বর্ষার সময় ছাড়া জল থাকে না আমাদের নদীতে।কি আশ্চর্য! অথচ এই আত্রেয়ী নদীতেই জল থাকতো কত! এই তো কিছুদিন আগে নদীর বুকে ক্রিকেট খেলে আত্রেয়ীর ভয়াবহতার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করিয়েছিলাম। জল নেই। মাছ নেই আগের মতো। তাই বিভিন্ন ধরনের জাল থাকলেও তা ব্যবহার করা আর হয় না সবসময়। ফলে ধীবর সম্প্রদায়ের জীবনে নেমে এসেছে এক অদ্ভূত আঁধার। সে কথায় আসছি। তবে তার আগে দেখে নেওয়া যাক কোন্ কোন্ জাল দিয়ে আত্রেয়ীর বুকে মাছ ধরতো ধীবররা।
আমাদের সমীক্ষায় যে যে জালের কথা উঠে এসেছে সেগুলি হলো- মশারি জাল বা বাদাই জাল- মূলত মশারি দিয়ে তৈরি হয়।সমস্ত রকমের মাছ ধরার জন্য এই জাল ব্যবহৃত হয়। ফাঁস জাল বা গড়া জাল- মাটির কাঠি দিয়ে জাল তৈরি হয়।আগে হাতেই বোনা হতো এখন মেশিনে নাইলন সুতো দিয়ে তৈরি হয়।সব ধরনের মাছ ধরা যায় এই জাল দিয়ে। তোড়া জাল বা খ্যাও জাল- এর ব্যবহার বহুল। কচাল জাল- দুটো নৌকা দিয়ে বাইতে হয়।আত্রেয়ীর বিশেষ মাছ রাইখর ধরার জন্য এই জাল ব্যবহৃত হতো।নাইলন সুতো দিয়ে তৈরি ছোট ফাঁসের জাল। বেড় জাল- নদীতে যখন জল বেশী থাকে তখন এই জাল ব্যবহার করা হয়।নাইলনের তৈরি।ফাঁস বড়ো । ভূচার জালে মূলত বন্যার সময় এই জালের ব্যবহার ।বড়ো ফাঁসের টায়ারের সুতো দিয়ে তৈরি হয়।
খরা জাল- বাঁশ দিয়ে তৈরি হয়।নির্দিষ্ট জায়গাতে রেখে মাছ ধরা হয়। সুতি জাল- শঙ্কু আকৃতির বড়ো জাল।বড়ো এবং ছোট ফাঁসের হয়।নাইলন বা টায়ারের সুতো দিয়ে তৈরি হয়।যখন জল বেশী থাকে তখন এই জাল ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও গ্রামের দিকে ধোরোঙা বা খলসানি দিয়ে মাছ ধরার চল আছে।
আত্রেয়ীতে এখন জলই থাকে না তো মাছ থাকবে কোথা থেকে।তাই সব জালের ব্যবহার হয় না আর। ধীবর দের পরবর্তী প্রজন্ম আর এই পেশায় আসছে না।ভিন রাজ্যে চলে যাচ্ছে কাজের খোঁজে।তাদের জীবন ও জীবিকায় নেমে আসছে ভয়ংকর বিপদ।দেখা দিচ্ছে এক চরম আর্থ-সামাজিক সংকট । এর থেকে মুক্তির জন্য যুদ্ধকালীন তৎপরতায় পরিকল্পনা ও কাজের প্রয়োজন। সে বিষয়ে ভাবনা চিন্তা কবে শুরু হবে সেটাই এখন কোটি টাকার প্রশ্ন ।নদী ভাল না থাকলে, ধীবর’রা ভাল না থাকলে বোঝাই যাচ্ছে যে বিপদ আমাদেরও ঘরের দুয়ারেই ।
আরো পড়ুন….
ইন্দোনেশিয়ার উপকূলে ভেসে আসা তিমির পেট থেকে ৬ কেজি প্লাস্টিক বর্জ্য উদ্ধার!
নদীয়ার গোরাগাঙনি : খাল নয়, নদী
হারিয়ে যাওয়া মাছ কি নদীর মৃত্যুর আশংকাই সামনে আনে না?