শীতের রবিবার ছুটির দিনে যখন আর পাঁচজন আয়েসে বা ব্যক্তিগত কাজে সময় কাটাচ্ছিলেন তখনই আত্রেয়ী নদীর পারে জড়ো হয়েছিলেন একদল প্রবীণ। কবিতা পাঠ করলেন, গান গাইলেন আর শেষে করলেন নদী সাফাই।
অমল বসু ,মৃনাল চক্রবর্তী, চঞ্চল শিকদার কনক, রঞ্জন তালুকদার ভক্ত, গোপাল ভট্টাচার্য, দিলীপ মজুমদার, নারু দত্ত দীপক মুখার্জিরা নদীর সমস্যা দূরীকরণে মতামত দিলেন।
সুবীর চৌধুরী পাঠ করলেন নিজের লেখা কবিতা ‘নিজের মতো’। অমল কৃষ্ণ গোস্বামী এবং সুচিত্রা গোস্বামী গাইলেন নদীর গান।
প্রবীণদের সঙ্গে জুড়ে গিয়েছিলেন সুপ্রিয় মোহান্ত, বিনায়ক কৃষ্ণ মজুমদার রিক গুহ।
শেষে আত্রেয়ী নদীর সদরঘাটের অংশে প্রতীকী নদী সাফাই করে নদীকে ভাল ও সুস্থ রাখার বার্তা দিলেন তারা।
কিন্ত কেন এই বার্তা প্রদান? কেন এই প্রতীকী নদী সাফাই? এর গুরুত্ব কি? এতে কোন লাভ হয়? একথা বুঝতে গেলে একটু পিছনে ফিরতে হবে।পরিবেশ প্রেমী সংস্থা দিশারী সংকল্প দীর্ঘদিন ধরেই প্রতীকী নদী সাফাই করে।ছাত্র- ছাত্রীরা সেখানে অতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রবিবার সেই একই কাজে অংশ নিল প্রবীণরা। শিরোনাম ছিল ‘নদীর কাছে এসো’।
আসলে প্রতীকী নদী সাফাই মূলত যে কারণগুলির জন্য করা হয় তা হলো নদীর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ, নদীকে যে ভাল রাখতে হবে আমাদেরই স্বার্থে তা মনে করিয়ে দেওয়া, প্রশাসন কে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া নদীর প্রতি উদাসীনতার চিত্র এবং একই সাথে কাজটা যে শুধু প্রশাসনের নয়, আমাদের নিজেদেরও- সেই নদী চেতনা জাগ্রত করা। প্রবীণরা যেভাবে উদ্বুদ্ধ হলেন সে প্রসঙ্গে একটু আলোকপাত করি।
নভেম্বর মাস থেকে ” নদীর কাছে এসো ” কর্মসূচীতে মূলত প্রবীনদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল নদীর কাছে না এলে নদীর কষ্ট বুঝবো কি করে? দূর থেকে নয় নদীকে বুঝতে হলে নদীর কাছে আসতে হবে। কবি সাহিত্যিক বুদ্ধিজীবী গায়ক নাট্যকর্মী শিক্ষকরা দুবার নদীর কাছে গিয়েই উপলব্ধি করেন আত্রেয়ী ভাল নেই। আর সেই ভাল না থাকায় নিজেরাও দায়ী। আর ভাল রাখতে নাগরিকদেরও কর্তব্য পালন করতে হবে। তাই নিজেরাই তারিখ ঠিক করে নেমে পড়েন সাফাইয়ের কাজে। এটা একটা প্রতীকী নদী সাফাই। কিন্ত তাতে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন তরুণ রাও।পরেরবার তারাও যুক্ত হতে চাইছেন।প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই কাজে ধন্যবাদ জানানো হচ্ছে নাগরিকদের।এর আগে পড়ুয়াদের কাজে অনুপ্রাণিত হয়ে প্রশাসন নিজেরাই হাত লাগিয়েছিল নদীর কাজে। তাহলে এসবের গুরুত্ব নেই? এসবই তো মানুষকে, মানুষের চেতনাকে জাগিয়ে তোলার কাজ।যে কাজ প্রতিনিয়ত করে চলেছে দিশারী সংকল্প। এই কাজ যেমন মানুষকে সচেতন করতে করে থাকি তেমনি প্রশাসনকেও আমরা ক্রমাগত জানাতে থাকি।যেমন এক্ষেত্রে আমরা জানিয়েছিলাম দক্ষিণ দিনাজপুরের অতিরিক্ত জেলাশাসক ( সাধারণ) কৃত্তিবাস নায়েক কে।এর আগে যিনি প্রশাসনিক কর্তা ব্যক্তিদের নিয়ে আত্রেয়ী নদী সাফাইয়ের কাজে মূখ্য ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। তখন সেই কাজে অংশ নিয়েছিলেন তৎকালীন জেলাশাসক শরদ কুমার দ্বিবেদী, আরেক অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) মৃন্ময় বিশ্বাস, পৌরসভার তৎকালীন চেয়ারম্যান,কাউন্সিলর সহ অন্যান্য আধিকারিক গণ। প্রায় এক কিলোমিটার জায়গা জুড়ে আত্রেয়ী সদরঘাটের অংশ পরিষ্কার করে দেওয়া হয়েছিল।
এবার আমাদের আবেদনে সাড়া দিয়ে বালুরঘাট পৌরসভার প্রশাসক ঈশা মুখার্জি সপ্তাহে তিন দিন সাফাই কর্মীদের দ্বারা আত্রেয়ীর সদরঘাটের অংশ পরিষ্কার রাখার উদ্যোগ নিলেন। পৌরসভার এক্সিকিউটিভ অফিসার পিনাকী বিশ্বাস জানালেন সেকথা।এ এক ভিন্ন অভিজ্ঞতা। কোন কাজে লেগে থাকলে যে হয় এ যেন তার প্রমাণ। নদীর জন্য যে প্রশাসনও এমন ভাবতে পারে তার উদাহরণ বিরলতম। এভাবেই তো এগিয়ে আসতে হবে। এটা আমাদের একটা সাফল্য । কিন্ত তার থেকেও বড়ো কথা হলো নদীর সুরক্ষায় আরও পৌরসভা, আরও অন্য জায়গার প্রশাসন এমন ভাবতে উদ্বুদ্ধ হবে এমনটা আশা করা যায়। নদীকে অর্থাৎ আমাদের মাকে আমরা কিছুতেই অপরিষ্কার রাখবো না। সাধারণ মানুষ ও পৌরসভা- প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে নদী বাঁচুক।বাঁচুক ভবিষ্যত ।