শঙ্খ নদ : দ্যা রিগ্রাই খিয়াং ।। মুহাম্মদ মনির হোসেন

শঙ্খ নদ

একটি বাঁক পেরিয়ে আরেকটি বাঁক মানেই নতুন সৌন্দর্যের সংজ্ঞা খোঁজা। যেন নদীর গতিপথ এখানেই শেষ, তবে সেটি নিছক মরীচিকা। আরেকটি বাঁক নিয়ে যাবে নিরুদ্দেশের দিকে। এটিই ‘শঙ্খ’ নদ। স্থানীয়রা একে ‘রিগ্রাই খিয়াং’ বা ‘স্বচ্ছ নদী’ নামে ডাকে।

শঙ্খের সাথে আমার পরিচয় ২০১০ সনের শেষের দিকে। বান্দরবান থেকে রুমা যাওয়ার পথে মিলনছড়িতে তার সাথে প্রথম দেখা। পাহাড়ের উপর থেকে দেখা শঙ্খকে খুবই আকর্ষণীয় মনে হয়েছিল। দূর থেকে এক পলক দেখেই তার প্রতি ভাল লাগা শুরু। তারপর রুমা যাওয়ার পর আবার ভাল করে দেখা ও অনুভর করা। তাতেও মন ভরেনি। তাই নৌকা ভাড়া করে বেড়িয়ে পড়ছিলাম শঙ্খ পরিদর্শনে। নৌকায় চড়ে শঙ্খ নদের দুই পাড়ের নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখে যে কেউ মুগ্ধ হতে বাধ্য।

৩০-৪০ মিনিট নৌকা চলার পর হঠাৎ কানে আসে শোঁ শোঁ শব্দ। যা কাছাকাছি কোন ঝরনার সঙ্কেত দিচ্ছিলো। দূর থেকে ঝরনার পানি অনেকটা নীল মনে হয়েছিল। জলপ্রপাতটির জলের ঝাপটা ২০০ ফুট এলাকা পর্যন্ত এদিক-ওদিক বিস্তৃত। ঝিরিঝিরি বৃষ্টির মধ্যে মন মাতোয়ারা। প্রায় ৩০০ ফুট উঁচু থেকে ঝরে পড়া জলপ্রপাতের রিমঝিম সুরের মূর্ছনা যে কাউকে নিয়ে যাবে অন্য এক জগতে। এর আশপাশের জায়গাগুলো মনকাড়া প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। রিজুকের আশপাশে মারমা ও বম উপজাতিদের গ্রাম রয়েছে। রিজুক দেখতে গিয়ে নৌকা ভ্রমণের আনন্দ আর ঝরনার অপরূপ সৌন্দর্য দুটোই উপভোগ করা যায়।

শঙ্খ নদ
শঙ্খ নদ । ছবি- মুহাম্মদ মনির হোসেন

বর্ষা মৌসুমে আরও মোহনীয় হয়ে উঠে রিজুকের ধারা। বৃষ্টি আর ঝরনাধারা উপভোগ করতে করতে আপনিও হারাবেন এক অন্য রাজ্যে। এইযে শুরু হলো শঙ্খ পরিদর্শন এখন অব্দি চলছে। এ পর্যন্ত  উনিশবার শঙ্খ ভ্রমণ করেছি। মোট ভ্রমণ এলাকা ১৬০ কিলোমিটার। এর মধ্যে নৌকা দিয়ে বান্দরবান শহর থেকে লিক্রি পর্যন্ত ভ্রমণটি খুবই স্মরণীয়। প্রথমদিন বান্দরবান শহর থেকে রুমা, ২য় দিন রুমা থেকে থানচি এবং ৩য় দিন থানচি থেকে লিক্রি। তবে এই নদীটির প্রতি ইঞ্চি পরিদর্শন করার ইচ্ছা রয়েছে। এই নদীটি সম্পর্কে শিখতে, জানতে এবং জানাতে স্বাচ্ছন্দবোধ করি।

বাংলাদেশের বেশির ভাগ নদ-নদী উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে মিশেছে। কিন্তু শঙ্খ বান্দরবানের দক্ষিণাঞ্চলে সৃষ্টি হয়ে উত্তর দিকে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে শেষ হয়েছে। মিয়ানমার সীমান্তবর্তী বাংলাদেশের বান্দরবানের মদক এলাকার পাহাড়ে এ নদের জন্ম। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাম্প্রতিক তথ্যমতে উৎপত্তিস্থল থেকে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত নদটির দৈর্ঘ্য প্রায় ২৯৩ কিলোমিটার। এটি চট্টগ্রাম বিভাগের দ্বিতীয় বৃহত্তম নদ। বান্দরবানের প্রধান নদ।

শঙ্খ নদ বান্দরবান জেলার থানচি উপজেলার রেমাক্রি ইউনিয়নের শেষ মাথা থেকে উৎপন্ন হয়েছে। থানচি উপজেলায় উৎপন্ন হওয়ার পর এর অববাহিকা উত্তর দিকে মুখ নেয় এবং রোয়াংছড়ি বান্দরবান সদর দিয়ে প্রবাহিত হয়। বান্দরবান সদর পার হবার পর পশ্চিমমুখী হয়ে চট্টগ্রাম জেলার চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, আনোয়ারা ও বাশঁখালী উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরের সাথে মিলিত হয়েছে। এ নদের দুই পাড়ে বসবাসকারী প্রায় ৯০ শতাংশই মারমা নৃ-গোষ্ঠী। তাদের জীবন-জীবিকার সঙ্গে শঙ্খ নদ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আর তাদের পানির উৎস বলতে যা বুঝায় তাও এ পাথুরে নদকে ঘিরে। তবে এ নদের নান্দনিকতা, নিজস্বতা, এ জনপদের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি ও প্রাণ-প্রকৃতি বিবেচনা করলে নদটি জাতীয় নদের অভিধা পাওয়ার সকল যোগ্যতা রাখে।

শঙ্খ নদ
শঙ্খ নদ । ছবি- মুহাম্মদ মনির হোসেন

শঙ্খ নদের অববাহিকা এলাকা প্রায় ১২৭৫.০০ বর্গকিলোমিটার। এটি একটি ফ্ল্যাসি নদী। অর্থাৎ, শুষ্ক মৌসুমে এই নদে পানি প্রবাহ খুব কম থাকে কিন্তু বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ী ঢলের কারণে এই নদে পানির তীব্র প্রবাহ সৃষ্টি হয়। এর ফলে আশেপাশের এলাকা যেমন প্লাবিত হয় তেমনি তীব্র ভাঙ্গনেরও সৃষ্টি হয়। ব্রিটিশ আমলে বাঙ্গালি আমলারা গেজেটিয়ার করার সময় এটিকে শঙ্খ নদ হিসেবে নথিভূক্ত করে। সম্ভবত ১৮৬০ সালে চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম গেজেটিয়ার প্রকাশকালে ব্রিটিশ শাসকেরা ইংরেজিতে একে সাঙ্গু নদী হিসেবে চিহ্নিত করেন। তবে মারমা আদিবাসীরা তাদের ভাষায় শঙ্খ নদটিকে রিগ্রাই খিয়াং বা স্বচ্ছনদী নামে আদিকাল থেকে ডেকে আসছেন। পাহাড়ী এলাকার প্রকৃতি অনুযায়ী অসংখ্য ছোট বড় ঝরনা থেকে সৃষ্টি হওয়া ছোট ছোট নদী বা ছড়া এসে মিশেছে শঙ্খ নদে।

শঙ্খ নদের পানির উৎস হিসেবে শতাধিক খাল ও ছড়া গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে। এরমধ্যে রেমাক্রি খাল,পর্দা খাল, রুমা খাল, চিতাই, বালি, রূমা ছড়া, বড়পালিছড়া, পুমাজিছড়া, মুরুঞ্জাছড়া, তারাসাছড়া, নেয়াপাতং, রোয়াংছড়ি, বিচিং, চেমী, ধোপা, লালুটিয়া, বরগুইনি, গোড়াল, ডলু, চানখালী, পারকি, জলাধার, পুইছেড়ি, চানখালী, যোত খাল, ধোপাছড়ি খাল, শুয়ালক খাল, শিকলবাহা খাল উল্লেখযোগ্য।শঙ্খ নদের পানিদাতা উপনদীসমূহ পার্বত্য দূর্গম এলকায় বিস্তৃত। নদীর বেসিনে প্রবাহিত অধিকাংশ নদ-নদীসমূহে সারা বছর পানির প্রবাহ সীমিত হলেও বর্ষাকালে প্রবাহের পরিমাণ ব্যাপক আকারে বৃদ্ধি পেয়ে তীরবর্তী এলকায় মারাত্মক ভাঙ্গণ কবলিত হয় এবং উজান হতে পাহাড়ী ঢলের সাথে নেমে আসা মাটি/বালির কারণে বিভিন্ন স্থানে চরের সৃষ্টি হয়েছে।

শঙ্খ পাড়ের বয়োজ্যষ্ঠদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, আশির দশকের শুরুতেও শঙ্খ নদের দুপাশে ছিলো প্রচুর ঘন প্রাকৃতিক বনাঞ্চল। অসংখ্য বড় বড় গাছপালা, বাঁশ ও বেতের নিবিড় ঘনবন ছিলো অন্যতম। গহীন বনে বড় বড় হাতি, বাঘ, কালো ও লালচে ভালুক,বন্য শুকুর, সাম্বার হরিণ, দেশী লাল হরিণ, জংলি গয়াল, বন মোরগ, মথুরা, ময়ূর, হনুমান, উল্লুক, বানর, বন বিড়াল, অজগর সাপসহ প্রচুর পরিমমানে বন্য প্রাণীর প্রাচুর্য্য ছিল।

তখনকার সময়ে বর্ষা মৌসুমে শঙ্খ নদ ভয়ংকর রুপ ধারণ করতো। প্রচুর বৃষ্টিপাতের ফলে বর্ষকালে নদটি ফুলে ফেঁপে উঠতো।তখন এর স্রােতধারাও তীব্র হতো। কোথাও কোথাও দেখা দিতো পাহাড়ী ঢল। অনেক উচু থেকে পানি গড়িয়ে বিনা বাধায় নিচের দিকে প্রবাহিত হতো। সে সময় দুপাশের জনবসতি ও বনাঞ্চলের তেমন কোন ক্ষতি হতো না। আবার বিষ্ময়করভাবে বৃষ্টিপাত শেষ হওয়ার সাথে সাথে স্বাভাবিক হয়ে আসতো এর স্রােতধারা। আর সে সময় পাহাড়ী ঢলের কারণে নদীর দু’কুলে পড়তো প্রচুর পরিমাণে পলিমাটি। কোনো ধরনের কিটনাশক ও সার প্রয়োগ ছাড়াই সেখানে চাষ করা হতো মৌসুমের সব ফসল। শঙ্খ নদের অববাহিকার মানুষ পানীয় জল ও গৃহস্থালীর যাবতীয় কাজে এ নদীর পানির উপরই নির্ভরশীল। গোসল করা, রান্না করা, বাসন-কোসন ধোয়া নিত্য যাবতীয় কাজে এ নদীর পানিই ব্যাবহার করেন।

বান্দরবান মৎস্য অফিসের তথ্যমতে, একসময় শঙ্খ নদীতে ডারকিনা, চিতল, তেলাপিয়া, চেলা, চেবলি, চাটকিনি, গুরামুইক্কা, মহাশোল, পাবদা, চিংড়ি, বাইম, জাত পুটি, ফান্ডা, বোয়াল, বাটা, পান্ডা বাটা, বামশ, বেলিটুরা, কেচকি, কানকিলা, কাটা চান্দা, কই বান্দি, মৃগেল, বাইলা, ছোয়া চিংড়ি, গুচি বাইম, কুচিয়া, আইড়, শাল বাইম, কই, দেশি মাগুর, টাকি, ঘনিয়া, চিংড়ি, রুই, ভেদা ও কাতলাসহ ৩৯ প্রজাতির মাছ পাওয়া যেত। কিন্তু বর্তমানে এর অধিকাংশ মাছই প্রায় বিলুপ্তির পথে। তবে এখনো মহাশোল ও কালিবাউশের উপস্থিতি বেশ লক্ষনীয়।

শঙ্খ একটি নান্দনিক নদ যার দুপাড় সবুজের চাদরে মোড়ানো। পাহাড়ঘেরা এ নদটি পর্যটকদের খুবই আকৃষ্ট করে। তাই এ নদের সৌন্দর্য্য অবগাহনে প্রতিদিন বহু পর্যটক আসেন শঙ্খ পর্যবেক্ষনে। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে থানচী থেকে শতাধিক নৌকা রেমাক্রির উদ্দেশ্যে যায়। শঙ্খ নদ সাফারী, রেমাক্রি জলপ্রপাত ও নাফাকুম উপভোগ করেন। তাছাড়া বান্দরবান শহরের কেচিংঘাটা থেকে রুমা পর্যন্ত বিভিন্ন দূরত্বে রিভার সাফারির ব্যবস্থা রয়েছে।

শঙ্খ নদ
শঙ্খ নদ । ছবি- মুহাম্মদ মনির হোসেন

তবে মাঝে মাঝে পর্যটকদের দায়িত্বহীনতা নদীর ও পরিবেশের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তারা প্লাস্টিকের বোতল ও চিপস এর প্যাকেটসহ অন্যান্য উচ্ছিস্ট এ নদে ফেলে দেন। এতে নদে পানিসহ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে জলচর প্রাণী।তবে সবাই যে এরকমটি করছে তা নয়। কেউ কেউ আবার নদী পাঠ, নদী ভাবনা তৈরীর জন্য এখানে আসেন। আযোজন করেন রিভার ক্যাম্পের। সুশৃঙ্খলতার শিক্ষা নেন প্রকৃতির কাছ থেকে, নদীর কাছ থেকে। দায়িত্বশীলতার শিক্ষা নেন এ জনপদের মানুষদের কাছ থেকে। শপথ নেন নদী ও প্রকৃতি রক্ষার।

শঙ্খ একটি পাথুরে নদ। পাহাড়ের বড় বড় চিরহরিত বৃক্ষগুলো যেমন পানি ধরে রাখে তেমনি নদে ও ছড়ায় থাকা পাথরগুলোও পানি ধরে রাখে। এ পাথরগুলো শুধু পানিই ধরে রাখে না পানি ফিল্ট্রেষনও করে। নদীতলের পাথরগুলো জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ভূমিকা রাখে। পাহাড় ও শঙ্খ নদের ইকোসিস্টেমে গুরত্বপূর্ণ অবদান রাখা এ পাথরগুলো নির্বিচারে উত্তোলন করা হচ্ছে। যার ফলে আলীকদম,থানচি,রুমা ও রোয়াংছড়িতে প্রায় চার শতাধিক ঝিরি-ঝরনা মরতে বসেছে। খাবার পানির সংকট দিনে দিনে তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। পানিশূন্য হচ্ছে শঙ্খ নদ। পানির প্রাপ্যতা না থাকায় শঙ্খ নদের প্রবাহ ক্রমেই ধীর হচ্ছে।

বলা হয় পাহাড় হচ্ছে নদীর জরায়ূ। পাহাড় থেকেই নদীর জন্ম। আর সেই পাহাড় ভাল নেই। এ পাহাড় ও পাহাড় ঘুরে কোথাও কোন বড় গাছ পাওয়া যায় না। গাছবিহীর পাহাড় আজ বিবস্ত্র। যার ফলে পাহাড়ি ঢলে পাহাড়ের মাটি নদে মিশে নদের পীঠ বের করে ফেলছে। সৃস্টি হচ্ছে টিউমার নামক চর।

টোবাকো কোম্পানীগুলো শঙ্খ নদের অববাহিকায় জুম চাষীদের তামাক চাষে উৎসাহিত করায় জুমের বদলে বেড়েছে তামাক চাষ। উৎপাদিত তামাক পাতা নদে ধোয়ার ফলে মাইলের পর মাইল নদের পানি হচ্ছে দূষিত। আবার তামাক চাষে ব্যবহৃত রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের বিষ মিশছে শঙ্খ নদে। এছাড়া পানিতে বিষ মিশিয়ে ও ইলেকট্রিক শক দিয়ে মাছ শিকারের ফলেও বাড়ছে দূষণ।

এমন বৈরী পরিস্থিতিতে এ নদকে ঘিরে গড়ে উঠা হাজার বছরের পাহাড়ি জনপদ বর্ষা ও শুস্ক মৌসুমে জীবনের ঝুকি নিয়ে এ নদের পানি ব্যবহার করছেন। এর ফলে কত মাইল এলাকা জুড়ে কতো জনসংখ্যা এখন স্বাস্থ্য ঝুকির মধ্যে কাটাচ্ছেন, প্রাণ বৈচিত্রের উপরই বা এর এর বিরুপ প্রতিক্রিয়া কি মাত্রায় পড়ছে , তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যানও নেই।

শঙ্খ নদ
শঙ্খ নদ । ছবি- মুহাম্মদ মনির হোসেন

এ নদীটির উৎস নিয়েও মতভেদ রয়েছে। সরকারি বিভিন্ন নথীতে নদটিকে আন্ত-সীমান্ত নদী হিসেবে চিহ্নিত করলেও নদ-নদী নিয়ে কাজ করা মানুষগুলো বলছেন শঙ্খ শুধুই আমাদের নদী এবং পরিপূর্ণ একটি নদী। এতে আর কোনো দেশের অংশিদারিত্ব নেই। সম্প্রতি পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মাননীয় মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈশিংও একই মত দিয়েছেন।

শঙ্খ নদের একেবারে পাড়েই গড়ে উঠেছে বান্দরবানের শত বছরের পুরোনো মার্মা বাজার। দুর-দুরান্তের বিভিন্ন পাড়া থেকে নৌকায় বা হেটে দুর পাহাড়ে উৎপন্ন বিভিন্ন পণ্য নিয়ে আসে এই বাজারে। এটি মগ বাজার নামেও পরিচিত। এমন কিছু নেই যা মারমা পাওয়া যায় না। বনের ফল-মূল, লতা-পাতা, জুমের টাটকা শাক-সবজি, পাথুরে কাকড়া, ঝিরি-ঝরনার শামুক-ঝিনুক সবই মিলবে এখানে। বৈচিত্র্যপূর্ণ খাদ্যদ্রব্য টাটকা ও কিটনাশক মুক্ত হওয়ায় পাহাড়ি জনপদের মানুষের পাশপাশি সমতলের ক্রেতারাও এ বাজারে ভিড় জমান। বৈচিত্র্যপূর্ণ সমাহারের জন্য বাজারটি ইদানিং দুরদুরান্ত থেকে আসা পর্যদকদেরও আকৃষ্ট করেছে। তাই পর্যটকরা তাদের ভ্রমনসূচিতে রবি বা বুধবার অর্ন্তভ’ক্ত রাখতে চেষ্টা করেন শুধুমাত্র বাজারটি দেখার জন্য। আর এই বাজারকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে বান্দরবান জেলা শহর।

নদটি যতই লোকালয় তথা শহরমুখী হয় ততই দখল ও দূষণ পরিস্কার হতে থাকে। বান্দরবান পৌরসভার মেক্সি ছড়া, বাসস্ট্যান্ড ছড়া ও ওয়াপদা ছড়া দখল দূষণে নিশ্চিহ্ন হতে চলেছে। এর ফলে শহরের পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে জলাবদ্ধতা তৈরী করছে। ইসলামপুর, মধ্যমপাড়া , উজানিপাড়া ও কালাগাটায় দখল দূষণের স্পষ্ট ছাপ রয়েছে।অনেকে বলার চেষ্টা করছেন শহরে তুলনামূলকভাবে সচেতন মানুষ বসবাস করেন আর এ সচেতন মানুষরাই সচেতনভাবে নদী দখল ও দূষণ করেন। শঙ্খ নদ পাহাড়ি সংস্কৃতির আতুর ঘর। শঙ্খ বাঁচলেই এ জনপদের বৈচিত্রময় সংস্কৃতি, এতিহ্য ও জীবনধারা অব্যাহত থাকবে। তাই শঙ্খ নদীকে সংরক্ষণ ও তার পরিবেশবান্ধব বহুমাত্রিক ব্যবহার নিশ্চিত করা খুবই জরুরি।

মুহাম্মদ মনির হোসেন : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশন ও সভাপতি, বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দল।


আরও পড়তে পারেন….
বুড়িগঙ্গায় লঞ্চ ডুবি : ৩২ মরদেহ উদ্ধার, বিভিন্ন মহলের শোক
আমার ছেলেবেলার বড়নদী ।। মু আ লতিফ
রাইন আমার প্রিয় নদী : যেমন আত্রেয়ী আর আন্ধারমানিক ।। তুহিন শুভ্র মন্ডল
ভারতের সঙ্গে পানি নিয়ে সংঘাত নেপাল-ভুটানের : যা বললেন মেধা পাটকর

সংশ্লিষ্ট বিষয়