মহাদেব ও ইছামতীর গল্প ।। সুজয় চক্রবর্তী

মহাদেব

বছরকয়েক ধরে শীতের এই মরশুমে অহরহ এ দৃশ্য চোখে পড়ছে। নদীর ধারে পিকনিক। ইছামতীর এই জায়গাটা এখন মফস্বলের পিকনিক স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। গাড়ি করে হুস হুস করে লোক আসছে দল বেঁধে। তারপর সারাদিন নাচা-গানা, খানাপিনা করে আবার সব হুস হুস করে বেরিয়ে যাচ্ছে। আজও বক্স বাজিয়ে একদল লোক পিকনিক করছে। জনাদশেকের দলটা এসেছে সকাল সকাল। এখন আড়াইটে বাজতে চললো। বড় ডেস্কিতে মাংস রান্না হচ্ছে। গন্ধ ছাড়ছে ভুর ভুর করে। পাশে বড় ঝুড়িতে ভাতের ফ্যান ঝরছে। খানিক তফাতেই ঘুর ঘুর করছে দু-একটা কুকুর। নদীর ধারে যেদিন পিকনিকপার্টিরা আসে, সেদিন মহাদেবের খুব…

বাংলা ছোটগল্পে নদী : মানব জীবনের কথকতা ।। রাজু বিশ্বাস

নদীমাতৃক এই বাংলা। বাংলাদেশ  ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ মিলিয়ে যে বৃহৎ বাংলা– তাকে মায়ের মত আদর স্নেহ ভালবাসা আর শাসন দিয়ে ঘিরে রেখেছে অসংখ্য নদ-নদী। নদীর তীরেই মানুষ সভ্যতার প্রথম সোপান রচনা করে। আমাদের বাণিজ্য যাত্রার ইতিহাস নদীকে কেন্দ্র করেই প্রসারিত হয়েছে। বাংলা মঙ্গলকাব্যের বিস্তৃত পটভূমিকায় নদীর একটা আলাদা তাৎপর্য আছে। সেই চর্যাপদের সময় থেকেই সাহিত্যে নদনদীর কথা এসেছে গভীরভাবে। মনসা মঙ্গলের বেহুলা এই বাংলার নদী পথেই ভেলায় মৃত লখিন্দরের শবদেহ নিয়ে পৌঁছে গিয়েছিল অমরাবতির দরজায়। আধুনিক বাংলা ছোটগল্পে নদী একটা বিস্তৃত জায়গা জুড়ে রয়েছে। সাহিত্য কখনো দেশ কাল নিরপেক্ষ হতে…

ইছামতী নদী দখলকারীদের তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট

পাবনা শহর দিয়ে প্রবহমান ইছামতী নদী অবৈধভাবে দখল করে দূষণ সৃষ্টিকারীদের তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট। ৯০ দিনের মধ্যে তালিকা তৈরি করে তা প্রতিবেদন আকারে দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সূত্র: সমকাল। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের এই নির্দেশ দেওয়া হয়। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রোববার রুলসহ এই আদেশ দেন। রুলে ইছামতী নদীকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন কেন ঘোষণা করা হবে না এবং সিএস জরিপ/পর্চা অনুযায়ী নদীর সীমানা নির্ধারণ, দূষণ ও দখলমুক্ত করে দখলকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না,…

কবি ইন্দ্রনীল সুমন এর একগুচ্ছ কবিতা

কবি ইন্দ্রনীল সুমন এর একগুচ্ছ কবিতা

বাঁওড় ………….. ইছামতী পাশ দিলে রোদেজলে ঝিলমিল বাঁওড়ের বুক শুনেছি নদীর না কি মৃত্যুদিন হয় শোকসভা, ফুলমালা ধূপগন্ধে স্মৃতি দু-মিনিট নীরবতা, মৃদু কাশি, ব্যস, ঠিক আছে! মানুষ পাশ দিলে, মন অমরায়, পবিত্র ঘণ্টাধ্বনি মৃদুতর সুর নিয়ত বাজতে থাকে, স্মৃতির জীবন দীর্ঘ হয়, দীর্ঘতর অবহেলা ঘরে, ধূলির বসন! নদী তার ছেড়ে যাওয়া জলচলে রাখে আপনার কীর্তিকথা, সুখ শোক হাসি, আনন্দ হতাশার চূর্ণকুন্তল… স্মৃতি বড় অসহায়, অমরতা নিয়ে, এ ডালে সে ডালে বসে, শাপগ্রস্ত ফিঙে! ……………………………………………………… মোহনিয়া ………………. স্বপ্নে এক নদী আসে কেন? ভৈরবী ভোরে? অহেতুক জলছুঁই খেলাধুলা শেষে ও মোর বালকদিন…

রাজ্য নদী বাঁচাও কমিটি গঠিত হল পশ্চিমবঙ্গে 

রাজ্য নদী বাঁচাও কমিটি গঠিত হল পশ্চিমবঙ্গে 

নদীকে রক্ষা করবার চেতনা সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে কাজ করছে কিছু নিবেদিতপ্রাণ নদীকর্মী। এবার তাঁরা মিলে সবুজ মঞ্চের উদ্যোগে কলকাতায় গঠন করলেন “রাজ্য নদী বাঁচাও কমিটি”। গঙ্গা, আত্রেয়ী, মাথাভাঙা, ইছামতী, চূর্ণী, মহানন্দা, তিস্তা, তোর্সা, কালজানি, সরস্বতী ইত্যাদি নদীর ভয়াবহ পরিস্থিতি তুলে ধরতে চন্দননগরে কমিটি গঠিত হয় গেল শনিবারে। পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত, পরিবেশ বিশেষজ্ঞ বিশ্বজিত মুখার্জি, সবুজ মঞ্চের সম্পাদক নব দত্ত, পরিবেশ চিন্তক জয়ন্ত বসু, তাপস ঘটক, বিবর্তন ভট্টাচার্যসহ বিভিন্ন নদী ও পরিবেশকর্মী দের নিয়ে এ কমিটি গঠিত হয়। সেদিনের সভায় সিদ্ধান্ত হয় রাজ্য সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রীর কাছে নদীর বেহাল অবস্থা…

নদীয়ার গোরাগাঙনি : খাল নয়, নদী

গোরাগাঙনি

গোরাগাঙনি একটি নদীর নাম। তার উৎসমুখ লুঠ হয়ে গেছে। চূর্ণীর যে স্থান থেকে তার সূচনা, সেখানে এখন আবাদী ফসলের মাঠ। কিন্তু কথায় বলে না, ‘নদী শুকিয়ে গেলেও খাত বেঁচে থাকে’। ফলে নদীয়া জেলার হাঁসখালি ব্লকের বেড় হাঁসখালি ও পাড়বাটিকামারী দুটো গ্রামের ভৌগোলিক সীমানাবিভাজন রেখার মতো এখানে এখনও বেঁচে আছে নদীখাত। দীর্ঘ চোদ্দো কিলোমিটার পথ- কোথাও অতিপ্রশস্ত নদীর মতো জলধারা, আবার কোথাও সেই ধারা ক্ষীণ বটে। মাঝে মাঝে ভেড়ি বেঁধে চলছে মাছের চাষ। আবার কোথাও বা নদীপাড়ের বড়ো বড়ো বাড়ি থাবা বসিয়েছে নদীর জলকর অংশে। এই সব আগ্রাসনেই হারিয়ে গেছে গোরাগাঙনির…

হারিয়ে যাওয়া মাছ কি নদীর মৃত্যুর আশংকাই সামনে আনে না?

Tuhin Shuvra Mandal

আজ একুশে নভেম্বর ।ওয়ার্ল্ড ফিসারি দিবস।আজ এই দিনে খুব মনে পড়ছে সেই সব মাছেদের কথা।যারা চিরতরে হারিয়েছে।এই মাছ গুলো হারিয়েছে কেন? আমরা কি কারণ খুঁজেছি ? কেন হারিয়ে যায় মাছেরা? সে নিয়ে আলাদা প্রতিবেদন হতে পারে।তবে এটা ঠিক যে মাছেরা হারিয়ে গেলে নদীর মৃত্যুর আশংকাই সামনে চলে আসে। আমি যে নদী গুলোকে প্রতিনিয়ত দেখি, অনুভব করি তাদের প্রাণের স্পন্দন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য আত্রেয়ী (বাংলাদেশে আত্রাই), পুনর্ভবা, টাঙ্গন, শ্রীমতি, ইছামতী, যমুনা ইত্যাদি।এইসব নদীতে যে যে মাছ পাওয়া যেত এখন কি সেগুলো পাওয়া যায়? এটা জানতে কিছুদিন আগে পরিবেশপ্রেমী সংস্থা দিশারী সংকল্প-এর…

আত্রেয়ী নদীপাড়ে নদীকথা

নিজস্ব প্রতিবেদক (বালুরঘাট, ২৯ অক্টোবর), ভারত>> দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার’দিশারী সংকল্প’-এর আয়োজনে আত্রেয়ী নদীপাড়ে এক বিকল্প সাংস্কৃতিক আড্ডা অনুষ্ঠিত হয় গত ২৬ অক্টোবর। শহরের ঔপন্যাসিক মৃণাল চক্রবর্তী, গল্পকার শুভ্রদীপ চৌধুরী,বরুন তালুকদার,কবি অতনু গাঙ্গুলি,শুভাশীষ গোস্বামী,পত্রিকা সম্পাদক কৌশিক রঞ্জন খাঁ,শিক্ষিকা অনন্যা সরকার, বিশ্বদীপ নন্দী , পরিবেশ ও নদী আন্দোলনের কর্মী তুহিনশুভ্র মণ্ডল ছাড়াও অনেকে এই আড্ডায় উপস্থিত ছিলেন । এছাড়াও ছিলেন কলকাতার ‘গল্পদেশ’ পত্রিকার সম্পাদক গৌতম অধিকারী এবং কবি সঞ্জয় মৌলিক। এদিনের আড্ডায় মূল আলোচ‍্য বিষয় ছিল নদী রক্ষা, কবি ও সাহিত্যিকদের ভাবনা ও সৃজনে নদীর আবেগ ও বাস্তবতা প্রভৃতি। আড্ডায় অংশগ্রহণকারী প্রায়…

চূর্ণীকথা : একটি নদীপ্রবাহের উৎসের খোঁজে – গৌতম অধিকারী

রবীন্দ্রনাথের ‘কথা’ কাব‍্যের ‘দেবতার গ্রাস’ কবিতায় ‘গ্রামে গ্রামে সেই বার্তা’ রটে যাবার সূত্রে আমরা জেনেছিলাম, ‘মৈত্র মহাশয় যাবে সাগরসঙ্গমে/ তীর্থস্নান লাগি।’ মৈত্র মহাশয়ের এই ‘গ্রাম’ কিংবা সংবাদ রটে যাওয়া গ্রামগুলো যে চূর্ণী নদীতীরেরই সব সাধারণ পল্লি, সে বিষয়ে আমাদের কোনো সন্দেহ থাকে না। বিশেষ করে এই কবিতাটিতেই যখন তিনি সাগর-তীর্থে শুভযাত্রাকালীন বর্ণনা দিতে গিয়ে লেখেন, শুভক্ষণে দুর্গা স্মরি নৌকা দিল ছাড়ি/ দাঁড়িয়ে রহিল ঘাটে যত কূলনারী/ অশ্রুচোখে। হেমন্তের প্রভাত শিশিরে/ ছলছল করে গ্রাম চূর্ণীনদীতীরে। ‘দেবতার গ্রাস’ কবিতার সমাপনী কাহিনিটি বড়োই করুণ। সাগরতীর্থ থেকে ফেরার পথে বিধবা মোক্ষদার শিশুপুত্র রাখালকে বিসর্জন…

ইছামতী নদী : জবরদখলে নদীটির অস্তিত্বই সংকটে পড়েছে

মামুনুর রশীদ, ঢাকা ও কাজী সোহেল, নবাবগঞ্জ >> ঢাকার নবাবগঞ্জ সদরে ঢুকলেই ইছামতী দেখে বহতা নদীটির আগাগোড়া এক রকম মনে হতে পারে। তবে বাস্তবতা ভিন্ন। নদীর এই অংশটুকু খননের কারণে প্রবহমান থাকলেও বান্দুরা বাজার থেকে দৃশ্যপট আলাদা। দাউদপুর বাজার, বারুয়াখালী, শিকারীপাড়া ও জয়কৃষ্ণপুর হয়ে কাশিয়াখালী বেড়িবাঁধ পর্যন্ত নদী মৃতপ্রায়। জবরদখল ও কাশিয়াখালীতে বাঁধ দেওয়ায় নদীটির অস্তিত্বই সংকটে পড়েছে। গত ১২ আগস্ট কলাকোপা বাজার থেকে নদীতীর ঘেঁষে সড়কপথে গিয়ে দেখা গেল, বান্দুরা বাজার পর্যন্ত নদীর প্রবাহ মোটামুটি ঠিক আছে। দাউদপুর বাজার এলাকা থেকেই শুরু হয়েছে নদী দখলের প্রবণতা। দাউদপুর সেতুর পশ্চিম…