সুরাইয়া খানমের কবিতা : ও ঘূর্ণি ও জলোচ্ছ্বাস

ও ঘূর্ণি, ও জলোচ্ছ্বাস, নদীকে আহত তুমি কোরো না, কোরো না! কত যে লাঞ্ছনা, ক্লেদ, বুকে নিয়ে নীরবে বইছে নদী নদী তো সতিন নয় কারো, তুমি ফিরে ফিরে কেন ছুরি মার? ও ঘূর্ণি, ও জলোচ্ছ্বাস, ও দাপট, ওই ত্রাস নদীকে দিও না তুমি, নদীকে বইতে দাও একাকী মেখলা ‘পরে হেঁটে যেতে দাও। বুকে তার দুলে থাক পালতোলা জলতরুদল, ওকে আর ছিনিয়ে নিও না ঘূর্ণি, নদীকে আহত তুমি কোরো না, কোরো না! কচুরিপানা ও দাম, শ্যাওলা সবুজ ঘাম রাখতে দাও, থাকতে দাও ওর নিজ পায়ে, ওর বুকে খেলে যাক জলসাপ, শুশুক…

পাপপুণ্যের বাস্তব অবাস্তবতায় ব্রম্মপুত্রের মাহাত্ম্য : রুখসানা কাজল

পাপপুণ্যের

মহামুনি শান্তনু। বুকের উষ্ণতায় দুহাতে জড়িয়ে নিয়েছেন সদ্য ভূমিষ্ঠ এক জাতককে। শ্রদ্ধা ভক্তি এবং অজানা এক শুভকামনায় উদ্বেল তার মন। ঈশ্বরের লীলা বোঝা বড় দায় ! তার স্ত্রী অমোঘার গর্ভে স্রষ্টা ব্রম্মার ঔরসে জন্ম হয়েছে এ সদ্য জাতকের। শিশুটি একটি জলপিন্ড। শান্তুনু পরম মমতায় ব্রম্মার পুত্রকে নিয়ে চলে আসেন হিমালয়। কৈলাস, গন্ধমাদন, জারুধি ও সম্বর্তক নামে চারটি পর্বত। যেন চারজন মা ভূমিতলে মেলে দিয়েছেন তাদের নিরাপদ মাতৃক্রোড়। বড় পবিত্র আর পূণ্য এই ভূমিতল। আকাশে বাতাসে ধ্বনিত হচ্ছে মঙ্গলবার্তা। শান্তুনু শিশু জলপিন্ডকে অত্যন্ত সযত্নে এদের মাঝখানে সৃষ্ট জলকুন্ডে রেখে ফিরে আসেন…

রাজেশ ধর এর গল্প-  ‘জলমুক্তি জিন্দাবাদ’

রাজেশ ধর এর গল্প-  ‘জলমুক্তি জিন্দাবাদ’

‘দাদ্দু, জলমুক্তি কী গ!’ চুপ করে থাকে বিষাণ সিং। কাঁধের ছেঁড়া রঙচটা লাল গামছা দিয়ে পিঠটা ঝেড়ে নেয়। মনে হয় দু-চারটে ডেউয়া পিঁপড়ে ঘুরঘুর করছে। এখনো কামড়ায়নি। বড্ড বিষ, জ্বালা করে! ‘হেই দাদ্দু, এই গামছাটো হামাক দিবা কিন্তুক। হামি ইটো লিয়ে শাড়ি বানাইবো।’ একটুখানি হাসে বিষাণ। আবার তাকিয়ে থাকে ‘দামোদরজীর’ দিকে। বর্ষা এসে গেছে, তাও দু’সপ্তাহ। কিন্তু আকাশে কালো মেঘ কই! ‘দামোদরজীর’ বুকে জল নেই। তিন মাইল চওড়া নদীর বুকে আড়াআড়ি হাত তিরিশেক জল। তার মাঝে হাত নয়-দশ গভীর, মানে বুক সমান জল। তবে স্রোত আছে। লোকজনেরা নদীকে জানে। এখানে,…

ফয়সাল আহমেদ সম্পাদিত নদী বিষয়ক বই- ‘প্রিয় নদীর গল্প’ প্রকাশিত

ফয়সাল

রিভার বাংলা সম্পাদক ও  লেখক, গবেষক ফয়সাল আহমেদ সম্পাদিত নদীবিষয়ক বই ‘প্রিয় নদীর গল্প’ প্রকাশিত হয়েছে। সৃজনশীল প্রকাশনা সংস্থা ‘জাগতিক প্রকাশন’ বইটি প্রকাশ করেছে। অবিমৃশ্যকারীদের দুর্বুদ্ধিতে সাময়িক লোভ ও লাভের হিসেব বড় করে দেখতে গিয়ে স্বাভাবিক নদীগুলোর সঙ্গে যথেচ্ছচারের ত্রæটি করেনি সভ্য মানুষ! আরও মর্মান্তিক যে, উন্নয়নের নামে বিরামহীন আত্মঘাতী নদী-শাসন! অথচ নদ-নদীর ইতিহাসই বাঙলার ইতিহাস। নদ-নদীর তীরে তীরে মানব সভ্যতা অগ্রগতির চিহ্ন এঁকে রাখে; মানুষের বসতি, কৃষির পত্তন, প্রাম-নগর, বাজার-বন্দর, শিল্প-সাহিত্য, ধর্মকর্ম সবকিছুরই বিকাশ ঘটায়। দুর্বৃত্তদের বিপরীতে কল্যাণকামী মানুষের মননে রক্তক্ষরণ সচল রাখতে পারছে না নদীর নাব্যতা। আশাবাদী মানুষও…

নদী সরে গেলে ।। ইন্দ্রনীল সুমন

ইন্দ্রনীল

নদী সরে গেলে ।। ইন্দ্রনীল সুমন একটানা বৃষ্টির শব্দে ঘোর লেগে গেলে অনুভব হয় নদী সরে গেছে নদী সরে গেছে, অভিমানে, আপন সন্তান ছেড়ে বাস্তু ছেড়ে আশা-আকাঙ্ক্ষা, স্নেহের আদর ছেড়ে সরে গেছে নদী পদচিহ্ন রেখে গেছে বাওরের বুকে হা-হুতাশ রেখে গেছে জলজ উদ্ভিদের গোপন ডেরায় বর্ণান্ধ কিশোরের আসমানী চোখে এঁকে দিয়ে গেছে সাতনরী হার, পাকা হাতে লিখে দিয়ে গেছে উপকথা-গান জুড়ে দিয়ে গেছে সুরে সুর বিষণ্ণ নুপুরের তালে নদী সরে গেলে কান্না সরে যায় প্রেম সরে যায় মানুষ সরে যায় একলা কিশোর শুধু বসে থাকে আসার আশায় নদী সরে গেলে…

অস্তিত্ব- নুসরাত সুলতানা

অস্তিত্ব- নুসরাত সুলতানা

গল্প  আনিস সাহেব ড্রাইভারকে হাঁক দিয়ে বলেন তার বিএমডাব্লিউ গাড়িটা বের করতে। আজ তিনি জমি দেখতে যাবেন। তার অন্তত পনের বিশ বিঘা জমি দরকার একসাথে। একটা ডুপ্লেক্স বাড়ি বানাবেন। দামী গাড়ি নিয়ে গেলে হাউজিং সোসাইটির লোকজন নড়ে-চড়ে বসে। টাকা কিছু বেশি নেয় নিক। জমি পেলে তিনি একটা মনের মতো বাড়ি করবেন। ছোট একটা পুকুর বানাবেন। তাতে পদ্ম ফোটাবেন। পাড়ে কিছু দেবদারু, ইউক্যালিপটাস আর থুজা গাছ লাগাবেন। পুকুরের চারপাশে বসার ব্যবস্থা করবেন তিনি। করবেন ছোট একটা দেশীয় সবজির বাগান। ছেলে-বউ, মেয়ে-জামাইরা আয়েশ করে থাকবে দেশে এসে। এছাড়াও ব্যাংক, তিনটা গার্মেন্টস, বেশকিছু…

নদী বিষয়ক কবিতা “আত্মীয়”- ফারুক মাহমুদ

কবিতা: আত্মীয় ১. আমি ঠিক এসে যাবো। নদী, তুমি কিন্তু অপেক্ষা করো না জানই তো সময়ের স্বেচ্ছাচার আঁট করে আছে রাত্রিগুলো ঢুকে যাচ্ছে অঘুমের দীর্ঘ কোলাহলে দিনের ব্যস্ততা থেকে ঝরে পড়ে মূল্যশূন্য ধূলো এর মধ্যে জারি হয় রোদনের খিন্ন প্রজ্ঞাপন কিছু কান্না জমে গেছে। নদী, বলো, কার কাছে কাঁদি আমার চোখের জল তুমি ছাড়া আর কেউ বোঝ!? ২. জলের নিঃশ্বাস থেকে পাওয়া যায় ছন্দশুদ্ধ গান স্বভাবে বাউল বটে, যেতে যেতে বহুদূর যায় কান্নার বিচিত্র শ্রেণি। নৈশব্দ ও শব্দপ্রকরণে অক্লান্ত জাগিয়ে রাখে বিষাদের নানারং আলো নদীকে আত্মীয় মানি। ওর ভাষা সর্বজনভাষা…

এক নদী গল্প- মুহাম্মাদ মিজানুর রশীদ শুভ্র

এক নদী গল্প- মুহাম্মাদ মিজানুর রশীদ শুভ্র

কবিতা: এক নদী গল্প না, আমি পুর্ব পরিকল্পিত প্রেম করিনি সে নদী ছিল কান্নার মতো স্বতস্ফূর্ত পার ভাঙা ছিল তার উচ্ছ্বাস না, কোন পরিকল্পনা করে নদী পাড় ভাঙেনি নদী গুলো খুব আহ্লাদ করে সবুজ গ্রামের গা ঘেষে থাকে তবুও তোমরা নদীতে বাঁধ দাও তোমরা পরিকল্পনা করে বাঁধ দাও আমি, আগে থেকেই সব ঠিক করে রাখিনি তোমাদের মনে বিশ্বাস ছিল না হয় তো শুধু মাটি জানে, যে মাটির কসম খেয়ে নদী চলে কতো শত বর্ষাকাল শুষে নি মাটি নদী কে শুষে না সে, অথচ তোমরা বাঁধ দিলে পরিকল্পনা করে যে বাঁধ…

নদীখেকোদের প্রতি- আমিনুল ইসলাম সেলিম 

সেলিম 

নদীকে হত্যা করে কীভাবে তোমরা হও সভ্যতার পতাকাবাহক? কর্পোরেট হাসি নিয়ে যত্রতত্র কী করে দাঁড়াও মাথা তুলে? নিলাজ এতোটা নাকি? এতোটাই? মাটিচাপা দিচ্ছো যারা নদীবুকে, করে যাচ্ছো প্রাণ ওষ্ঠাগত তোমাদের নামেও ফুটছে ফুল, ঝুলছে তিলকশোভা নানান রকম এর নাম সভ্যতা? আচানক! কী যে আচানক! নদীকে হত্যা করে, রসহীন করে দিচ্ছো দেশ নদীকে বন্দি করে, অপরাধী করে দিচ্ছো মনুষ্যবিবেক নদীকে রক্তাক্ত করে, প্রাণহীন করে দিচ্ছো প্রিয় প্রকৃতিকে তোমরা কি ভুলে গেছো মেসোপোটেমিয় দিন, নদীর সভ্যতা? ভুলেছো কি সিন্ধু নদের পাড়ে জীবনের প্রাচীন ফসিল? ভুলেছো কি তেরো ‘শ নদীর দেশ? যে দেশের…

কালীগঙ্গা ডেকেছিল ।। সন্তোষ কুমার শীল

কালীগঙ্গা

দেখতে দেখতে কালীগঙ্গার বুকের মধু উথলে ওঠে। ক’দিন যাবত থেকে থেকে দমকা বাতাস বইছিল। সকাল থেকে বৃষ্টির সাথে মিলে তা ঝোড়ো হাওয়া হয়ে বইতে শুরু করে। আর আশ্বিনের জড়সড় কালিগঙ্গা হঠাৎ ফুলে ফেঁপে ওঠে। সাগর থেকে বয়ে আনা বিপুল জলরাশি দু’কুল ছাপিয়ে নাচতে নাচতে জনপদের দিকে ছুটতে থাকে। হারাধন সারাদিন তার ঝুপড়িতে বসে ক্ষণে ক্ষণে কালীগঙ্গার রূপ পরিবর্তন দেখেছে আর নানা স্মৃতির জাবর কেটেছে। দিনটা তার ভাগ্যবিড়ম্বিত জীবনের মত একটা দুর্দিন। তখনো সাঁঝের আঁধার নামেনি। শেষ বেলায় এক পশ্লা বৃষ্টি হয়ে আকাশ কিছুক্ষণের জন্য পরিস্কার হয়ে উঠেছিল। একখানা ইঞ্জিনচালিত ছোট্ট…

মেঘভাঙা বৃষ্টি ।। ইন্দ্রনীল সুমন

ইন্দ্রনীল সুমন এর একটি নদী বিষয়ক গল্প  “মেঘভাঙা বৃষ্টি” পড়ুন রিভার বাংলা ডট কমে এক.  ডুলুং এখানে হলুদ বিনুনি কিশোরীর মতো, লাফিয়ে লাফিয়ে চলে, অকারণে উচ্ছল! এদিকটায় বোল্ডার বেশী, তাই ডুলুং এর জলের শব্দও বেশী| ডুলুং কথা বলে| নদীভাষায়| ইমন মজা পায়| বোঝার চেষ্টা করে নদীর ভাষা| যেন সাংকেতিক কোনো ভাষায় নদী কিছু বলতে চাইছে ইমনকে, আর ইমন মন দিয়ে উদ্ধারের চেষ্টা করছে তার অর্থ| প্রথম যেবার এসেছিল তখন ডুলুং এর কথা একেবারেই বুঝত না, আজকাল অল্প হলেও বোঝে| এই যেমন ডুলুং এখন বেলা বারোটার রোদমেখে খুশী খুশী মুখে ডাকছে…

লাবণ্যবতী একটি স্রোতের নাম ।। সুস্মিতা চক্রবর্তী

লাবণ্যবতী

গল্প সকাল… দু পায়ের ফাঁক দিয়ে মুন্ডুটা উলটো করে ঢুকিয়ে মাঝেমাঝে আমি আকাশ দেখি। একঘেয়ে লাগলে আর কাজ না থাকলে। খালের উপর কংক্রিটের ব্রীজের ফোকর দিয়েও দেখি। আর দেখি মাঝেমাঝে রাত্তিরে ঘুম ভেঙে গেলে আমাদের ঘরের টালির ফুকো দিয়ে। এইসব উলটো, গোলাটে, তেরচা আকাশগুলোর কথা অবশ্য কাউকে বলি না। আর বলবই বা কাকে। একবার লিটনকে বলতে গিয়েছিলাম। আমায় একটা ঠেলা দিয়ে বললে ‘ স্লা বাপের জম্মে শুনিনি। কোদ্দিয়ে এসব পাস গুরু।’ লিটনটা ওইরকম। আমার চেয়েও দু বছরের ছোট। দেখলে কেউ বুঝতেই পারবে না যে এরম সব কথার ফুলঝুরি মুখে। তা…