শিলিগুড়ির ভৌগলিক অবস্থানের গুরুত্ব কোনওভাবেই অস্বীকার করা যায় না। তাই অবধারিত ভাবেই তার নামের সাথে উত্তরবঙ্গের প্রধান শহর তকমা চলেই আসে। আমরা পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য নদী বাঁচাও কমিটির পক্ষ থেকে আমরা তাই উত্তরবঙ্গের প্রথম নদী ও জলাভূমি বাঁচাও কনভেনশনের জন্য বেছে নিয়েছিলাম শিলিগুড়িকে।
সেই শিলিগুড়ি যা আমার যৌবন- নদীর শহর। মহানন্দা বিধৌত শিলিগুড়িই ছিল আমাদের নদী ভাবনায় সম্মিলিত উদ্যোগের স্থান। রাজ্য নদী বাঁচাও কমিটির উদ্যোগে এবং শিলিগুড়ি পরিবেশ বাঁচাও মঞ্চ ও সবুজ মঞ্চের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদ সভাকক্ষে উপস্থিত হয়েছিল উত্তরবঙ্গের বিশিষ্ট নদী ও পরিবেশ কর্মীরা।
সম্প্রতি উত্তরবঙ্গের যে চারটি নদীর জল শুধু পানের নয়, স্নানেরও অযোগ্য বলে প্রকাশিত হয়েছে সরকারী রিপোর্ট তার মধ্যে মহানন্দার অবস্থা গভীর উদ্বেগজনক। বি ও ডি অর্থাৎ বায়োলজিক্যাল অক্সিজেন ডিমান্ড এবং কলিফর্মের মাত্রা মহানন্দার জলে দুশ্চিন্তার। নদীতে এখনও খাটাল দেখা যায়।নদীবক্ষে প্রাত:কৃত্য করার সংখ্যাও নেহাত কম নয়। শহরের নিকাশী নালার মুখ মহানন্দার মধ্যে। নদীর মধ্যে নামিয়ে গাড়ি ধোওয়া চলে অবিরত।ফলে তার মবিলও মেশে।
সমস্ত ধর্মীয় অনুষ্ঠানের পরেও নদীর হাল বেহাল হয়। নদী পার্শ্বেই শ্মশান ঘাট। ফলত তজ্জনিত দূষণও আছে। মহানন্দাকে দেখছি আজ থেকে পঁচিশ বছর আগে থেকে। নদীর বুকে যে যে ধরণের অত্যাচার চলে তার সমস্ত কিছুর সাথেই পরিচয় হয়েছে আমার। আগের থেকে এই নদীর অবস্থা খারাপই হয়েছে একথা বলতে পারি। কি বলছেন শিলিগুড়ি পৌর কর্পোরেশনের মেয়র? রাজ্য নদী বাঁচাও কমিটির পক্ষ থেকে আমরা দেখা করেছিলাম মেয়র অশোক ভট্টাচার্যের সাথে।
সঙ্গে ছিলেন সবুজ মঞ্চের সম্পাদক নব দত্ত, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য নদী বাঁচাও কমিটির পক্ষে শশাঙ্ক দেব, বিবর্তন ভট্টাচার্য, প্রদীপ চ্যাটার্জী, শিলিগুড়ি পরিবেশ বাঁচাও মঞ্চের পক্ষে যুগ্ম কনভেনর অনিমেষ বসু, পার্থ চৌধুরী,পলক চক্রবর্তী, মালদা নদী ও জলাভূমি বাঁচাও মঞ্চের পক্ষে মানস রায়, রুমা সরকার প্রমুখ।
যখন ন্যাশনাল গ্রীন ট্রাইব্যুনালের বিষয় উল্লেখ করে মহানঁন্দার দুরাবস্থায় সমাধানের জন্য কি ভেবেছেন জানতে চাওয়া হয় তখন এক এক করে এ যাবৎ উদ্যোগের কথা জানান।নিকাশী নালা গুলির মুখে নেট, ব্রীজের উপর থেকে কেউ যাতে কোন নোংরা আবর্জনা ফেলতে না পারে তার জন্যও নেটের ব্যবস্থা, গ্রীণ সিটি মিশনেও নদীকে ভাল রাখার ব্যবস্থা, নদীর পাশে বৃক্ষরোপন, গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যানের মধ্যেও মহানন্দা অ্যাকশন প্ল্যানের বিষয়টির অন্তর্ভূক্তিকরণের উল্লেখ করেন। মহানন্দার বুকে খাটাল এবং প্রাত: কৃত্যকারীদের সংখ্যাও প্রায় নেই বলে দাবী করেন তিনি।
কিন্ত পরিস্থিতি বলছে শিলিগুড়ি শহরের এক, দুই, তিন, চার, পাঁচ এই ওয়ার্ড গুলিতে এখনও খাটাল আছে।ছেচল্লিশ নং ওয়ার্ডে মহিষমারি নদীতে (মহানন্দার নিকটতম শাখা) বড় বড় ট্রাক নামিয়ে ধোওয়া হয়। এর ফলেও তো দূষণ হয় মারাত্মক।
আরো পড়তে পারেন….
নদী- জলাভূমি- পরিবেশ রক্ষায় জাগছে মানুষ
দখল আর দুষণে সয়লাব নরসিংদীর নদ-নদী
পরদিন রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের আঞ্চলিক অধিকর্তার কাছেও তুলে ধরা হয় মহানন্দার সামগ্রিক দূষণের বিষয়টি। প্রতিকার চাওয়া হয়। নদীকে ভাল রাখতে, তাকে দূষণ- দখল মুক্ত রাখতে যাবতীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবেন বলে জানান শিলিগুড়ির মেয়র অশোক ভট্টাচার্য এবং রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের উত্তরবঙ্গের আঞ্চলিক অধিকর্তা গৌতম পাল জানান। বিষয়টা তারা দেখবেন, সমাধানের চেষ্টা করবেন। রাজ্য নদী বাঁচাও কমিটির আহ্বায়ক হিসাবে বলতে পারি আগামীতে মহানন্দার সাথেই পঞ্চনই, ফুলেশ্বরী, সাহু, জোড়াপানি ইত্যাদি নদী নিয়েও আমরা নদী রক্ষার দাবী আরো জোরালো করবো। আমরা এই কাজে পড়ুয়াদের বেশী করে অন্তর্ভূক্ত করবো।