জলঢাকা নদীর গল্পে মিশে আছে গাঠিয়া নদীও

একটা নদী, যে নদী আকাশকে দু’হাত বাড়িয়ে নিজের দিকে আমন্ত্রণ জানায়।
একটা নদী, যে নদী জলের সঙ্গেই তার বুকে স্থান দেয় নুড়ি আর ছোট-বড় পাথরকে।
একটা নদী, যে নদী অনন্ত শব্দের সঙ্গে বেঁধেছে ঘর
একটা নদী, হয়ে নদী নবে রাখে না
কে আপন আর কেই বা পর

হ্যাঁ, সবাইকেই তার বুকে স্থান দেয় জলঢাকা। যারাই তার বুকে অনন্ত শব্দ ব্রহ্মের সঙ্গে স্থান পেতে চায়। জলঢাকা নদীকে প্রথম দেখি বড় বেলায় কোচবিহারে যাওয়ার পথে ময়নাগুড়ি আর ধুপগুড়ির মাঝে। তারও আগে ছোটবেলায় ভূগোল বইতে জলঢাকায় গড়ে ওঠা জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের মাধ্যমে জলঢাকার নাম প্রথম শোনা। অদ্ভুত একটা নাম। প্রথম থেকেই আকর্ষণ করে আমাকে।সে কবেকার কথা! আর এখন, নতুন করে বন্ধুতা হলো যেনো।

আর জলঢাকা নদীর পাড়ে চুপ করে বসে আকাশ পাতাল ভাবা আমার অভ্যাস হয়ে গেলো যেনো। সামনা সামনি প্রতিনিয়ত না গেলেও প্রতিদিনের মনে মনে গড়ে ওঠা এক অভ্যাস। যে অভ্যাস ওর জলধারাকে গভীর ভাবে শুধু পর্যবেক্ষণ করতে বলে না। অনুভব করতে বলে। আর নিজের দিকে টেনে নেয়। যে টেনে নেওয়া থেকে নিস্তার নেই

জল ঢাকা, ৩ টি দেশের নদী। ভুটান, ভারত আর বাংলাদেশের নদী। জলঢাকা আমাদের পশ্চিমবঙ্গেরও নদী। আরও বেশি করে উত্তরবঙ্গের নদী।

গত একবছর ধরে এই নদীকে নিবিড় ভাবে দেখতে গিয়ে কথা হয়েছে স্থানীয়দের সাথেও। যাদের জীবনে মিশে আছে এই নদী। তারা বলেন,এই নদীর বুক থেকে পাথর তোলা বারণ। অথচ অন্য জায়গার রয়ালটি নিয়ে এই নদীর বুক থেকে পাথর তোলে অসাধুরা। কেউ দেখার নেই। জলঢাকাকে আরো নিবিড় ভাবে দেখতে গিয়ে কথা বলছিলাম, নাগরাকাটাতে অবস্থিত ভারত সরকারের সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশনের অফিসে। সেখান থেকেই উঠে এলো ভয়ংকর তথ্য। জলঢাকা নদী বক্ষ নাকি ক্রমশ উঁচু হয়ে যাচ্ছে। আর তা বর্তমানে অবস্থান করছে নাগরাকাটা জনপদের থেকে। তাহলে মেঘ ভাঙ্গা বৃষ্টি হলে বন্যার সময় কী অবস্থা হবে নাগরাকাটার? কেউ ভাবার নেই।

জলঢাকার খুব কাছেই আছে গাঠিয়া নদী। এই নদীও ভুটান থেকে এসেছে। সুলকাপাড়া পঞ্চায়েত দিয়ে বয়ে যাওয়া এই নদী ভয়ংকর ভাঙনের শিকার। যদিও ভাঙন দেখতে নয় দেখতে গিয়েছিলাম এই নদীর গায়েই আবর্জনা ব্যবস্থাপনা দেখতে। আবর্জনা মোকাবিলা যখন সর্বত্র মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে তখন সুলকা পাড়া পঞ্চায়েত কঠিন ও ভঙ্গুর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার একটা উদাহরণ তৈরি করবার সাহস নিয়ে পথে নেমেছে। একজন পরিবেশের বন্ধু হিসেবে সেই সফলতার পথে পা বাড়ানোর কথা সর্বত্র পৌঁছে দেওয়া উদ্দেশ্য ছিল আমার। কিন্তু এ কি? ভাঙনের কবলে যে সমগ্র প্রকল্প। গাঠিয়া নদীর ভাঙন মোকাবিলার সঙ্গে আবর্জনা ব্যবস্থাপনা বাঁচানোই অন্যতম চ্যালেঞ্জ। সবুজ মঞ্চ রাজ্য নদী বাঁচাও কমিটির পক্ষ থেকে জানাবো সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে নদীকে ভালো রাখতে আর কতদিন চলবে বাইরে থেকে জাগানোর কাজ? যে কোন মানুষ, ভেতর থেকে জাগবে কবে?

আরও পড়ুন….
‘কাঁদো নদী কাঁদো’: সময়ের আয়না- রুখসানা কাজল
মীজানুর রহমানের ত্রৈমাসিক পত্রিকা : নদী সংখ্যা- মনি হায়দার
নদীর কথা ‘নদীয়ার নদী’-র মতো – সুপ্রতিম কর্মকার

সংশ্লিষ্ট বিষয়