পাপপুণ্যের বাস্তব অবাস্তবতায় ব্রম্মপুত্রের মাহাত্ম্য : রুখসানা কাজল

পাপপুণ্যের

মহামুনি শান্তনু। বুকের উষ্ণতায় দুহাতে জড়িয়ে নিয়েছেন সদ্য ভূমিষ্ঠ এক জাতককে। শ্রদ্ধা ভক্তি এবং অজানা এক শুভকামনায় উদ্বেল তার মন। ঈশ্বরের লীলা বোঝা বড় দায় ! তার স্ত্রী অমোঘার গর্ভে স্রষ্টা ব্রম্মার ঔরসে জন্ম হয়েছে এ সদ্য জাতকের। শিশুটি একটি জলপিন্ড। শান্তুনু পরম মমতায় ব্রম্মার পুত্রকে নিয়ে চলে আসেন হিমালয়। কৈলাস, গন্ধমাদন, জারুধি ও সম্বর্তক নামে চারটি পর্বত। যেন চারজন মা ভূমিতলে মেলে দিয়েছেন তাদের নিরাপদ মাতৃক্রোড়। বড় পবিত্র আর পূণ্য এই ভূমিতল। আকাশে বাতাসে ধ্বনিত হচ্ছে মঙ্গলবার্তা। শান্তুনু শিশু জলপিন্ডকে অত্যন্ত সযত্নে এদের মাঝখানে সৃষ্ট জলকুন্ডে রেখে ফিরে আসেন…

ফয়সাল আহমেদ সম্পাদিত নদী বিষয়ক বই- ‘প্রিয় নদীর গল্প’ প্রকাশিত

ফয়সাল

রিভার বাংলা সম্পাদক ও  লেখক, গবেষক ফয়সাল আহমেদ সম্পাদিত নদীবিষয়ক বই ‘প্রিয় নদীর গল্প’ প্রকাশিত হয়েছে। সৃজনশীল প্রকাশনা সংস্থা ‘জাগতিক প্রকাশন’ বইটি প্রকাশ করেছে। অবিমৃশ্যকারীদের দুর্বুদ্ধিতে সাময়িক লোভ ও লাভের হিসেব বড় করে দেখতে গিয়ে স্বাভাবিক নদীগুলোর সঙ্গে যথেচ্ছচারের ত্রæটি করেনি সভ্য মানুষ! আরও মর্মান্তিক যে, উন্নয়নের নামে বিরামহীন আত্মঘাতী নদী-শাসন! অথচ নদ-নদীর ইতিহাসই বাঙলার ইতিহাস। নদ-নদীর তীরে তীরে মানব সভ্যতা অগ্রগতির চিহ্ন এঁকে রাখে; মানুষের বসতি, কৃষির পত্তন, প্রাম-নগর, বাজার-বন্দর, শিল্প-সাহিত্য, ধর্মকর্ম সবকিছুরই বিকাশ ঘটায়। দুর্বৃত্তদের বিপরীতে কল্যাণকামী মানুষের মননে রক্তক্ষরণ সচল রাখতে পারছে না নদীর নাব্যতা। আশাবাদী মানুষও…

‘কাঁদো নদী কাঁদো’: সময়ের আয়না- রুখসানা কাজল

অতিমারির দাপটে ধরিত্রীর এই শুদ্ধিকরণ অধ্যায়ে কথাসাহিত্যিক সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ এর ‘কাঁদো নদী কাঁদো’ উপন্যাসটি আবার পড়তে গিয়ে চমকে উঠলাম।বহু বছর আগে পড়েছিলাম। কিন্তু তখন যে ভাবনাটি আমার মনোজগতে ছায়া ফেলেছিল তা ছিল অতি সাধারণ। কয়েকটি সকরুণ চিত্র। মনে মনে কল্পনা করে নিয়েছিলাম, মরণাপন্ন একটি নদী, যার নাম বাঁকাল, তার কূলে গড়ে ওঠা কুমুরডাঙ্গা নামে কোন এক গ্রাম। তবারক নামের একজন ব্যক্তি পুঁথিপাঠের মত বলে চলেছে সেই গ্রামের নানা গল্প। সে গল্পের সুতো ধরে এসেছে অনেকগুলো চরিত্র। কেউ সবাক। কেউবা আড়ালমুখি এবং নির্বাক। তবে সব চরিত্রকে ছাড়িয়ে বড় হয়ে উঠেছিল বাঁকাল…

আমার নদী মধুমতী ।। রুখসানা কাজল

মধুমতী

প্রায় চল্লিশ বছর আগের ঘটনা। রাগে দুঃখে অপমানে অভিমানে জন্মশহর থেকে শিকড় তুলে নিয়েছিল আমাদের পরিবার। কী যে মায়াবী সুন্দর ছিল শহরটি। শহরের গা ছুঁয়ে বয়ে যেত সাদা জলের এক নদী। যারা বয়স্ক তারা বলতেন, মরা মধুমতী। শান্ত শ্রীময়ী ধীর ছন্দের মধুমতী দুকূলে অজস্র শণবনের ঝোপঝাড় নিয়ে আমাদের জীবনের সাথে মিশে ছিল। ভোরে, সকাল, দুপুর বিকেল সন্ধ্যা এমনকি রাতেও বাপী,মা, দিভাই, আপুলিদের সাথে নদীপাড়ে ঘুরতে গিয়ে কতবার দেখেছি এ নদীকে। কুয়াশার দোপাট্টা পরে ধীরে ধীরে বয়ে যাচ্ছে ভোরের নদী। তার সাদা বুকে জলতরঙ্গের অনুচ্চ সুরের গুনগুনানি। নদীপাড়ের ঘাসেরা হাত পা…

নদী কীর্তিনাশা ।। রুখসানা কাজল

কীর্তিনাশা

নীহারিকা আফরোজ ইঞ্জিন বোট থেকে পদ্মার কোলে ঢলে থাকা বিকেল দেখে অবাক হয়ে যায়। জমাট হলুদ পাকা চালতারঙের আকাশ। নদী আমোদিত করে আকাশের টকটক ঘ্রাণ ভেসে আসছে। প্রিন্টেড ওড়নার নেকাব খুলে মনে মনে ভাবে নীহারিকা, ইস্যি রে! একটুখানি নুনঝাল পেলে কি যে মজা হত এখন ! চটাস করে একটুখানি টক আকাশ ভেঙ্গে চটকেমটকে চেটেখাওয়া যেত! কাল্পনিক লোভ সামলে নদী দেখে নীহারিকা। পদ্মা এখানে বেশ শান্ত। কেমন শান্তি শান্তি হয়ে বয়ে যাচ্ছে অজস্র জলরাশি। পাশ থেকে চলে যাওয়া ইঞ্জিন বোটের ছুটেআসা ঢেউ ছাড়া পদ্মার কোনো অস্বাভাবিক নড়চড় নেই। ভাঁজে ভাঁজে একই…