বিভূতিভূষণের ‘ইছামতী’ : মহাজীবনের মেটাফোর- সৈয়দ কামরুল হাসান

ইছামতি

১. ১৯৪৭ সালের ১৭ জুলাই ছোটভাই নুটুবিহারী বন্দোপাধ্যায়কে লেখা এক পত্রে  বিভূতিভূষণ ‘অভ্যূদয়’ নামে সাময়িকীতে তাঁর ‘ইছামতী’ উপন্যাস ধারাবাহিকভাবে প্রকাশের কথা জানিয়েছিলেন। নিজের গ্রাম বারাকপুর, তৎসন্নিহিত নদী এবং এর আশপাশ, ইংরেজ নীল চাষী, তাদের পরিত্যক্ত স্থাপনা ইত্যাদি নিয়ে একটি উপন্যাস লেখার আকাঙ্ক্ষা তিনি পোষণ করেছিলেন, যখন তিনি প্রথম উপন্যাস ‘পথের পাঁচালী’ লিখছিলেন তখন থেকেই । এ-ব্যাপারে ১৯২৮ সালে তাঁর ডায়রী ‘স্মৃতির রেখায়’ তিনি লিখে রেখেছিলেন তাঁর আগ্রহের কথা। তাঁর ভাষায়: “ঐ আমাদের গ্রামের ইছামতী নদী । আমি একটা ছবি বেশ মনে করতে পারি – ঐ রকম ধূ ধূ বালিয়াড়ী ,পাহাড়…

সে এক মায়াবী নদী ।। সৈয়দ কামরুল হাসান

মায়াবী

ফুলের গন্ধটা তীব্র হয়ে নাকে লাগে। হু হু করে যখন বাতাস বইতে শুরু করল ঠিক তখন ঘুম ভেঙ্গে যায় আমার। কিন্তু এই নৌকায় ফুলের গন্ধটা  কোত্থেকে আসবে বুঝতে পারিনা প্রথমে। পরে কারণটা ধরতে পারি ধীরে সুস্থে। আসলে আমি মায়ের কোলে শুয়ে ছিলাম। মায়ের কোলে শুয়ে আশৈশব পেয়েছি এই ফুলের ঘ্রাণ। বড় হয়ে যখন কারণটা বুঝতে পেরেছি, ততদিনে মা আমাদের মায়া ত্যাগ করে পরপাড়ে পাড়ি জমিয়েছেন। মায়ের পছন্দ ছিল জবাকুসুম তেল, বরাবর বাবা তাই বাড়ি এনে দিয়েছেন, মা সেই তেল মাখতেন চুলে। কিন্তু, কারণ সনাক্ত হবার আগেই সেই যে অবুঝ শিশুর…

মুরাদনগরের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া তিতাস নদী এখন ধানিজমি

মুরাদনগরের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া তিতাস নদী এখন ধানিজমি

কুমিল্লার মুরাদনগরের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে তিতাস নদী। একসময়ের খরস্রোতা তিতাস এবং এর শাখাগুলো এখন মুরাদনগরবাসীর দুঃখ। শুকনো মৌসুমে কোথাও পানির দেখা মেলে না। এ সময় তিতাসের বুকে  ইরি-বোরো ধানের আবাদ করা হয়। অন্যদিকে বর্ষা মৌসুম শুরু হলেই দুই কূল ছাপিয়ে কয়েক লাখ মানুষকে জলাবদ্ধ করে রাখে এ নদী। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, নদীটির উৎপত্তি হয়েছে ভারতের অঙ্গরাজ্য ত্রিপুরায়। সেখানে বাংলা ভাষায় হাওড়া এবং স্থানীয় কোকবোরোক ভাষায় সাইদ্রা নামে নদীটির নামকরণ করা হয়েছে; কিন্তু বাংলাদেশে নদীটি তিতাস নামেই পরিচিত। ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় উৎপত্তি হয়ে নদীটি বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়া…

সাহিত্যের প্রাণপ্রবাহে নদী : মিল্টন বিশ্বাস

‘মানবজীবন সে তো/ গঙ্গায় ভাসন্ত বাছাড়ির নাও।/ ফুটো থাকলেই টানতে থাকে তলানিতে/ আবার—/ মানবজীবন সে তো/ বর্ষার জোয়ার ভাটা/ জলেঙ্গার জল।/ দু দণ্ড জোয়ার তো চার দণ্ড ভাটা/ চার দণ্ড সুখ তো আট দণ্ড দুঃখ।/ তবে অবাক হবার কিছু নেই।’ মানবজীবন ও নদীর সাদৃশ্য এভাবে উত্থান-পতন, ভাঙা-গড়ার রূপকে চিরকাল চিত্রিত হয়েছে। আর এভাবেই বিশ্বের সব ভাষায় লিখিত সাহিত্যের রূপকল্পে নদীর বহুমাত্রিক চিত্র আত্মপ্রকাশ করেছে। আদি মহাকাব্য মহাভারত-রামায়ণ কিংবা হোমারের ইলিয়াড-ওডিসি’র কাহিনি ব্যাপ্ত হয়েছে স্বর্গ-মর্ত্য-পাতাল জুড়ে। আর মর্ত্যের নদী সেখানে বিশাল অংশ দখল করে আছে। ধ্রুপদী সাহিত্যে তা ভারতীয় কালিদাস কিংবা…