হ্যাঁ, স্বপ্ন দেখছি ।আর সেই স্বপ্ন ঘুমিয়ে নয়।জেগে থেকে।ড.এ পি জে আব্দুল কালাম যা একবার বলেছিলেন তার বাংলা ভাবানুবাদ করলে দাঁড়ায় ” মানুষ ঘুমিয়ে যেটা দেখে সেটা স্বপ্ন নয়।যা মানুষকে ঘুমোতে দেয়না সেটাই স্বপ্ন ।” প্রকৃতি ও পরিবেশের উপাদানই তো নদী।তাই নদী ও পরিবেশের পাঠশালা গড়ার ভাবনাটা বেশ ভাবাচ্ছে।কিন্ত কেন?সে কথাতেই আসছি। ভারতবর্ষ আমার দেশ।নদীমাতৃক বলতে যা বোঝায় আমার দেশ তাই।আবার সম্প্রতি যে দেশটিকে খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে সেটাও তো আমার দেশ।না দেশভাগ না হলে যে একই দেশ থাকতো সেটা শুধু বলছি না আমার বাবার জন্ম সে দেশে।এককথায় আমার শেকড় সেখানেই।প্রকৃত নদীমাতৃক বলতে যা বোঝায় বাংলাদেশকে সেটাই বোঝায়।
নদীচিত্র দুই দেশে একইরকম ছিলো অন্তত: কিছুদিন আগেও।এখনও কমবেশী একই আছে।তবে হ্যাঁ, নদীকে জীবন্ত সত্বা হিসাবে ঘোষনা করার পর বাংলাদেশ সরকার নদীদূষণ ও নদীদখল মুক্ত করতে যে উদাহরণ যোগ্য কাজ শুরু করেছে তার জন্য কোন প্রশংসাই যথেষ্ট নয়।এরও কিছুদিন আগে ভারতবর্ষে উত্তরাখণ্ড হাইকোর্ট গঙ্গা ও যমুনা নদীকে জীবন্ত সত্ত্বা হিসাবে ঘোষনা করেছে।তবে, এটা অস্বীকার করার কোন জায়গা নেই যে নদী ও পরিবেশকে ঘিরে গড় সচেতনতা কিন্ত খুব বেশী এখনো এগোয়নি। একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দিতে বাংলাদেশের একটি সমুদ্রসৈকত কুয়াকাটা যাচ্ছিলাম।সেবারই প্রথম বিখ্যাত লঞ্চ ভ্রমণ।সদরঘাট থেকে পটুয়াখালির উদ্দেশ্যে ছাড়বে বিকেলে এম ভি সুন্দরবন- আট।তার আগে বুড়িগঙ্গার অনেক কথা শুনেছি।ঢাকা কে ঘিরে থাকে যে নদীগুলি তার মধ্যে অন্যতম বুড়িগঙ্গা।কিন্ত এ কি? কুচকুচে কালো জলে পরিপূর্ণ বুড়িগঙ্গার জল।ঢাকার বর্জ্য -আবর্জনা ও ময়লা জল সরাসরি বুড়িগঙায় মিশছে দেখলাম।শিল্প আবর্জনাও এই নদীতে মিশছে- স্থানীয়দের সাথে কথা বলে এটাই জানতে পারলাম।এর মধ্যেই মানুষজন নদীকে বিভিন্ন ভাবে ব্যবহার করছে সেটাও দেখলাম।কারোই কোন হেলদোল নেই।এমনকি লঞ্চের যাত্রীগনও নোংরা করছেন বুড়িগঙ্গাকে। কেকের প্লাস্টিক, চিপসের প্যাকেট, কলার খোসা, সিগারেটের বাট কি নেই সেখানে। লঞ্চের যাত্রীদের কোন সচেতনতা নেই, তাদের সচেতন করবারও কোন প্রয়াস নেই।
কেমন হয় বলুন দুই দেশের নদীগুলির জন্য নদীর পাড়েই পাঠশালা হয়? নদী গুলোর অবস্থা নিয়ে ভারতবর্ষ ও বাংলাদেশে যারা কাজ করছেন, সমস্যাগুলিকে চিহ্নিত করছেন, সমাধানের পথ বাতলে দিচ্ছেন তাদের সাথে বিভিন্ন ভাবেই কথা হয়, মতামত আদানপ্রদান হয়। রিভার বাংলার মাধ্যমে তাদের কাছেও প্রস্তাব রাখছি যে আসুন আমরা নদীর বুকে পাঠশালা গড়ে তুলি।কি থাকবে সেখানে? কোন চার দেয়ালের মধ্যে মধ্যে যে সেই পাঠশালা গড়ে উঠতেই হবে এমনটা নয়। নদীর প্রধান ঘাট যেটা, সেখানে বা তার পাশেই সেই নদীটার নাম, ঐতিহ্য, স্বাধীনতা ও অন্য লড়াইতে নদীটির ভূমিকা (যদি থাকে) উৎস, মোহনা, দৈর্ঘ্য, বিস্তৃতি, নাব্যতা, শাখানদী, উপনদী, নদীটি কোন্ কোন্ অঞ্চলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে,কি কি মাছ আগে পাওয়া যেত, কি কি মাছ এখন পাওয়া যায়, কোন্ কোন্ ধরনের নৌকা ব্যবহৃত হয় সেই নির্দিষ্ট নদীটিতে, কি ধরণের জাল, নদীকে নিয়ে সরকারী ও বেসরকারী সচেতনতাধর্মী কাজের ছবি, নদীটির সাথে সংযুক্ত খাঁড়ির নাম, নদীতে ঘিরে কি করণীয়, কি করণীয় নয় ইত্যাদি নিয়ে চিরস্থায়ী একটা প্রদর্শন রাখার ব্যবস্থাই হলো নদীর পাঠশালার ভাবনা।
যেন কেউ নদীর কাছে এলেই জেনে নিতে পারে নদী সম্পর্কে, বুঝে নিতে পারে সচেতনতার বার্তা। নদীর একটা পাঠ, যে পাঠ নদী রক্ষায় তার ভূমিকা, নদীচেতনায় উদ্বুদ্ধ হতে, উৎসাহিত হতে সাহায্য করবে। নদীর বুকে একটা ডাস্টবিন থাকবে। যেখানে মানুষ নোংরা আবর্জনা ফেলবে নদীতে না ফেলে আর প্রতিমুহুর্তেই তা পরিষ্কার করা হবে। কেমন হবে বলুন তো? এই স্বপ্ন দেখি।
আর ঐ যে বললাম এগুলো জেগে দেখি। আর দেখতে পাই এই উদ্যোগ গুলো নাগরিকরা নিচ্ছেন তাদের প্রিয় নদীর জন্য। বলা হয় যে কোন শুভ কাজ ঘর থেকেই শুরু করা উচিত ।আমাদের একেবারে ঘরের কাছে আত্রেয়ী আছে।তা দিয়েই শুরু হোক না হয়। তারপর তা ছড়িয়ে পড়ুক অগণিত মানুষের মধ্যে।ভারতবর্ষ আর বাংলাদেশের অসংখ্য নদীর বুকে গড়ে উঠুক, গড়ে উঠছে নদীর পাঠশালা।হ্যাঁ, স্বপ্ন দেখছি আমি।আর সেটা জেগে জেগে।