নদী বিধৌত জেলা পটুয়াখালীতে আমার জন্ম হলেও আমাদের বাড়ির আশেপাশে কোনো নদী নেই। তবুও মনের দিক থেকে নদী ছিলো আমার অসম্ভব পছন্দের। শৈশব-কৈশোরে নদীকে ঘিরে অনেক স্বপ্নও ছিলো আমার। কিন্তু শৈশব-কৈশোরের সব স্বপ্নকী সবার পুরণ হয় ? সে যা-ই হোক অন্যদের কথা না-ইবা টানলাম। আমার সে সব স্বপ্ন আজও অধরাই পরে রইলো। তবে খাল-বিল, নদী কিংবা জল ও মাছের প্রতি অসম্ভব রকমের টান আজও আমার রয়েছে। কিন্তু কি আর করার শহরে বসবাস। আচ্ছা সেই শৈশবেই আবার ফিরে যাওয়া যাক। ঘুরে আসি কতক্ষণ সেই ছেলেবেলার কথকতা নিয়ে। যা বলছিলাম যে আমাদের…
Author: রিভার বাংলা ডটকম
সে, আমি ও আত্রেয়ী ।। সুদর্শন ব্রহ্মচারী
নদীটা চুপসে গেছে। রতন হালদার মন খারাপ করে বাউলার ভেক ধরেছে। জাল বুনতে বুনতে সে গুনগুন করে। হাঁসগুলো দল বেঁধে যেতে যেতে হঠাৎ ছড়িয়ে পড়ে। দু’এক জোড়া উল্টো দিকে মাঝনদিতে ছুটে যায়।নীল রঙের মাছরাঙা উড়ে এসে ছোঁ মেরেই পালায়।পানকৌড়ি ডূব মেরে সাঁতরে ছুটে পালায়।নিরিবিলিতে হংসমিথুন দেখতে দেখতে বাউলা রতন গান ধরে, “জ্বলে পুড়ে মরল রাধা যৌবন জ্বালায় যখন ডাকল বাঁশি তখন রাধা যাবে যমুনায়…।” প্রেমপূজারী বাউলা একা একা দেহতত্বের পাঠ নেয়।জল চিকচিক করে। নৌকায় বাঁধা বাঁশের মাথায় সাদা সাদা মাছরাঙা চড়ুই পাখির মতো প্রেম করে উড়ে যায়। বাঁশির সুরে নদী…
মরা নদীর গল্প ।। অনিন্দ্য আাসিফ
সাপে তার ভয় ছিল না কখনও। এখনও নাই। লেজ ধরে মাথার উপর চড়কির মতো ঘুরিয়ে প্রথমে হঠাৎ শূন্যে ছুঁড়ে মারা, তারপর অদৃশ্য করে দেওয়া ছিল তার বাম হাতের খেলা। সামুদ্রিক জেলেদের মতো। জালে-পড়া বিষাক্ত সাপ খেলাচ্ছলে ছুঁড়ে ফেলে তারা। কখনও কখনও জানেই না, কী ভয়ানক খেলা অনায়াসে খেলে ফেলল। কিন্তু এটা সাপ না। শুকনো কচুরিপানায় যে শব্দ, সেটা ইঁদুর হতে পারে। উৎকট একটা গন্ধে এবার মনে হয়, এটা আসলে একটা চিকা। বয়স তার দৃষ্টি আর শ্রবণশক্তির কিছুটা হরণ করেছে, কিন্তু অনুপাতে কমই। তার সামনে – অদূরে কাঁচা কচুরিপানা আর নদীর…
কালনির স্নিগ্ধতায় আমার ছেলেবেলা ।। আলম মাহবুব
কালনি! এই কালনি নামের সাথে মিশে আছে হাজার বছরের ইতিকথা। আমি বলছিলাম কিশোরগঞ্জ জেলার হাওর বেষ্টিত অষ্টগ্রামের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া মেঘনার শাখা কালনি নদীর কথা। আবহমান গ্রামবাংলার নদীর আত্মপ্রকাশে চিরচেনা এই ভাটির জনপদের কালনি নদীর তীরেই গড়ে উঠেছে বহু জনপদ, আছে অনেক রত্নগল্প। যা আজ কিছুটা তুলে ধরতে চেষ্টা করছি। কিশোরগঞ্জের সীমান্ত ঘেঁষে থাকা এই নদীটি কোন একসময় খরস্রোতা নব যৌবনায় ভরপুর ছিলো। বিস্তীর্ণ হাওরের বুকের প্রশস্ত সবুজে কৃষকের ক্লান্তি, হতাশার একমাত্র অবলম্বন এই কালনি। যার উৎপত্তি কিশোরগঞ্জ জেলা ও বি- বাড়িয়া জেলার সীমান্ত নির্ধারণকারী মেঘনার শেষ ভাগ হতে…
নদীর নাম মুজনাই ।। শৌভিক রায়
নদী মানেই প্রবাহ। আর প্রবাহ মানে জীবন। তাই নদী বাদে জীবনকথা সম্পূর্ণ হতে পারে না। আবার, জীবনসঙ্গীত গায় কিন্তু তথাকথিত ব্রাত্যজনেরা। আবহমানকাল ধরে তারাই সচল রেখেছে জীবনের জয়যাত্রা। ঠিক একইভাবে, নামীদামী বৃহৎ নদ-নদীর পাশাপাশি, ছোট্ট ছোট্ট নদীরা ধরে রেখেছে সভ্যতার মূল চালিকাশক্তিকে। পশ্চিমবঙ্গের উত্তরদিকে, জানা-অজানা অজস্র নদীর রুদ্ধকথা সেই শক্তিকেই বিবৃত করছে। ভুটান পাহাড়ের দক্ষিণ বনাঞ্চলে আট হাজার উচ্চতায় জন্ম নেওয়া ‘রঙ্গোরি’ নামের নদীটিও ঠিক এমনই। তবে উৎসমুখের নামে নয়, তার অধিক পরিচিতি ‘মুজনাই’ নামে এবং এই উৎস নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। কেননা উৎস থেকে যে প্রবাহ দেখা যায় তার খাত…
প্রিয় নদী ।। মনোনীতা চক্রবর্তী
জল উঁচু-নীচু হলে বড়ো মায়া পড়ে যায়। জল যখন খেয়ালে গান গায় এবং গাইতে-গাইতে যখন হঠাৎ তার ভয়েস-চোকড হয়ে যায়; যখন কান্নাগুলো পোশাক পরতে গিয়ে আসলে পোশাক খুলে ফেলে; দৃষ্টিলক্ষ্য যখন ভেঙে টুকরো-টুকরো হয়ে যায়, যখন লাজুক চাঁদের ধারালো চোখের ছায়া জলের ওপর পরে, যখন একটা উত্থিত দুপুর বিকেলের যৌথ-গান হয়ে ঝরে পড়ে আর চরাচর মুখর হয় সভ্যতা-গানে.. ঠিক তখন পরিকল্পনাহীন ছুটে যাই প্রিয় নদীটির কাছে। হ্যাঁ, খেয়ালে-আড়ালে; অভাবে-অভিমানে ধুমধাম প্রেমে ভিজলে শ্বাসের ওঠা-নামা যেমন করে হয়, ঠিক সেভাবেই আমি ছুটে যাই তার কাছে। প্রিয় নদীটির কাছে। ডক নদী; সে-নদীটির…
টাঙ্গন : আমার প্রিয় নদী ।। ড. অমর কুমার পাল
টাঙ্গনের সঙ্গে আমার সম্পর্ক মায়ের সঙ্গে সন্তানের সম্পর্কের মতো। টাঙ্গন আমাকে শিখিয়েছে মানব জগতের সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত জীবজগৎকে ভালোবাসতে। টাঙ্গন আমার অন্তরের ক্ষুদ্রতাকে দুইহাতে সন্তর্পনে আলগোছে সরিয়েছে। মনের দৈন্যতা, সংকীর্ণতা, হীনমন্যতা ঝেড়ে ফেলে জীবনযুদ্ধে কীভাবে অনমনীয় মনোভাব নিয়ে মোহনার দিকে এগিয়ে যেতে হয় তার পাঠ আমি টাঙ্গনের কোলে বসে নিয়েছি। টাঙ্গন নামক অখ্যাত নদীটি তার সমস্ত সত্তা দিয়ে চেষ্টা করে যায় আজও রাইখোরের জোগান দিয়ে আমাদের রসনাকে আর মৎসজীবীদের আর্থিক দিককে তৃপ্ত করতে। দারিদ্র্যতা তার আলুথালু বেশ ও বারিহীন রুক্ষকেশ দেখে একনজরেই ঠাহর করা গেলেও তা নিয়ে তার নেই কোনও…
নদীর নাম বলাকুট ।। মনির হোসেন
সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক তাঁর ‘আমার পরিচয়’ কবিতায় লিখেছেন-‘তেরশত নদী শুধায় আমাকে কোথা থেকে তুমি এলে?’ নদীর কলকল ধ্বনির এমনই প্রশ্নে আমি বলবো, ‘আমি এসেছি বলাকুট নদীর তীর থেকে। আমার স্মৃতিময় বলাকুট। আমার শৈশব-কৈশোরের বলাকুট। কুশিয়ারা নদীর অববাহিকায় বহমান বলাকুট এর জলে আমার তৃষ্ণা মিটে। বলাকুট নদী নয়, বলাকুট আমার মা। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের ব্রহ্মপুত্রের তীরে আমার জন্ম। বাবার কর্মস্থলের সুবাদে ইটনা থানার জয়সিদ্ধিতে বসবাস। সুদীর্ঘসময়, আবাল্য, শৈশব-কৈশোর দুরন্তপনার সবগুলো অধ্যায় কেটেছে বলাকুটের তীরে শান্তির নীড়ে। নদীর উৎপত্তিস্থল সুনির্দিষ্ট না হলেও হবিগঞ্জ জেলার আজমেরীগঞ্জ এর নিকটে কুশিয়ারা বা কালনী…
সুন্দরী সোমেশ্বরী ।। আব্দুস সামাদ নয়ন
নদ-নদী এদেশের সৌন্দর্যের অন্যতম এক অনুষঙ্গ। তেমনি অপার্থিব সৌন্দর্যের রাণী নেত্রকোণা জেলার সোমেশ্বরী নদী। এ নদীকে স্মরণ করতে গেলে শ্রদ্ধাবনত চিত্তে শুরুতেই স্মরণ করতে হয় টঙ্ক আন্দোলনের বিপ্লবী নেত্রী হাজং বিদ্রোহে সর্বোচ্চ শ্রদ্ধেয় স্বজন, যিনি হাজংদের কাছে আজও হাজং মাতা সেই শহীদ রাশিমনি হাজং সহ শঙ্খমণি, রেবতী, নীলমণি, পদ্মমণি ও আরো অনেক শহীদদের নাম। যারা সোমেশ্বরী নদীর ধারে টঙ্ক আন্দোলনের জন্য শহীদ হন। এ ছাড়া স্মরণ করতে হয় টঙ্ক আন্দোলনের প্রয়াত বিপ্লবী সর্বজন শ্রদ্ধেয় কমরেড মনি সিং কে। যিনি এই সোমেশ্বরীকে ভালোবেসে বড় হয়েছিলেন। এক অসাধারণ মায়াবী সুন্দরী নদী সোমেশ্বরীর…
যে নদীকে কেবল ভাসিয়ে দেওয়া গেল ।। সুপ্রতিম কর্মকার
লেখা শব্দগুলো ভেসে বেড়াচ্ছে। নৌকার খোলের মত করে। জলের ওপর বা পানির ওপর। ঠিক এখনো জানি না, জলের ওপর পানি! না পানির ওপর জল! শুধু এটাই জানি, ওই দুটো গ্যাসীয় পদার্থ একে অন্যের সঙ্গে মিলে মিশে তৈরি করে একটা তরল পদার্থ। জীবন বাঁচাতে ঐ রঙহীন তরলের মতন আর বিকল্প তরলের জন্ম হল না, এই বিশ্ব চরাচরে। আর সেই না হওয়ার কারণেই জলের মতন সহজ আর জলের মত দামীও কেউ হল না। জীবনকে প্রজাপতির মত রঙ্গিন দেখতেই পছন্দ করে সবাই। কিন্তু জল তার কোন রঙ নেই। কোন গন্ধ নেই। কোন স্বাদ…
সে এক মায়াবী নদী ।। সৈয়দ কামরুল হাসান
ফুলের গন্ধটা তীব্র হয়ে নাকে লাগে। হু হু করে যখন বাতাস বইতে শুরু করল ঠিক তখন ঘুম ভেঙ্গে যায় আমার। কিন্তু এই নৌকায় ফুলের গন্ধটা কোত্থেকে আসবে বুঝতে পারিনা প্রথমে। পরে কারণটা ধরতে পারি ধীরে সুস্থে। আসলে আমি মায়ের কোলে শুয়ে ছিলাম। মায়ের কোলে শুয়ে আশৈশব পেয়েছি এই ফুলের ঘ্রাণ। বড় হয়ে যখন কারণটা বুঝতে পেরেছি, ততদিনে মা আমাদের মায়া ত্যাগ করে পরপাড়ে পাড়ি জমিয়েছেন। মায়ের পছন্দ ছিল জবাকুসুম তেল, বরাবর বাবা তাই বাড়ি এনে দিয়েছেন, মা সেই তেল মাখতেন চুলে। কিন্তু, কারণ সনাক্ত হবার আগেই সেই যে অবুঝ শিশুর…
প্রাণের দোসর কালীগঙ্গা ।। সন্তোষ কুমার শীল
জীবনের দৈনন্দিনতাটুকু আড়াল হলেই কল্পনায় শুনতে পাই দশদিক কাঁপিয়ে স্টীমারের ভোঁ বেজে উঠছে। অসংখ্য যাত্রীর ওঠানামায় কলমুখর হয়ে উঠেছে কালীগঙ্গার তীর। দারুণ নস্টালজিয়া ভর করে। ছুটে যাই নদীর তীরে। দেখি বিশ্বকবি একটা চেয়ার টেনে জানালার ধারে বসে আনমনে লিখে চলছেন। দখিনা বাতাসে তাঁর আলখেল্লা উড়ছে, শুভ্র দাড়ি-চুল বিপর্যস্ত। কোনদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই তাঁর, ধ্যান-মৌন ঋষি সৃষ্টিশীলতায় মগ্ন। তাঁকে ঘিরে রয়েছে একটা উজ্জ্বল জ্যোতি। হ্যাঁ, সেদিনের খরস্রােতা কালীগঙ্গার বুকের ওপর দিয়ে তুমুল আলোড়ন তুলে চলত কোলকাতা থেকে বরিশালগামী স্টীমার “সরোজিনী”। রবীন্দ্রনাথের মেজদা জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর বিলেতি কোম্পানীর সাথে পাল্লা দিয়ে এই জাহাজের ব্যবসায়…