নদ, না নদী- শেখ রোকন

নদ

নদ, না নদী- এ নিয়ে যারা বিতর্ক করে, তারা না বোঝে নদী, না জানে ভাষা। ‘নদী’ আসলে একটি ‘জেনেরিক’ শব্দ। যেমন ‘মানুষ’। এর মধ্যে মানব ও মানবী দুটোই আছে। এদের জন্য আরেকটি উদাহরণ যথার্থ- ‘গরু’ দিয়ে গাই ও বলদ দুটোই বোঝায়। যেমন ‘ছাগল’। এর মধ্যে বকরি ও পাঁঠা দুটোই আছে। নদীর ‘লিঙ্গ’ নিয়ে বিতর্ক কেবল অকর্মণ্য বাঙালির মধ্যেই দেখা যায়। দুনিয়ার আর কোথাও নেই।

যার শাখা আছে, সেটা নদী, আর যার শাখা নাই সেটা নদ। এই ‘তত্ত্ব’ এরা দিয়ে থাকে। তাহলে ব্রহ্মপুত্র কীভাবে নদ? এর তো শাখা আছে অনেক; যেমন ঝিনাই, যেমন শীতলক্ষ্যা।

কেউ কেউ বলে নাম স্ত্রীবাচক হলে নদী, আর পুরুষবাচক হলে নদ। তাহলে ‘মেঘনা’ কী? বিশ শতকের গোড়ায় এর নাম ছিল ‘মেঘনাদ’। তার মানে, পুরূষ লিঙ্গ। এখন এর নাম ‘মেঘনা’। তার মানে, স্ত্রী লিঙ্গ। মেঘনার তবে লিঙ্গান্তর ঘটেছে? ব্রহ্মপুত্র গতিপথ পরিবর্তনের পর এর নাম হয়েছে ‘যমুনা’। যমুনা তাহলে ‘রূপান্তরকামী’ নদী? তিস্তার একটি অংশের নাম ‘গাবুরহেলান’। এটি নদ না নদী?

প্রতি সপ্তাহে আমি একাধিক প্রশ্ন পাই নদ ও নদীর পার্থক্য বিষয়ক। তাদের বলি- সব নদীকে নদী বলা যাবে। চাইলে কোনও কোনও নদীকে নদ বলতে পারেন। তবে তাতে ভুল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। নদী বললে কোনও ভুল নাই।

তারপরও জানতে চাইলে কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা শোনাই- হিন্দু না ওরা মুসলিম? ওই জিজ্ঞাসে কোন জন? কান্ডারী! বল ডুবিছে মানুষ, সন্তান মোর মা’র! যারা নদ ও নদীর পার্থক্য নিয়ে বেশি বিচলিত, তাদের বলুন, এই জীবনীশক্তি যেন দখল, দূষণ, ভাঙন, প্রবাহস্বল্পতা, বালু উত্তোলনে জেরবার নদীগুলো উদ্ধারের কাজে লাগায়। নদ-নদী বিতর্ক দিয়ে নদীর কোনও লাভ নেই।

নোট: লেখাটি লেখকের ফেসবুক থেকে নেয়া- সম্পাদক।

শেখ রোকন : লেখক ও গবেষক।

পড়ুন.. 

রিভারাইন পিপলের মহাসচিব শেখ রোকন এর সাক্ষাৎকার

 

সংশ্লিষ্ট বিষয়