নদীর গান
…………………………………….
নদীর কাছে হাত পেতেছি,
নদী বলল
এসো,
চরায় বোসো, খানিক গল্প করি,
চাইলে ঘর বাঁধতে পারো,
জোয়ার এলে
পা ভিজিয়ো আলতো করে,
কলঙ্ক নয় রাখবো আমি চোখের আড়াল,
তোমার বুকে তখন চাঁদের কাঞ্জিভরম,
আখতারীবাই বসত করে কান্না জুড়ে
পান্না চুনী তোমার চোখে,
লাব-ডুব-লাব লাব-ডুব-লাব,
শব্দটুকু ঝরতে থাকে, ঝরতে থাকে,
দিগন্তে ঐ রাত্রিজুড়ে……
………………………………………
লাল জামাটা উড়িয়ে দিলাম চৈতি মেঘে
যা উড়ে যা যেমন তেমন ভীষণ বেগে
সমুদ্রসাত চৌদ্দ নদী তোর সাথে যাক
শুনছি নাকি তোর এখনও দারুণ দেমাক!
অযুত পাখি রাত জোনাকি আঁকছে ছবি
পলাশফুলে আবির গুলে রঙীন হবি?
উড়ুক হাওয়া নৌকো বাওয়া দে তুলে পাল
ঝড়ের মাতন স্বপ্নযাপন আজন্মকাল!
……………………………………..
পথ শেষে নিভু নিভু চায়ের দোকান
আলসে কুকুরছানা ল্যাজমুড়ে ঘুম
বাতাসে ধুলোর পাক, বুনোগন্ধ এলো
যেন কতদিন পরে বন্ধু এসেছে
একথা সেকথা ঘুরে ভাটিয়ালি গান
পাড় খোঁজে, নিরিবিলি আধভাঙা পাড়,
শুকোয় রঙিন শাড়ি, ঘাসবিছানায়
বন্ধু, তোমার চোখে মেঘলা দুপুর
পুরনো নদীর সাথে আলাপচারিতা
এভাবেই চালু থাকে হেলায়ফেলায়
যত রঙ ঢেলে দিলে পশ্চিমাকাশে
তুমি সেই ভোলাভালা ড্রইং টিচার!
ফিরে আসে সব নদী, আপন আলয়ে
সব রঙ শুষে নেয় শকুন ডানায়
ভালবাসা, হতচ্ছাড়া গাভীটির মতো
পূর্ণগর্ভা হয়ে ওঠে বানভাসি দিনে
একদিন তোমার সাথে চলে যাব নদীর কাছে
……………………………………………………….
একদিন তোমার সাথে চলে যাব নদীর কাছে
নদী তখন ধানবিয়োনী মাঠের মতো
দুহাত ছড়ায় নিলাজ নারী ঘোমটা খুলে
রাস্তা আমার আল হয়েছে বুকটি চিরে
আমার নদী
শাড়ীর কুঁচি ঢেউ এর ফাঁকে নাচতে থাকা
সূর্যদীঘল চোখের পাতা, জল তিরতির
ইচ্ছেমত কাঁপছে যেন প্রথমদিনের
চড়ুইশিশু!
একদিন তোমার সাথে চলে যাব নদীর কাছে
একদিন তোমার সাথে, চলেই যাব, নদীর কাছে!
…………………………………………..
নদী তোমায় নৌকা দিলাম, সামলে রেখো
দু-পার ভাঙো হেলায় যখন, সহস্রজল,
কান্না হয়ে ভাঙ্গনমাসে, ভাসিয়ে দিলো,
ভাসিয়ে নিলো আড়াল-আদর, স্বত্বটুকু
জড়িয়ে থাকে নিক্তি মাপা, বিষাদ-নূপুর
বাজতে থাকে, বাজতে থাকে ছম্ ছমা ছম্
ভিতর ঘরে বাজতে থাকে, ডাকতে থাকে
ভিতর পাখি, শেকল খোঁজে আকুল আঁখি
বসন্ত দিন, অনন্ত ঋণ জমতে থাকে!
শুধবো কাকে? নদী আমার! নৌকা দিলাম
তোমার হাতে! সামলে রেখো!
………………………………………………..
নদীর জল মিষ্টি ছিল জানি
আমার কোনও নিজের নদী নেই
ঘুমপাড়ানী গানের হাতছানি
পাগল করে, হারিয়ে ফেলি খেই!
কর্ণে ছিল মাধবীলতা ফুল
ঝুমকো যেন মৃদু হাওয়ায় দোলে,
আমায় ঘিরে নাচে অযুত ভুল
ভাসিয়ে নিলো জীবন উতরোলে!
এই ঘাটেতে নিত্য বসে থাকা
পা ডুবিয়ে জলের গল্প শুনি—
জলছবিতে অযুত নীরবতা
সাধ্য কি বা! মুক্ত হাতে গুনি
ভালবাসা ডুব দিয়েছে ওই
নতুন কনে কাজলপেড়ে শাড়ি,
সোহাগ-হলুদ আদর মাখা মুখে
রোদের পাখা দিগন্তে দেয় পাড়ি!
সুবর্ণরেণু সুবর্ণরেখা- নদী তীরবর্তী পরিবারের নদী ছন্দিত উপন্যাস
কবি ইন্দ্রনীল সুমন এর একগুচ্ছ কবিতা
কবি ও লেখক। কলকাতার কলোনি অঞ্চল নেতাজীনগরে আজন্ম বাস তাঁর। বিজ্ঞানে স্নাতক। লিখছেন আশির দশক থেকে।প্রধানত লিটল ম্যাগাজিনেই লেখেন। যুগ্মভাবে প্রকাশ করেছেন ছোট পত্রিকা ‘অয়শ্চক্র’। কবিতার সংবেদনশীলতা ও ভাষা নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে তাঁর ভাল লাগে। কবিতা লেখা ছাড়া নাটক দেখা ও বেড়াতে পছন্দ করেন তিনি।