শিলিগুড়ির দুঃখ ফুলেশ্বরী-জোড়াপানি নদী : তুহিন শুভ্র মন্ডল

ফুলেশ্বরী
ভারতের দক্ষিণ দিনাজপুর থেকে>> ফুলেশ্বরী নদী প্রবাহিত হয়েছে শিলিগুড়ির মধ্য দিয়ে, যাকে বলে একেবারে বুকের ভেতর দিয়ে। আরেকটি নদী আছে, এর নাম জোড়াপানি। যদি বলা হয় এই দুটি নদী শিলিগুড়ির জীবনরেখা। অত্যুক্তি হয় না বোধহয়।
এই লকডাউনের সময়তেও কি অবস্থা নদীগুলির? নালায় পরিণত হয়েছে। ঘন কালো জল। আবর্জনায় পরিপূর্ণ। ফুলেশ্বরী বাজারের কাছে, সূর্যসেন কলোনীতে যদি এই নদীগুলিকে দেখা যায় তাহলে বোঝা যায় এই নদীর বর্তমান অবস্থা কি?  আক্ষরিক অর্থেই নদীটি ডাস্টবিনে পরিণত হয়েছে।নদীর বুকে গাছের জঙ্গল।ইউট্রোফিকেশন কোথাও কোথাও সাকসেশনও হয়ে গিয়েছে। সংস্কারের অভাবে দীর্ণ এই নদী। খোঁজ নিয়ে দেখা গেল এই দুই নদী তীরবর্তী জনবসতি গুলোতে কুয়ো, নলকূপ দিয়ে দুর্গন্ধ যুক্ত জল বের হচ্ছে। অর্থাৎ নদী দূষণের চূড়ান্ত জায়গায় পৌছে গিয়েছে ফুলেশ্বরী। কোনো কি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এর থেকে বাঁচতে?
ফুলেশ্বরী নদী: আক্ষরিক অর্থেই নদীটি ডাস্টবিনে পরিণত হয়েছে,নদীর বুকে গাছের জঙ্গল।ছবি- রিভার বাংলা
2002 সালে ফুলেশ্বরী ও জোড়াপানি নদীদূষণ মোকাবিলায় পরিকল্পনা নেওয়া হয়। তিনটি এস টি পি বা সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট বসানোর কথা হয়।এর চার বছর বাদে 2006 সালে 2 টি এস টি পির জন্য জমি মেলে। এস জে ডি এ সূত্রেই জানা গিয়েছিল যে, শহরের যাবতীয় জঞ্জাল মিশ্রিত জল কয়েক দফায় পরিশ্রুত করা হবে। প্রথমে ডাবের খোলা, প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ, থার্মোকল জাতীয় আবর্জনা ছেঁকে ফেলা হবে ।সেই জলও দ্বিতীয় দফায় পরিশ্রুত করে যতটা সম্ভব জীবাণুমুক্ত করা হবে। তৃতীয় দফায় পরিশোধনের পর জল ফেলা হবে নদীতে।
কিন্ত 2020 সালের 20 মার্চ বলছে যে সেখানে কিছুই হয়নি। সে প্রকল্প বিশবাঁও জলে। অথচ নদীবক্ষ ক্রমশ উঁচু হচ্ছে।অবরুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে ফুলেশ্বরী- জোড়াপানির গতিপথ। নদীর জায়গা দখল করার পরিস্থিতি তৈরি হয়ে গিয়েছে। অল্প বৃষ্টিতেই পার্শ্ববর্তী এলাকা প্লাবিত হবে। নদীর নিজস্ব জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের মুখে। একটি বিশালকায় বিপর্যয়ের মুখে ফুলেশ্বরী- জোড়াপানি।শিলিগুড়ি শহরও সঙ্কটে।অথচ সামান্য দু একটি উদ্যোগ ছাড়া কারও কোন হেলদোল নেই।
অবরুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে ফুলেশ্বরী- জোড়াপানির গতিপথ। ছবি: রিভার বাংলা
শুধুই কি হতাশা? নাকি আশাও আছে: না শুধু হতাশা নয়, আশাও আছে। রাজ্য নদী বাঁচাও কমিটি লাগাতার দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ, নদী ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত সমস্ত সংশ্লিষ্ট দফতর, বিভাগ, পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে বারবার এই বিষয়ে সচেতন করছে। উদ্যোগ ও পরিকল্পনা নিতে পথ দেখাচ্ছে। তাদের আয়োজিত প্রথম উত্তরবঙ্গ নদী ও জলাভৃমি বাঁচাও কনভেনশনে শপথ নিয়েছে শিলিগুড়ি পরিবেশ বাঁচাও কমিটিসহ অন্যান্য পরিবেশ বান্ধব সংস্থাগুলি।
সেখানে উপস্থিত ছিল বিভিন্ন কলেজের ছাত্র- ছাত্রীরাও। শিলিগুড়ি মহিলা মহাবিদ্যালয়ের দ্বারা আয়োজিত সেই আলোচনাতেও শপথ নিয়েছিল শিক্ষার্থীরা নদী পরিষ্কার রাখার, নদী ভাল রাখার। প্রশাসন, সরকারও এই দিকে নজর দিতে শুরু করেছেন তাই বলতেই পারি অন্ধকার গভীর ঠিকই কিন্ত আশার আলোও আছে।সময় এসেছে শিলিগুড়ির দুঃখ ফুলেশ্বরী ও জোড়াপানি নদীর দিকে নজর দেবার।নাহলে হারিয়ে যাবে এই নদী। তাতে শিলিগুড়ি শহরের বিপদ আরও বাড়বে।

সংশ্লিষ্ট বিষয়