ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কাছে ব্রহ্মচারিনী পদ্মাবতীর চিঠি

ভারতের

শ্রী নরেন্দ্র মোদি
প্রধানমন্ত্রী, ভারত সরকার।

বিষয় : আপনার দ্বারা লিখিত ও মৌখিক প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরেও তা পূরণ না হওয়ায় এবং এব্যাপারে অনেক সংস্থা দ্বারা তার বাস্তবায়নে বাধা উপস্থিত করায় ক্ষুব্ধ মাতৃ সদনের সাধ্বী পদ্মাবতী দ্বারা ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯ থেকে তপস্যা শুরুর ঘোষণা।

মাতৃ সদন এক দিব্য আধ্যাত্মিক সংস্থা, যারা দুর্নীতি বর্জন এবং পরিবেশ রক্ষার জন্য কৃতসঙ্কল্প। আপনি জানেন যে, ২০১৮ সালে স্বামী জ্ঞানস্বরূপ সানন্দ কয়েকটি দাবি নিয়ে ১১১ দিন তপস্যার পরে এক রহস্যময় অবস্থায় আত্মবলিদান করেন। এর আগে ২০১১ সালে স্বামী নিগমানন্দ সরস্বতী হরিদ্বারে খনন মাফিয়াদের দ্বারা খুন হয়ে যান, হরিদ্বারের সরকারি প্রশাসন সেই হত্যাকাণ্ডে হাত মিলিয়েছিল। সানন্দজির দাবিগুলি নিয়ে ব্রহ্মচারী আত্মবোধানন্দজি ১৯৪ দিন তপস্যা করেন। কয়েকটি লিখিত ও মৌখিক প্রতিশ্রুতির ওপর দাঁড়িয়ে ব্রহ্মচারী আত্মবোধানন্দজির তপস্যার বিরতি ঘটে, এটা বলা হয়েছিল যে এই প্রতিশ্রুতিগুলি প্রধানমন্ত্রীর জ্ঞাতসারেই দেওয়া হয়েছে।

আপনার সম্মান এবং গঙ্গাজির প্রতি আপনার নিষ্ঠার পরিচয় জেনে আমরা তা বিশ্বাস করেছিলাম। আপনাকে অনেকগুলি চিঠি লেখা হয়েছিল যার মাধ্যমে আপনার কার্যালয় ‘জল শক্তি মন্ত্রালয়’-কে মাতৃ সদনকে দেওয়া লিখিত ও মৌখিক প্রতিশ্রুতিগুলি পালন করার কথা বলা হয়েছিল।

কিন্তু তার সামান্য অংশ কার্যকর করা হয় এবং অধিকাংশ প্রতিশ্রুতি বাদ থেকে যায়। যে অংশটুকু কার্যকর করা হয়েছিল তা আপনার ‘পরিবেশ অরণ্য ও আবহাওয়া পরিবর্তন মন্ত্রক’ (MOEF) এবং ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইবুনাল (NGT)-এর দুর্নীতিপরায়ণ ন্যায়াধীশ শ্রী রাঘবেন্দ্র রাঠোরজি লঙ্ঘন করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

এদিকে আমাদের পরম পূজনীয় শ্রী গুরুদেব স্বামী শিবানন্দজিকে মেরে ফেলার জন্য শ্রী সেন্থিল অভ্যুদয় কৃষ্ণারাজের মতো দুর্নীতিপরায়ণ আইপিএস অফিসারকে নিযুক্ত করা হয়েছে। এবিষয়ে লেখা মাতৃ সদনের চিঠিগুলির কোনো প্রাপ্তিস্বীকার করা হচ্ছে না। গঙ্গার জন্য অনেক আত্মবলিদান হয়েছে। এই বিষয়ে রাষ্ট্রসংঘ তাদের ওয়েবসাইটে দুই আত্মবলিদানের উল্লেখ করে আপনাকে অনুরোধ করেছে যাতে আর আত্মবলিদান আমাদের দেখতে না হয়। (“UN Environment does not wish to see more environment defenders die in effort to clean up the Ganga” notes the organisation. “We urge Modi and his Government to enact all activities and follow up all promises to bring back life and health to this sacred river”)

উত্তরাখণ্ড হাইকোর্ট গঙ্গা এবং যমুনাকে জীবন্ত সত্তা (লিভিং এন্‌টিটি)-র স্বীকৃতি দিয়েছিল। কিন্তু উত্তরাখণ্ড সরকার সেই নির্দেশের স্টে অর্ডার না চাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েও তাকে স্টে করে দিয়েছে অর্থাৎ অমান্য করেছে। যদি সত্যিই গঙ্গাজির জীবন্ত সত্তার স্বীকৃতি পাওয়া যেত, তাহলে তার এই দুর্দশা হত না। ইতিমধ্যে, সানন্দজি যে আইনকে সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, সেই আইনকে জনপরিসরে (পাবলিক ডোমেনে) আলোচনা না করেই পাশ করানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

আমি, সাধ্বী পদ্মাবতী, আমার অনেক গুরুভাইয়ের আত্মবলিদানে মর্মাহত আর গঙ্গাজির দুর্দশা দেখে আমি আমার সকল গুরুভাই ও গুরুবোনেদের অনুরোধ করেছি যে, এইবার আমাকে গঙ্গাজিকে রক্ষা করার জন্য তপস্যা করতে দাও। ১৬ জুন ২০১৯ স্বামী নিগমানন্দজির পূণ্যতিথির অনুষ্ঠানে এই ঘোষণা করা হয়েছিল যার বিজ্ঞপ্তি আপনাকে এবং অন্যদের প্রেরণ করা হয়েছিল।

এই সূত্রে মাতৃ সদন থেকে একটা চিঠি (MS/2K19/Hdr/114) ২২.১১.২০১৯ তারিখে আপনাকে দেওয়া হয়েছে, যাতে দশদিন সময় দেওয়া হয়েছে। যদি এই সময়ের মধ্যে প্রতিশ্রুতিগুলি কার্যকর না করা হয় তাহলে অনশন শুরু হবে। এটা পূরণ না হলে আমি সাধ্বী পদ্মাবতী ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯ থেকে নিম্নলিখিত দাবি নিয়ে সত্যাগ্রহ শুরু করার ঘোষণা করছি :

গঙ্গাজির ওপর প্রস্তাবিত এবং নির্মাণাধীন সমস্ত বাঁধ নিরস্ত করতে হবে, বিশেষত সিংগোলী ভটোয়ারি, ফাটা ব্যুঙ্গ, তপোবন-বিষ্ণুগড়, বিষ্ণুগড়-পীপলকোটিকে এখনই বন্ধ করতে হবে।

নির্মিত বাঁধগুলিতে আইআইটি কনসর্টিয়াম-এর সুপারিশ অনুযায়ী ই-ফ্লো দেওয়া হোক এবং এই নিয়ম হরিদ্বারের ভীমগোড়া এবং নারোরা ইত্যাদি বাঁধের ক্ষেত্রেও লাগু করা হোক।

গঙ্গার ওপর খনন বিষয়ে এনএমসিজি-র আদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করা হোক এবং তার জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করা হোক যাতে দুর্নীতিগ্রস্তনেতা এবং অফিসারেরা সময়ের সাথে সাথে এগুলি অবহেলা না করতে পারে।

গঙ্গা আইনের জন্য এক বিস্তৃত আলোচনা হোক যেখানে মাতৃসদন এবং অন্যান্য গঙ্গার প্রতি দায়বদ্ধ সংস্থাগুলি একত্রিত হয় এবং তার পরেই তা সংসদে পাঠানো যেতে পারে।

NGT–র বিচারক শ্রী রাঘবেন্দ্র রাঠোরজি যিনি গঙ্গা-দ্রোহী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন, তাঁকে অবিলম্বে এই দায়িত্ব থেকে অপসারণ করা হোক এবং এই বিষয়ে মাতৃসদন থেকে পাঠানো সমস্ত চিঠির প্রাপ্তিস্বীকার করে এক উচ্চস্তরের তদন্ত করা হোক।

হরিদ্বারের এসএসপি শ্রী সেন্থিল অভ্যুদয় কৃষ্ণারাজ খোলাখুলি মাতৃ সদনের পরম পূজনীয় অধ্যক্ষ শ্রী গুরুদেব স্বামী শিবানন্দজিকে হত্যা করার জন্য ময়দানে অবতীর্ণ হয়েছেন। তাঁকে কিছু উচ্চ রাজনেতা, মাফিয়া এবং দুর্নীতিগ্রস্ত অফিসার মদত করছেন। এঁকে অবিলম্বে অপসারণ করা হোক এবং ওঁর ওপর উচ্চস্তরীয় তদন্ত করা হোক।
সম্মানসহ
ভবদীয়
ব্রহ্মচারিনী পদ্মাবতী
মাতৃসদন, হরিদ্বার।

আরো পড়তে পারেন…….

বাংলাদেশ-ভারত যৌথ নদী কমিশনের বৈঠক বাতিল

যমুনায় জেলেদের জালে ধরা পড়ল গাঙ্গেয় শুশুক

জীবন- জীবিকার জন্য ইছামতি নদীর সংস্কার জরুরী 

সংশ্লিষ্ট বিষয়