তিনি ছিলেন নদীর সন্তান 

সন্তান 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। আজ তাঁর জন্মদিন। আজ আরও একবার অনুভব করলাম প্রবল ভাবে যে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন আক্ষরিক অর্থেই নদীর সন্তান। তাই লেখার তাগিদ অনুভব করলাম।যদিও এটা খন্ডাংশ বলাই শ্রেয়। নদীর সন্তান না হলে কেউ এভাবে নদীকে তাঁর চিন্তা- চেতনা-ভাবনা- লেখায় জড়িয়ে নিতে পারেন?!  অথচ কি আশ্চর্য! তাঁর জীবনের প্রথম ভাগে নদীর সাথে তার সংযোগ আমরা সেই অর্থে পাইনা। নদী প্রবাহিত হয় সর্পিল গতিতে, আঁকাবাঁকা পথে। আমাদের জীবনের পথও কি তেমন নয়? বিচিত্র সব ইতিহাস যেন লুকিয়ে আছে নদীর সব বাঁকে বাঁকে। একটু যদি দৃষ্টি প্রসারিত করি তাহলে দেখবো যে দুই…

বরাকের স্মৃতির ঊর্মি : মো. আজাদ বারী শিপু 

বরাকের স্মৃতির ঊর্মি ।। মো. আজাদ বারী শিপু ।। তব যৌবনের সেই ঊর্মি জাগায় স্মৃতি হৃদয়ে সতত তব ভ্রমি। তব জলধারা পাহার হতে করতো আগমন, তব শীতল জলে কিশোরমনে পেতাম দরশন। আজ তুমি মৃত্যু মুখে।। হে স্নেহময়ী বরাক! তব উপর শোষণে মুই নির্বাক ভূ’তে আমি যে দুর্বল একজন যদি সাথে থাকিতো কতজন, বাঁচাতাম তোমায়। ওরা আপনা স্বার্থপর খাবে গাছ, ডাল, পল্লব রাখবে না তো জর, চলছে তব উপর জুলুম অত্যাচার কতক ভ্রান্তি, কবিতা লিখে দিতে পারবো কি শান্তি? শান্তি নাইবা পাও, লিখবো কবিতা তব অধিকার মূলে, ভাসিয়ে দিবো কচি হস্তে…

আন্তর্জাতিক নদী কৃত্য দিবসে তুহিন শুভ্র মন্ডল এর কবিতা- আত্রেয়ী, ও আমার আত্রেয়ী

আন্তর্জাতিক নদী কৃত্য দিবস

একটা নদী চেতনায় এসে মেশে সে নদীর বুকে যখন সূর্য ওঠে, সে যে কি অনিবার্য আলো! সে নদীর বুকে যখন সূর্য অস্ত যায়, সে যে কি অপরূপ দৃশ্য! সে আমার আত্রেয়ী, আমার প্রাণের আত্রেয়ী, আমার মনের আত্রেয়ী প্রতি সকালে সে নদীর গায়েই তো হেলান দিয়ে বসে প্রতি বিকালে, প্রতি সন্ধ্যায় ওর কাছে গিয়েই তো মনের কথা বলি সেদিন সকালেও গিয়েছিলাম প্রিয় নদীর কাছে কুয়াশার চাদরে নিজেকে জড়িয়ে নিয়েছিল সে। ওরই মাঝে দেখলাম গুরুদয়ালকে। গুরুদয়াল হালদার গত চল্লিশ বছর ধরে আত্রেয়ীর ওর মা। ওকে লালন করে পালন করে পেটের ভাত দেয়…

আলী আকবরের নস্টালজিয়া : সৈয়দ কামরুল হাসান

আলী

      নিজের দেশ, জন্মভূমি বিশেষত: ফেলে-আসা সময় নিয়ে আলী আকবরের কোন বাড়তি আবেগ নাই। অন্ত:ত দীর্ঘকালের প্রবাস জীবনে নিজের সাথে সে যে একটা রফা করতে পেরেছে অর্থ্যাৎ আর সব প্রবাসীর মত রুটিন মাফিক স্মৃতিচারণা আর দেশপ্রেমের মড়া কান্নায় যে সে শামিল হয়নি এ-নিয়ে প্রচ্ছন্ন একটা গর্বও আছে তার। কিন্তু এই বার এই মফস্বল শহরটিতে তার জন্মভিটায় এসে সে যেন কিছুটা খেই হারিয়ে ফেলে। আলী আকবর নিজেই নিজের কাছে একটু যেন লজ্জিত ও বিব্রতও বোধ করে অতীত স্মৃতিচারণায় তার কৌতুহল ও আগ্রহের বাড়াবাড়ি দেখে। অবশ্যি একদিক থেকে দেখলে এই…

কবি উপল হাসানের কবিতা “নরসুন্দার জৌলুস”

কবিতা

নরসুন্দার জৌলুস উপল হাসান                                           …………………………………………………………………………………………………………. বাঁশ পাতার পথটা পেরোলেই মনিপুর ব্রিজ…. তাকালেই আকাশে তারা’র মেলা ব্রিজের তলে বিধবার শুকনো ঠোঁটের মতোন নরসুন্দার বিষাদ… বিষন্ন নৌকায় ছেঁড়া জাল জেলেদের বিবর্ণ দিনের প্রতীক হয়ে ঝুলছে…. ছেলেবেলায় এখানেই দেখছি কত বেদেনীর নৌকা, বেদেনীর শাড়ি পরা, সর্পিল হাঁটা, সার্কাসের জীবন্ত হাতি- বাঘ-ভাল্লুক, স্কুল পালিয়ে কেটে যেত বেলা সেইতো আমার রুপকথার নরসুন্দা, একটুখানি বাঁক দিলেই মেলা বাজার দেশ বিদেশের কত সওদাগরি নৌকা ভিড়েছে, তামা…

গল্প : পদ্মার সাথে বিনিদ্র বাসর

গল্প

উচ্চ মাধ্যমিক পেরিয়ে স্নাতকের করিডোরে পা রাখলো অমিত। স্কুল-কলেজের সেরা ছাত্র সে। এরইমধ্যে প্রাচ্যের একটি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার জুনিয়র অফিসার হিসেবে চাকরির দরখাস্ত করেছিল। কলমের জোরে নিয়োগপত্র ও দ্রুত চলে আসে। যৌথ পরিবারের সবাই খুশি। এতো ভাল চাকুরী সহজে মিলে না। অমিত নিয়োগপ্রাপ্ত হয় ধান নদী খাল এই তিনে বরিশাল জেলায়। ২০০৩ সালে তখন বরিশাল জেলা ছিলো। ছামান গোছগাছ করে নিয়োগপত্র সংঙ্গে করে নরসুন্দাপাড়ের অমিত পাড়ি দিলো ধানসিঁড়ির উদ্দেশ্যে। ঢাকার সদরঘাট থেকে বুড়িগঙ্গা হয়ে পদ্মার উপর দিয়ে সারারাত লঞ্চে বরিশাল। নভেম্বরের মাঝামাঝি শীতল পদ্মার বুকে পারাবত-১ নামক লঞ্চটির ছুটে চলা…

ইন্দ্রনীল সুমন এর একগুচ্ছ কবিতা

কবি ইন্দ্রনীল সুমন এর একগুচ্ছ কবিতা

নদীর গান ……………………………………. নদীর কাছে হাত পেতেছি, নদী বলল এসো, চরায় বোসো, খানিক গল্প করি, চাইলে ঘর বাঁধতে পারো, জোয়ার এলে পা ভিজিয়ো আলতো করে, কলঙ্ক নয় রাখবো আমি চোখের আড়াল, তোমার বুকে তখন চাঁদের কাঞ্জিভরম, আখতারীবাই বসত করে কান্না জুড়ে পান্না চুনী তোমার চোখে, লাব-ডুব-লাব লাব-ডুব-লাব, শব্দটুকু ঝরতে থাকে, ঝরতে থাকে, দিগন্তে ঐ রাত্রিজুড়ে…… যাপন ……………………………………… লাল জামাটা উড়িয়ে দিলাম চৈতি মেঘে যা উড়ে যা যেমন তেমন ভীষণ বেগে সমুদ্রসাত চৌদ্দ নদী তোর সাথে যাক শুনছি নাকি তোর এখনও দারুণ দেমাক! অযুত পাখি রাত জোনাকি আঁকছে ছবি পলাশফুলে আবির…

সুবর্ণরেণু সুবর্ণরেখা- নদী তীরবর্তী পরিবারের নদী ছন্দিত উপন্যাস

নলিনী বেরা’র ‘সুবর্ণরেণু সুবর্ণরেখা’ উপন্যাস

এবছর আনন্দ পুরস্কারে সম্মানিত নলিনী বেরা’র “সুবর্ণরেণু সুবর্ণরেখা” নিয়ে নদী ও পরিবেশ চিন্তক তুহিন শুভ্র মন্ডল এর অনুভবি বিশ্লেষণ। “….. আমাদের গ্রামের উত্তরে নদী সুবর্ণরেখা, তার আগে ‘হুড়ি’, ছোটোখাটো পাহাড়। ওই পাহাড়ে দাঁড়ালেই ‘তল্লাট’ চোখে পড়ে। নদী, নদীজল, নদীবালি…” নদীর প্রসঙ্গ এই ভাবে শুরু করছেন নলিনী বেরা, প্রান্তিক জনপদের কাহিনীকে যিনি বুকে ধারণ করেছেন, উৎস থেকে মোহনায় পৌছানোর পর যখন সামনে দেখেন শান্তি পারাবার তখন যার মনে পড়ে যায় শেকড়ের কথা সেই নলিনী বেরা। নাকি ললিন?! উপন্যাসের ললিন আর নলিনী কি একই? সেই নলিনী যার জন্ম পশ্চিমবঙ্গ- ওড়িশা – বিহার সীমান্তের…

কবি ইন্দ্রনীল সুমন এর একগুচ্ছ কবিতা

কবি ইন্দ্রনীল সুমন এর একগুচ্ছ কবিতা

বাঁওড় ………….. ইছামতী পাশ দিলে রোদেজলে ঝিলমিল বাঁওড়ের বুক শুনেছি নদীর না কি মৃত্যুদিন হয় শোকসভা, ফুলমালা ধূপগন্ধে স্মৃতি দু-মিনিট নীরবতা, মৃদু কাশি, ব্যস, ঠিক আছে! মানুষ পাশ দিলে, মন অমরায়, পবিত্র ঘণ্টাধ্বনি মৃদুতর সুর নিয়ত বাজতে থাকে, স্মৃতির জীবন দীর্ঘ হয়, দীর্ঘতর অবহেলা ঘরে, ধূলির বসন! নদী তার ছেড়ে যাওয়া জলচলে রাখে আপনার কীর্তিকথা, সুখ শোক হাসি, আনন্দ হতাশার চূর্ণকুন্তল… স্মৃতি বড় অসহায়, অমরতা নিয়ে, এ ডালে সে ডালে বসে, শাপগ্রস্ত ফিঙে! ……………………………………………………… মোহনিয়া ………………. স্বপ্নে এক নদী আসে কেন? ভৈরবী ভোরে? অহেতুক জলছুঁই খেলাধুলা শেষে ও মোর বালকদিন…

আফজল হোসেন আজম এর কবিতা “নদীকথা”

পূবেতে বন্দনা করি জগৎ বন্ধু ভানুশ্বর নিধিরবি উঠে তুমি বিশ্ব করো যে পসর। পশ্চিমে বন্দনা করি মক্কা ও মদিনায় দয়াল নবী শুয়ে আছে নয় কারো যে অজানা। দক্ষিনে বন্দনা করি বঙ্গোপ সাগর যে সাগরে বাইয়া খাইতো চান্দু সওদাগর। উত্তরে বন্দনা করি হিমালয় পর্বত যেথায় ঋষি মনি ঠাঁকুর সদায় থাকতো ব্রত। এইবারে নদ- নদীর কথা যাবো তোলে তারা সবি মানবস্বত্তা এ ভূ- মন্ডলে। সৃষ্টিকর্তার অপার লীলা নদ ও নদী বসুন্ধরা রুগ্ন হবে তাদের হারাই যদি। হিমালয়ের হিমবাহে আসিলো মা গংঙ্গা মায়েরকোলে শুয়ে আমরা আজ চতুরঙ্গা। পদ্মভূষণ করলো মোদের কণ্যা তারি যমুনা…

তরুণ কবি সৌমেন মন্ডল এর কবিতা “এক যে ছিল নদী”

এক যে ছিল নদী ছলাৎ ছলাৎ ঢেউ তুলত রোজ পানসি নৌকা ভাসিয়ে দূরের যাত্রী হতা‌ম জলে কান পাতলেই শোনা যেত মাছেদের কথোপকথন কত নিঃসঙ্গ বিকেলে মন খারাপের পর্দা খসে হু হু করে ঢুকেছে বসন্ত বাতাস অতঃপর উন্নয়নের ধ্বজাধারী ধর্ষকদের গলায় শোনা যায়—মাইকটেস্টিং, হ‍্যালো…হ‍্যালো চিৎকার, শোরগোল চলে ক্রুশকাঠে প্রথম পেরেক সাঁটা এখন ঘ‍্যোৎ ঘ‍্যোৎ শব্দে স্তনবৃন্তে যান্ত্রিক ক্লিপ লাগিয়ে শুষে নিচ্ছে বুকের সব রক্ত গর্ভবতী নদীর সমস্ত শরীর জুড়ে চলছে সারি সারি কংক্রিটের থাম গাঁথা অতীতের ছাল ছাড়িয়ে নদীর পাড়ে দাঁড়ালেই দেখি— চাপ চাপ রক্তে ভিজে গেছে চেনা উঠোন। ধূলো ঝেড়ে…

কবিতা : শাখা বরাকের আর্তনাদ- মো. আজাদ বারী শিপু

কুশিয়ারায় জন্ম নিয়ে ছিলাম আমি সুখে, ভরা যৌবন জোয়ার ছিল আমার দেহে। বুকে ছিল হাজার প্রজাতির মাছের আনাগোনা, মাছ ধরিয়া উদরপূর্তি করতো মানুষজনা। জল ছিল মোর কানায় কানায় ডেউ ছিল মোর বুকে, মোর জলে শ্বস্য ফলায়ে পারের মানুষ থাকতো মহা সুখে। উজান থেকে ভাটির দিকে অবাধ ছিল যাওয়া আসা,  স্বাধীন যাত্রায় বাধ সাজিলো কিছু মানুষ নামের সর্বনাশা। বুকে আমার বাঁধ বাঁধিল করলো দালান ঘর, যৌবন জুয়ার থামিয়ে দিল মানব নামের লোভী স্বার্থপর। বাঁচাও আমায় ওহে মানব বাঁচতে বড় স্বাদ, ভেঙ্গে ফেলো দালানকোঠা তুলে ফেলো বাঁধ। তবেই হারানো যৌবন আসবে আবার…