গতকাল গেল বিশ্ব মা দিবস। ভারতবর্ষ এবং বাংলাদেশে তো আমরা নদীকে মা বলে থাকি, মা বলে ডাকি। প্রায়শই বলা হয় নদীমাতৃক সভ্যতার প্রসঙ্গ। আর বলা হয় আমরা নদী মায়ের সন্তান। কিন্ত আদৌ কি আমরা নদীকে মা বলার যোগ্য সন্তান ?
পুনর্ভবা, ব্রাহ্মণী, টাঙ্গন, ময়ূরাক্ষী, ইছামতি, গঙ্গা যে নদীর দিকেই তাকাই নদী আর নদী রাখিনি। ধূ ধূ মাঠ যেন। নদীর বুকে ক্রিকেট খেলা হচ্ছে।নদীর জলে প্লাস্টিক- আবর্জনা- বর্জ্যের পাহাড়। নদীতে জল রাখতে পারিনি আমরা। আমরা- যারা নাকি নদী মায়ের সন্তান !! আজ এত দিন পরে হঠাৎই কিছু মানুষের মনে হচ্ছে নদী যে কোন মূল্যে বাঁচাতে হবে। কিছু মানুষের মধ্যে। বাকীরা? কেন নদীকে বাঁচানোর কথা মনে করিয়ে দিতে হবে? কেন চেতনা বৃদ্ধির চেষ্টা করতে হবে? এরকম তো হওয়ার কথা ছিল না!
প্রাণময়তার আধার নদী আমাদের দিয়েছে সভ্যতা। দিয়েছে সংস্কৃতি। নদী আমাদের অর্থনীতি।নদী আমাদের দিয়েছে পরিচয়। এত যে দিলো আমাদের তার সাথে তাহলে কেন করলাম আমরা এরকম? আমাদের উদাসীনতায়, অবহেলায় নদী আজ মৃত্যুপথযাত্রী। আজ বালুরঘাটের কাছে পতিরামের অংশে আত্রেয়ীর অংশ পরিদর্শন করতে গিয়ে দেখলাম প্রায় নদীবক্ষে আবর্জনা- বর্জ্য জমা করা হচ্ছে। বৃষ্টির জলে যা গিয়ে পড়বে নদীতে।কে করলো এসব? আবার কে ? মানুষ!
বর্ষাপাড়া আর নীচা বন্দর এলাকায় পলি আর বালি জমে এত উঁচু হয়েছে নদীবক্ষ যে নদী তার ধারা পরিবর্তন করেছে। নদী চরের পরিমাণ এতটাই বেশী যে নদীর মধ্যে আলাদা দ্বীপ তৈরি হয়েছে যেন। কেন নেওয়া হল না নদীকেন্দ্রিক পরিকল্পনা? কেন রাজ্য, কেন্দ্রের কাছে দরবার করতে হয় নদীকর্মীদের? কেন নদীর গতিপথ রুদ্ধ করে দেয় ক্ষমতাধরেরা? কেন দখল নেয় নদীর? তারাও তো সেই নদীরই সন্তান।
তাহলে? চতুর্দিকে হতাশার ছবি। আশা কি নেই তবে ? আছে। নদীর কাছে মানুষেরা আসছেন, বসছেন, নদীর গান গাইছেন, নদীর কবিতা পাঠ করছেন আর পরের পরিকল্পনা ঠিক করছেন। বালুরঘাটে দিশারী সংকল্পের নদীর কাছে এসো-একটু একটু করে সেই মানুষ জড়ো হচ্ছেন।বিভিন্ন ক্ষেত্রের মানুষ। সেই মানুষ! তবে তারা নদী মায়ের যোগ্য সন্তান?! না না। এ কেবল যোগ্য হয়ে ওঠার চেষ্টার শুরু।অনেক পথ হাঁটা বাকী নদীপথ ধরে।
……………………………………………………