কুমিল্লার মুরাদনগরের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে তিতাস নদী। একসময়ের খরস্রোতা তিতাস এবং এর শাখাগুলো এখন মুরাদনগরবাসীর দুঃখ। শুকনো মৌসুমে কোথাও পানির দেখা মেলে না। এ সময় তিতাসের বুকে ইরি-বোরো ধানের আবাদ করা হয়। অন্যদিকে বর্ষা মৌসুম শুরু হলেই দুই কূল ছাপিয়ে কয়েক লাখ মানুষকে জলাবদ্ধ করে রাখে এ নদী।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, নদীটির উৎপত্তি হয়েছে ভারতের অঙ্গরাজ্য ত্রিপুরায়। সেখানে বাংলা ভাষায় হাওড়া এবং স্থানীয় কোকবোরোক ভাষায় সাইদ্রা নামে নদীটির নামকরণ করা হয়েছে; কিন্তু বাংলাদেশে নদীটি তিতাস নামেই পরিচিত।
ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় উৎপত্তি হয়ে নদীটি বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া উপজেলা দিয়ে প্রবেশ করে। পরে শাহবাজপুর টাউন অঞ্চলের সীমানা ঘেঁষে আরো দক্ষিণ দিকে ভৈরব-আশুগঞ্জের সীমানা ঘেঁষে মুরাদনগর ও হোমনা উপজেলার মধ্য দিয়ে গিয়ে বৃহত্তম নদী মেঘনার সঙ্গে একীভূত হয়ে যায় তিতাস।
তিতাসের গড় দৈর্ঘ্য প্রায় ৯৮ কিলোমিটার। তিতাস ও মেঘনাকে ঘিরে যুগ যুগ ধরে অনেক উপকথা প্রচলিত আছে। এর মধ্যে একটি উপকথায় বলা হয়েছে, তিতাস মেঘনার কন্যা বা মেয়ে। তিতাসের তীরবর্তী এলাকায় বসবাসরত জেলে সম্প্রদায় ও তাদের জীবনসংগ্রামকে কেন্দ্র করে ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ শিরোনামে অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি উপন্যাস রচনা করেছেন বিখ্যাত ঔপন্যাসিক অদ্বৈত মল্লবর্মণ। পরবর্তীকালে ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ শিরোনামে বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক ঋত্বিক ঘটক চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন।
উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, সারা বছরে এ উপজেলায় তিন প্রকারের ধান চাষ হয়। এর মধ্যে বোরো ১৭ হাজার ৭৫০ হেক্টর, আউশ সাত হাজার ৫০০, রোপা আমন পাঁচ হাজার ৯৯০ হেক্টর। সর্বমোট ৩১ হাজার ২৪০ হেক্টর জমি চাষ করেন কৃষক। উপজেলার রামচন্দ্রপুর উত্তর ও শ্রীকাইল ইউনিয়নে দুই হাজার হেক্টর জমি অনাবাদি থেকে যায় সেচ ব্যবস্থার অভাবে। অথচ এক সময় তিতাস পানির প্রয়োজনীয়তা মেটাতো।
সূত্র: আজিজুর রহমান রনি, মুরাদনগর (কুমিল্লা), কালের কন্ঠ, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯।