বিরাট প্রভাব। আর ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপ। হারাতে বসেছে নদীর নাব্যতা ও গতিপথ। কাঁটাতারের বেড়া মানচিত্র সনাক্তকরন সেই সাথে নদীরবুকে বাঁধ। চীনের মহাপ্রাচীর যেনো বিশ্ব মোড়লদের চোখে নদীর গতিপথ। অথচঃ নদীর কোন দেশ নেই।
আরো পড়তে পারেন…..
কিশোরগঞ্জে নদী দখলের মহোৎসব
অভিন্ন নদীর সমস্যা সমাধানে
আইজ্যাক নিউটনের সূত্র বাস্তবায়নে ব্যস্ত সবাই। শক্তির ক্ষয় বা বিনাশ নেই, কেবল একপ্রকার শক্তিকে অন্যপ্রকার শক্তিতে রূপান্তরের অপচেষ্টা মাত্র।পৃথিবীতো বটেই অধুনা বাংলাদেশকেও দুঃখের নদীশাসন অবৈধ দখল ও দূষনমুক্ত করার প্রয়াসে নাব্যতা ও গতিপথ মুক্ত করে পূর্নঃযৌবনা অতীব জরুরী। দূষিত বায়ুমণ্ডল যেমন সূর্য থেকে আসা তাপ ধরে রাখতে পারে না। জলীয়বাষ্প কার্বন- ডাই অক্সাইড ইত্যাদি গ্যাসের মাধ্যমে গ্রীনহাউস এফেক্ট সৃষ্টি করে চলেছে তেমনি নদীর গতিরোধ ও আবর্জনার দ্বারা পৃথিবীর তাপপ্রবাহ বরফগলা খরা বণ্যা এসিডবৃষ্টি এসব ভিন্ন ভিন্ন প্রাকৃতিক দৃর্যোগ সৃষ্টি করছে। আবহাওয়া ও জলবায়ুর বিচিত্ররূপ উদ্ভিদ ও প্রাণীজগতের খাদ্যশৃঙ্খলে চরম বিপর্যয় ঘটাচ্ছে।
অবাধ বনায়ন ও মুক্ত নদীশাসনেই পারে আমাদের এই অবস্থা থেকে উদ্ধার করতে। তার জন্য
চাই মুক্ত নদীশাসন। অন্যথায় কক্ষপথ আবর্তিত পৃথিবীর দেহমন্ডল আন্তঃমন্ডলীয় আবর্তন হারাবে। সাগর মহাসাগরের সাথে মিলনের আবর্তন হারালেই প্রকৃতির বৈরিতা দেখা দিবে। সুনামি আলনিনু লানিনুর মতো হ্যালির ধুমকেতু হয়ে দেখা দিবে যুগে যুগে। আমাজান পুড়বে, সাগরে নীলতিমিরা মরে ভেসে থাকবে, আর ডাঙ্গায় প্রাণীকুলের দেখা দিবে অপঘাত আর কর্কট ব্যাধির।
নদীকে নির্যাতন ও নিপীড়ন করে নগরায়ন পরিবেশদূষণ ও
আধুনিক রেঁনেসার বর্জ্য নিষ্কাশনের যে অসম প্রতিযোগিতায় নেমেছে বিশ্ববাসী তা হতাশাজনক। হুমকি মানবজাতির সুজলা সুফলা পৃথিবীর জন্য। এলিটদের সৃষ্ট প্রভাবে মানুষ যান্ত্রিক রোবট আর নদীশাসন তুরুপের তাস। কালচক্র আর জীবনচক্রের মাঝে নিষ্ঠুর আবহ তৈরি করেছে সময়ের ঘড়ি আর নিম্ন আয়ের সাধারন পথবাসী মানুষদের মাঝে। আমাদের ঔষধি খোঁজতে হবে।নদী ও মানবজাতিকে রক্ষার জন্য। তাদের স্বত্ত্বা তাদের স্বমহিমা।তাদেরকে তাদের মতো বাঁচতে দিন।
প্রত্যেক ক্রিয়ারেই সমান বা বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে। স্যার আইজ্যাক নিউটনের আপেক্ষিক বলের তৃতীয় সূত্র। আজ বাংলাদেশের মৃতঃপ্রায় নদীগুলোকে রক্ষার অভিপ্রায় নিয়ে আপনি, আমি যদি না দাঁড়াই তবে ১৭ কোটি মানুষের সোনার বাংলা হবে বিরানভূমি। প্রাকৃতিক দৃর্যোগ ও মানবসৃষ্ট দৃর্যোগে এমনিতে আমরা শীর্ষ ও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে।
তাই আসুন নদীর জন্য আওয়াজ তুলি-
বাঁচাও নদী, বাঁচাও দেশ
নদীর কোন নেইতো দেশ
বিশ্বসভায় পড়ুক রেশ।
শিক্ষক ও নদী রক্ষা আন্দোলন কর্মী
তাড়াইল, কিশোরগঞ্জ।