‘কাঁদো নদী কাঁদো’: সময়ের আয়না- রুখসানা কাজল

অতিমারির দাপটে ধরিত্রীর এই শুদ্ধিকরণ অধ্যায়ে কথাসাহিত্যিক সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ এর ‘কাঁদো নদী কাঁদো’ উপন্যাসটি আবার পড়তে গিয়ে চমকে উঠলাম।বহু বছর আগে পড়েছিলাম। কিন্তু তখন যে ভাবনাটি আমার মনোজগতে ছায়া ফেলেছিল তা ছিল অতি সাধারণ। কয়েকটি সকরুণ চিত্র। মনে মনে কল্পনা করে নিয়েছিলাম, মরণাপন্ন একটি নদী, যার নাম বাঁকাল, তার কূলে গড়ে ওঠা কুমুরডাঙ্গা নামে কোন এক গ্রাম। তবারক নামের একজন ব্যক্তি পুঁথিপাঠের মত বলে চলেছে সেই গ্রামের নানা গল্প। সে গল্পের সুতো ধরে এসেছে অনেকগুলো চরিত্র। কেউ সবাক। কেউবা আড়ালমুখি এবং নির্বাক। তবে সব চরিত্রকে ছাড়িয়ে বড় হয়ে উঠেছিল বাঁকাল…

অদ্বৈত মল্লবর্মণ: তিতাস একটি নদীর নাম

তিতাস

।। পলাশ মজুমদার ।। ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ উপন্যাসের ভূমিকায় অদ্বৈত লিখেছেন, ‘তিতাস একটি নদীর নাম। তার কূলজোড়া জল, বুকভরা ঢেউ, প্রাণভরা উচ্ছ্বাস। স্বপ্নের ছন্দে সে বহিয়া যায়। ভোরের হাওয়ায় তার তন্দ্রা ভাঙ্গে, দিনের সূর্য তাকে তাতায়, রাতে চাঁদ ও তারারা তাকে নিয়ে ঘুম পাড়াইতে বসে, কিন্তু পারে না।’ এক. বাংলা সাহিত্য কেবলমাত্র একটি উপন্যাসের জন্য একজন লেখকের কাছে ঋণী থাকবে। উপন্যাসটির নাম—‘তিতাস একটি নদীর নাম’, আর তার অমর স্রষ্টা কল্লোলযুগের নিভৃতচারী এক অসাধারণ প্রতিভাধর লেখক অদ্বৈত মল্লবর্মণ (১৯১৪-১৯৫১)। জন্মেছিলেন বৃটিশ ভারতের অখণ্ড বাংলা প্রদেশের তৎকালীন কুমিল্লা জেলাধীন ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমার…

হামিদ কায়সার এর গল্প- ডুব

ডুব

‘কী রে জয়নাল, হইল?’ জয়নাল বলে, ‘হয় নাই।’ আটটা থেকে নয়টার এই সময়ে লোকে লোকে নাও ভইরা গেলেও হয় না জয়নালের, আয়নালেরও হয় না। লোক আরও চাই। আরও আরও লোক। লোকের ভেতরে লোক। লোকের উপরে লোক। যতভাবে ঠাসা যায়। লোকেরও যেন এসবে বিকার নাই। নয়টা সাড়ে নয়টার মধ্যে পৌঁছাতেই হবে টাউনে। কেউ খুলবে দোকান, কেউ করবে অফিস। ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি স্কুল-কলেজের পোলাপানও কিছু আসে। আর থাকে কিছু আলগা মানুষ। যাদের কোনো কাম-কাজ নাই। খাইব ফিরব ঘুরব। এ অফিসে সে বাসায় ঢুঁ মারব। তবে, এ সময়ে যারা আসে তাদের কারোরই হুঁশজ্ঞান থাকে…

আমার নদী মধুমতী ।। রুখসানা কাজল

মধুমতী

প্রায় চল্লিশ বছর আগের ঘটনা। রাগে দুঃখে অপমানে অভিমানে জন্মশহর থেকে শিকড় তুলে নিয়েছিল আমাদের পরিবার। কী যে মায়াবী সুন্দর ছিল শহরটি। শহরের গা ছুঁয়ে বয়ে যেত সাদা জলের এক নদী। যারা বয়স্ক তারা বলতেন, মরা মধুমতী। শান্ত শ্রীময়ী ধীর ছন্দের মধুমতী দুকূলে অজস্র শণবনের ঝোপঝাড় নিয়ে আমাদের জীবনের সাথে মিশে ছিল। ভোরে, সকাল, দুপুর বিকেল সন্ধ্যা এমনকি রাতেও বাপী,মা, দিভাই, আপুলিদের সাথে নদীপাড়ে ঘুরতে গিয়ে কতবার দেখেছি এ নদীকে। কুয়াশার দোপাট্টা পরে ধীরে ধীরে বয়ে যাচ্ছে ভোরের নদী। তার সাদা বুকে জলতরঙ্গের অনুচ্চ সুরের গুনগুনানি। নদীপাড়ের ঘাসেরা হাত পা…

আমার শৈশব নদী ।। হামিদ কায়সার

আমার

কোন্ নদীর সঙ্গে আমার প্রথম দেখা হয়েছিল, কোন্ নদী ছিল আমার প্রথম প্রেমিকা? আমি খুঁজি, স্মৃতি হাতড়ে ফিরি, বিভ্রম তৈরি হয়, একবার যদি বুড়িগঙ্গার শেষ বিকেলের জল চলকে উঠে তো, আরেকবার চিরিক মেরে উঠে দুপুরের ঝলমলানো তুরাগ। বুড়িগঙ্গা আমার নানাবাড়ির আর তুরাগ দাদাবাড়ির। জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই এতোবার নানাবাড়ি আর দাদাবাড়ি করেছি যে, আমি আসলে প্রথম কাকে দেখেছিলাম, তুরাগ না বুড়িগঙ্গাকে, সাব্যস্ত করা সত্যি কঠিন হয়ে উঠে। শেষে দ্বারস্থ হই মায়ের, মা চোখ বন্ধ করে বলে দেন, বুড়িগঙ্গা! হ্যাঁ, বুড়িগঙ্গাই হবে। মায়ের এভাবে গভীর আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলার কারণটা হলো, ঢাকা…

সে এক মায়াবী নদী ।। সৈয়দ কামরুল হাসান

মায়াবী

ফুলের গন্ধটা তীব্র হয়ে নাকে লাগে। হু হু করে যখন বাতাস বইতে শুরু করল ঠিক তখন ঘুম ভেঙ্গে যায় আমার। কিন্তু এই নৌকায় ফুলের গন্ধটা  কোত্থেকে আসবে বুঝতে পারিনা প্রথমে। পরে কারণটা ধরতে পারি ধীরে সুস্থে। আসলে আমি মায়ের কোলে শুয়ে ছিলাম। মায়ের কোলে শুয়ে আশৈশব পেয়েছি এই ফুলের ঘ্রাণ। বড় হয়ে যখন কারণটা বুঝতে পেরেছি, ততদিনে মা আমাদের মায়া ত্যাগ করে পরপাড়ে পাড়ি জমিয়েছেন। মায়ের পছন্দ ছিল জবাকুসুম তেল, বরাবর বাবা তাই বাড়ি এনে দিয়েছেন, মা সেই তেল মাখতেন চুলে। কিন্তু, কারণ সনাক্ত হবার আগেই সেই যে অবুঝ শিশুর…