আমি বাংলাদেশের এক ছোট্ট নদী, নাম আমার ছোট যমুনা। আমার অনেক দুঃখ-কষ্ট। এক সময় আমার অনেক সুখ ছিল। আজ আমি সেসব কিছু কথা তোমাদের বলবো। আমি বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলায় ইছামতি নদী পার্বতীপুর উপজেলার মোমিনপুর ইউনিয়নে ছোট যমুনা নামধারণ করে নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নে আত্রাই নদীতে পতিত হয়েছি।
আমি চিরিরবন্দর, পার্বতীপুর, ফুলবাড়ি, বিরামপুর. হাকিমপুর, পাঁচবিবি, জয়পুরহাট সদর, ধামইরহাট, পত্নীতলা, বদলগাছি এবং নওগাঁ সদর উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছি।
সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা দেশ হিসেবে বাংলাদেশের খ্যাতির পেছনে আমার অবদান কম নয়। আমার কারণেই তৈরি হয়েছে অববাহিকা। গড়ে উঠেছে জনবসতি, ব্যবসা-বানিজ্য, শহর, বন্দর। আমি ছোট যমুনা- দিনাজপুর, জয়পুরহাট ও নওগাঁ জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছি। এক সময় আমার খুব সুদিন ছিল। সে সময় বড় বড় নৌকা, লঞ্চ, স্টিমার আমার বুকে উপর দিয়ে চলাচল করতো। ব্যবসার একটা বড় মাধ্যম কিন্ত আমিই ছিলাম। নওগাঁ জেলা শহরে পরিণত হতে আমার ভূমিকাও কম নয়।
কিন্তু আজকাল তোমরা আমাকে খুব কষ্ট দিচ্ছো। তোমরা শুধু নামেই আমাকে মা ডাকছো। তোমরা আমার গায়ে মল, মুত্র, ময়লা, আবর্জনা, বসতবাড়ির অবর্জনা, বয়লারের ছাইসহ নানা কিছু ফেলে আমাকে দূষিত করছো। এ ভাবে চলতে থাকলে আমি হারিয়ে যাব। আমি ভরাট হবো। আমাকে কিন্তু আর পাবে না।
তখন শত চেষ্টাতেও কিছু হবে না। তোমারও কিন্তু কষ্ট কম পাবে না। কারণ মা কষ্টে থাকলে সন্তানরাও কষ্টে থাকে। তোমরা আমার পানিতে গোসল করতে পারবে না, কাপড় কাচতে পাড়বে না, মাছ ধরতে পারবে না, নৌকা বাইচ দেখতে পারবে না, এমন কি মুক্ত হাওয়া গ্রহণ করতে পারবে না, ইত্যাদি ইত্যাদি। তোমাদের বেঁচে থাকাও হুমকির সম্মুখীন হবে।
অবশ্য নওগাঁর কিছু সচেতন মানুষ বেশ প্রায় ৭-৮ বছর ধরে নানা জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য কাজ করে যাচ্ছে। আমি তোমাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। বিশেষকরে একুশে পরিষদ নওগাঁ ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দালন (বাপা) তোমাদের ধন্যবাদ। তোমারা আমার জন্য আরও একটু কষ্ট কর। জনসচেতনতা সৃষ্টি কর। আমাকে রক্ষা কর। আমি বাঁচলে, তোমারও বাঁচবে।