।। রিভার বাংলা ডট কম ।।
ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার ও মো. হাসিব ইকবাল কানন >>
আজ ২৩ সেপ্টেম্বর বিশ্ব নদী দিবস। ১৯৮০ সালে নদী রক্ষায় মার্ক অ্যাঞ্জেলো নামক একজন নদীকর্মী প্রথম দিবসটি পালন করেন। ২০০৫ সালে দিবসটি জাতিসংঘের অনুসমর্থন পায়।
বাংলাদেশে ২০১০ সালে ‘রিভারাইন পিপল’ দিনটি প্রথম পালন করে।
এ বছর বিশ্বের প্রায় ৭০টি দেশে বিভিন্ন প্রতিপাদ্য সামনে রেখে দিবসটি পালিত হচ্ছে।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (বাপা) এক সংবাদ সম্মেলনে এ বছর জাতীয় নদী দিবসের প্রতিপাদ্য ঘোষণা করেছে- ‘নদী থেকে নির্বিচারে বালু উত্তোলন বন্ধ করো’।
একসময় বাংলাদেশে ছোট-বড় প্রায় সাড়ে ১১শ’ নদী ছিল। বর্তমানে নদীর সংখ্যা ৪০৫। ক্রমাগত দূষণ, দখল ও বালু উত্তোলনের কারণে নদীপথ পরিবর্তন এবং আশপাশের জনজীবন হুমকির সম্মুখীন হয়।
বালু উত্তোলন করায় নদীর পাড় ভেঙে নদীর প্রতিবেশ ব্যবস্থা, নদীতীরবর্তী কৃষিজমি ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এলাকার বসতবাড়ি, ফসলি জমি এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ সংযোগের খুঁটি। সম্প্রতি শরীয়তপুরের নড়িয়ায় পদ্মার ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে কয়েক হাজার পরিবারের সর্বস্ব। ভেঙে গেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, রাস্তাসহ বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠান।
বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনে বর্ণিত আছে, কতিপয় ক্ষেত্রে বালু বা মাটি উত্তোলন নিষিদ্ধসংক্রান্ত বিধানসহ অন্য কোনো বিধান কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান অমান্য করলে, এই আইন বা অন্য কোনো বিধান লঙ্ঘন করলে, বালু বা মাটি উত্তোলনের জন্য বিশেষভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া বালু বা মাটি উত্তোলন করলে সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী ব্যক্তিবর্গ বা তাদের সহায়তাকারী কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা অনূর্ধ্ব দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
এছাড়া সর্বনিম্ন ৫০ হাজার টাকা থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এ আইনের অধীনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক ভ্রাম্যমাণ আদালত বা বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচারের নিয়ম থাকা সত্ত্বেও প্রতিনিয়ত আইনটি অমান্য করে নদী থেকে বালু উত্তোলন করছে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা।
পৃথিবীর ৭১.৪ শতাংশ পানির মধ্যে ৯৭ শতাংশ লবণাক্ত, মিঠা পানির পরিমাণ মাত্র ৩ ভাগ। মিঠা পানির মধ্যে ২ ভাগ বরফ এবং শুধু ১ ভাগ মানুষের ব্যবহারযোগ্য, যার ওপর নির্ভর করে বেঁচে আছে জীবজগৎ। বর্তমানে পৃথিবীব্যাপী পানির উৎসগুলো দূষিত হচ্ছে। এদেশের পানির মূল উৎস হচ্ছে নদ-নদী। নদীগুলোর দূষণচিত্র খুবই ভয়াবহ। মানুষের কার্যকলাপের কারণে দূষিত হচ্ছে নদী।
বাপা’র গবেষণামতে, প্লাস্টিকসহ দেশজুড়ে শিল্পকারখানা থেকে বিষাক্ত কেমিক্যাল, এসিড, এলকালি, হেভি মেটাল এবং নানা ধরনের বিষাক্ত পদার্থ ভূগর্ভস্থ পানিকেও দূষিত করে তুলছে। দেশে ‘জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন আইন, ২০১৩’ থাকা সত্ত্বেও পালন হচ্ছে না আইনটি।
ফলে নদীর অবৈধ দখল, শিল্প-কারখানা সৃষ্ট নদীদূষণ বেড়েই চলছে। ফলস্বরূপ নদীর অক্সিজেন লেভেল কমে যাচ্ছে এবং মৃত্যু হচ্ছে জলজীবের। গত বর্ষা মৌসুমের শেষদিকে স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (পবা) সহযোগিতায় ঢাকার আশপাশের ৫টি নদীর (তুরাগ, বুড়িগঙ্গা, ধলেশ্বরী, শীতলক্ষ্যা, বালু) পানি পর্যবেক্ষণ করে দেখে, এতে ১৯টি নির্ধারিত স্থানের পিএইচ এবং দ্রবীভূত অক্সিজেনের মান আদর্শ মাত্রার তুলনায় কম বা বেশি।
নদী রক্ষা করতে হলে নদীর ওপর অত্যাচার বন্ধ করে সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। দখলদার ও দূষণকারীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার : বিভাগীয় প্রধান, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, মো. হাসিব ইকবাল কানন : লেখকের গবেষণা সহকারী। সূত্র: যুগান্তর, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮।।