।। দীপাঞ্জন দে ।। অঞ্জনা হলো আমাদের রাজ্যের প্রাচীন নদীমাতৃক জনপদ নদিয়া জেলার একটি মৃতপ্রায় নদী। অঞ্জনাকে খাল বলেও অনেকে অভিহিত করে থাকেন। যাইহোক, আমরা এই নিবন্ধে সেই বিতর্কে না গিয়ে অঞ্জনা বাঁচানোর আন্দোলন সম্পর্কে কিছু কথা জেনে নেব। নদিয়া-মুর্শিদাবাদের অন্যতম প্রধান নদী জলঙ্গির ধারা থেকেই অঞ্জনার সৃষ্টি। আর অঞ্জনা মিশেছে চূর্ণী নদীতে গিয়ে। জলঙ্গির শাখা নদী হলেও, অঞ্জনার সাথে জলঙ্গির যোগসূত্রতা ছিন্ন হয়েছে অনেক আগেই। জেলা সদর কৃষ্ণনগর হলো অঞ্জনার জন্মস্থান। কিন্তু সেখানে আজ অঞ্জনা পুরোপুরি মৃত। কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে অঞ্জনার খাত প্রত্যক্ষ করা যায় বটে, কিন্তু সেখানে অঞ্জনা…
Category: নদী কথা
বরাকর একটি নদীর নাম ।। অতনু রায়
নিজের দেশের নদ-নদীর প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা মেশানো এক আত্মীয়তাবোধ থাকে। নিজের দেশের নদীর কথা বলতে, শুনতে তার ভালো লাগে।ছোটবেলার পরিচিত নদীকে কেউ কোনোদিন ভোলে না।সেই কোন প্রাচীন কাল থেকেই বহতা নদীর সাথে, চলমান জীবনের এক আশ্চর্য সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়। নদীই তো সভ্যতাকে লালন করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আমাদের পশ্চিমবাংলাতে প্রায় ৯৬ টি নদ-নদী, খাল আছে যেগুলোর সংস্কার করা হলে, জনগনের প্রভূত কল্যাণ হবে। আজকের দিনে প্রকৃতি এবং পরিবেশ বাঁচানোর আন্দোলনের সাথে সাথে, নদী বাঁচাও আন্দোলনও ক্রমশ গতি পাচ্ছে। সেই জোয়ারে পা-মেলানোর তাগিদে এবং মানুষকে সচেতন করে তোলার জন্যই…
বাড়ির পাশে সিঙ্গুয়া নদী ।। এম জে এইচ বাতেন
ছোটকাল থেকে শুনে আসছি নদীমাতৃক দেশ বাংলাদেশ। এদেশের মানুষের জীবনও নদীকেন্দ্রিক। নদীর সাথে মানুষের সম্পর্ক মায়ের মতো। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এসব নদ-নদীর ভূমিকা অপরিসীম। এদেশে নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠেছে সর্বাধিক জনবসতি। নদীর সঙ্গে মানুষের জীবন-জীবিকা, সুখ-দুঃখ, আবেগ-ভালোবাসা জড়িত রয়েছে। হাজার বছরের গ্রামীণ ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিতেও রয়েছে নদ-নদীর প্রভাব। নির্বাচনের সময় নদীও রাজনৈতিক অঙ্গনে নদীর দুই পাড়ের মানুষের মধ্যে এক ধরনের বিভাজন তৈরি করে। নদীর এপার ও ওপারের বিষয়-আশয় নিয়ে চায়ের দোকানে চলে নানান যুক্তি-তর্কের ঝড়। মনে হয় যেন নদী ও মানুষ মিলেমিশে একাকার। তেরোশত নদীর দেশ বাংলাদেশ। যার মধ্যে…
আমার প্রিয় নদী সুবর্ণরেখা ।। সুকন্যা দত্ত
নদীর সাথে আমার প্রথম সখ্যতা গড়ে ওঠে তার দর্শনে নয় শ্রবণে। শুনতে অদ্ভুত লাগলে ও একেবারেই সত্যি। তখন আমার বয়স আড়াই। দার্জিলিং মেল ট্রেন এ উত্তরবঙ্গে মামাবাড়ি যাওয়ার পথে, ফারাক্কাব্রীজ পার হওয়ার সময় প্রচন্ড শব্দের মাঝে ও রাতের আঁধারে কান পেতে শুনতে পেয়েছিলাম লক গেট এর ভিতর দিয়ে গঙ্গার জল স্রোতের কলতান। ব্যাস ঐ শব্দ শুনেই নিজের অজান্তে ভালোবেসে ফেলি নদীকে। তারপর ওই যাতায়াতের পথে আমার কাছে সবচেয়ে আকর্ষনীয় হয়ে উঠেছিলো রাতের অন্ধকার ভেদ করে নদীকে দেখার ইচ্ছেটা। নদীকে প্রথম দেখি জলপাইগুড়িতে। তিস্তার সাদা বালুকায় বসে জলের ওঠা নামা দেখতে…
ও নদী বন্ধুয়ার খবর এনে-দে ।। বঙ্গ রাখাল
নদীর কথা মনে আসলেই প্রথমে বাবার কথা মনে পড়ে। বাবা বলতেন, তোর দাদাজান ছিল একজন মাছুড়েরে মুনি। যেখানেই মাছ মারার কথা শোনতেন তিনি সেখানেই চলে যেতেন। বাবার মুখেই শুনেছিলাম আমাদের গ্রামের তিনজন মানুষ এক বজ্রপাতেই মারা গিয়েছিল সেটাও ছিল কোন এক নদীতে মাছ মারতে যাওয়ার ঘটনা। আমার যতদূর মনে পড়ে, এটাই বুঝি নদীর সাথে পরিচিত হওয়ার প্রথম সূত্র। আবার যখন দ্বিতীয় কি তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ি তখন কবিতা পড়তাম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের- আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে। যাক সে সব কথা। নদীর কথা শুনেছি এটাই…
ছোট যমুনার অর্তনাদ ।। মোস্তাফা-আল-মেহমুদ রাসেল
আমি বাংলাদেশের এক ছোট্ট নদী, নাম আমার ছোট যমুনা। আমার অনেক দুঃখ-কষ্ট। এক সময় আমার অনেক সুখ ছিল। আজ আমি সেসব কিছু কথা তোমাদের বলবো। আমি বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলায় ইছামতি নদী পার্বতীপুর উপজেলার মোমিনপুর ইউনিয়নে ছোট যমুনা নামধারণ করে নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নে আত্রাই নদীতে পতিত হয়েছি। আমি চিরিরবন্দর, পার্বতীপুর, ফুলবাড়ি, বিরামপুর. হাকিমপুর, পাঁচবিবি, জয়পুরহাট সদর, ধামইরহাট, পত্নীতলা, বদলগাছি এবং নওগাঁ সদর উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছি। সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা দেশ হিসেবে বাংলাদেশের খ্যাতির পেছনে আমার অবদান কম নয়। আমার কারণেই তৈরি হয়েছে অববাহিকা। গড়ে উঠেছে জনবসতি,…
আমার প্রিয় নদী : রাজর্ষি চৌধুরী
জীবন-নদী চলছে আঁকেবাঁকে, প্রতিটি বাঁকেই যেন কোনো গল্প লুকিয়ে থাকে। নদী-গল্প শোনাবো তোমায় আজ জীবন স্রোতের সর্পিলাকার পথে- হ্যাঁ ঠিকই আজকের বিষয় আমার প্রিয় নদী। আসলে এই প্ৰিয় শব্দটির মধ্যে অদ্ভুত একটা আন্তরিকতা লুকিয়ে থাকে তাই বিষয় যখন প্রিয় নদী সেক্ষেত্রে যার স্রোতের আঁচলে-শাসনের দৃঢ়তায় ছোট থেকে বড় হয়েছি সেই নদীর থেকে প্রিয় আর কেই বা হতে পারে? ঠিক ধরেছেন আমি আমার শহর গঙ্গারামপুর এর ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া নদী পূর্ণভবার কথাই বলছি। আমার জন্ম এই জেলাতেই, নদীর প্রতিটা বাঁক, গভীরতা, প্রতিটা রূপ আমার জানা।বাড়ি থেকে নদীর দূরত্ব খুব জোর…
নদীকথা ।। বিনীতা সরকার
নদী মানে একটি নিখাদ ভালবাসার ছোঁয়া। নদীর সতত প্রবাহিত জলধারা আমাদের জীবনে আশীর্বাদের মতো। নদী মানে জীবন। এই নদীর সঙ্গেই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িয়ে আছে গ্রামীণ, শহুরে সব মানুষেরই জীবন কাহিনী। নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে প্রাচীন বাংলার অনেক শহর। এই নদীর তীরে গড়ে উঠেছে অনেক নগর, অনেক জনপদ। তাই নদীকে বাদ দিয়ে জীবন ভাবা যায় না। ফারাক্কার পাশ দিয়ে বহতা গঙ্গা নদী পশ্চিমবঙ্গকে দু’টি ভাগে ভাগ করেছে। উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গ। উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় জেলা জলপাইগুড়ি। জেলার উত্তর অংশে হিমালয়ের পাদদেশ অঞ্চল। উত্তরের উঁচু অংশের জমির ঢাল দক্ষিনে নেমে এসেছে। এর…
লাবন্যমতী একটি নদীর নাম
রিভার বাংলা’র বৈশাখী আয়োজনে লিখেছেন, কলকাতার নদী আন্দোলনের সংগঠক অনুপ হালদার – সম্পাদক ভারতবর্ষ নদী মাতৃক দেশ। অর্থাৎ এই সভ্যতার জন্মদাত্রী নদী।পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে এই নদীর প্রভাব আরো বেশি ভাবে লক্ষ করাযায়।নদী যেমন এদেশের সমাজ, সভ্যভায়, সংস্কৃতি তে বিরাজমান তেমনই আমাদের মনের মনি কোঠায় নদী চীরকাল ই জায়গা করে নিয়েছে। নদীর সাথে আমাদের সম্পর্ক খুবই গভীর ও নিবিড়।আগেও মানুষ নদী কে ব্যবহার করে এসেছেন নৌকা দিয়ে, সেচ দিয়ে, মাছধরে,কিন্তু বিগত কয়েক দশকে আমাদের পুঁথিগত শিক্ষা আমাদের প্রকৃতির প্রতি সেই শ্রদ্ধার জায়গা কে দুরে সরিয়ে দিয়ে আমাদের ঔদ্ধত্য কে বড় করে তুলেছে প্রকৃতির সাথে…
নববর্ষের প্রত্যাশা : ভালো থাকবে আমার নদী সুতি
রিভার বাংলা’র বৈশাখী আয়োজনে কিশোরগঞ্জ জেলার তাড়াইল উপজেলাস্থ সুতি নদী নিয়ে লিখেছেন নদীকর্মী আফজল হোসেন আজম।- সম্পাদক আজ চৈত্রের শেষ দিন। কেমন জানি সাজ সাজ রবে মেতে উঠেছে আমার দুই পাড়ের বাঙালী। তাদের স্বত্বা নিয়ে লড়ছে বুঝি।আর্য আর অনার্যদের ঝাঁপি মাথায় নিয়ে একি আনন্দের নববর্ষ! ১লা বৈশাখ ১৪২৬ বংঙ্গাব্দ। শুভ নববর্ষ। বাঙালী স্বত্তার একটি দিন। সারাবিশ্বের বিস্ময়! বাঙ্গালী ওরা।আমি সূতী।ওদের স্বত্তার অংশীদার। পিতা নরসুন্দার বড় মেয়ে। আমার বুঝি নববর্ষ নেই। আমি তোমাদেরি মেয়ে। কেমন সুন্দর তুলতুলে নামটি রেখেছিল দাদা ব্রক্ষ্রপুত্র। যৌবনে লালপাঁড়ের শাড়ী পড়তাম। কোমল সূতার বুননের।বাঙ্গালী তাঁতীদের হাতের নিখুঁত…
ফুলেশ্বরীর আত্মকথা
নদীকথা: আমি ফুলেশ্বরী। স্বাধীন দেশের পরাধীন একটি নদী। আমার জন্ম কবে আমি জানি না। আমি যখন বাল্যশিক্ষা বইপড়ি তখন একদিন দাদুর মুখে শুনেছি আমার জন্মক্ষন। দাদুভাই ব্রহ্মপুত্রের কোলে শুয়ে শুনেছি আমার জন্মকাল। দাদুভাই বলেছে, লক্ষ বছর আগে তার কোলে জন্ম নেয় তার ছেলে নরসুন্দা। এই নরসুন্দার কোলে আমার জন্ম। আমরা আমাদের বাবা নরসুন্দার দুটি নয়নের মণি ফুলেশ্বরী ও সূতী নদী। আমাদের দু’বোনের মধ্যে আমি ছোট। এইতো গেলো জন্ম ইতিহাস। এরপর আমরা দু’বোন ধীরে ধীরে বড় হতে থাকি। রুপ যৌবণ আর ঢেউয়ের খেলায় মাথিয়ে রাখি চারপাশের প্রতিবেশী ভাইবোনদের। কিশোরগঞ্জের তাড়াইলে আমাদের দু’বোনের…
মহানন্দা মহা আনন্দে একদমই নেই : মহানন্দা এখন নিরানন্দা
সম্প্রতি সংগ্রিলা দার্জিলিং আন্তর্জাতিক সাহিত্য উৎসবে অংশ নিতে শিলিগুড়িতে গিয়েছিলেন তুহিন শুভ্র মন্ডল । সেখানে চার দেশের বিশিষ্ট জনেরা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে উঠে এল নদীর প্রসঙ্গ। চব্বিশ বছর ধরে শিলিগুড়ির প্রধান নদী মহানন্দা দেখছেন তিনি। ফিরে এসে রিভার বাংলা’র পাঠকদের জন্য মহানন্দার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে লিখলেন – আজ প্রায় পঁচিশ বছর ধরে মহানন্দা নদীকে দেখছি ।বলা যায় একেবারে কাছ থেকে দেখছি। ভূগোল ও ফলিত ভূগোলের ছাত্র হওয়ায় প্রথমে মূলত: ভৌগলিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতাম। পরে পরিবেশ বিজ্ঞান আমার বিষয় হিসাবে যুক্ত হওয়ায় নদীকে পরিবেশ কেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গী থেকে দেখতেও শুরু করেছি। চিরকালই বিশ্বাস করেছি…