রিভার বাংলা সম্পাদক ও লেখক, গবেষক ফয়সাল আহমেদ সম্পাদিত নদীবিষয়ক বই ‘প্রিয় নদীর গল্প’ প্রকাশিত হয়েছে। সৃজনশীল প্রকাশনা সংস্থা ‘জাগতিক প্রকাশন’ বইটি প্রকাশ করেছে। অবিমৃশ্যকারীদের দুর্বুদ্ধিতে সাময়িক লোভ ও লাভের হিসেব বড় করে দেখতে গিয়ে স্বাভাবিক নদীগুলোর সঙ্গে যথেচ্ছচারের ত্রæটি করেনি সভ্য মানুষ! আরও মর্মান্তিক যে, উন্নয়নের নামে বিরামহীন আত্মঘাতী নদী-শাসন! অথচ নদ-নদীর ইতিহাসই বাঙলার ইতিহাস। নদ-নদীর তীরে তীরে মানব সভ্যতা অগ্রগতির চিহ্ন এঁকে রাখে; মানুষের বসতি, কৃষির পত্তন, প্রাম-নগর, বাজার-বন্দর, শিল্প-সাহিত্য, ধর্মকর্ম সবকিছুরই বিকাশ ঘটায়। দুর্বৃত্তদের বিপরীতে কল্যাণকামী মানুষের মননে রক্তক্ষরণ সচল রাখতে পারছে না নদীর নাব্যতা। আশাবাদী মানুষও…
Tag: গল্প
অস্তিত্ব- নুসরাত সুলতানা
গল্প আনিস সাহেব ড্রাইভারকে হাঁক দিয়ে বলেন তার বিএমডাব্লিউ গাড়িটা বের করতে। আজ তিনি জমি দেখতে যাবেন। তার অন্তত পনের বিশ বিঘা জমি দরকার একসাথে। একটা ডুপ্লেক্স বাড়ি বানাবেন। দামী গাড়ি নিয়ে গেলে হাউজিং সোসাইটির লোকজন নড়ে-চড়ে বসে। টাকা কিছু বেশি নেয় নিক। জমি পেলে তিনি একটা মনের মতো বাড়ি করবেন। ছোট একটা পুকুর বানাবেন। তাতে পদ্ম ফোটাবেন। পাড়ে কিছু দেবদারু, ইউক্যালিপটাস আর থুজা গাছ লাগাবেন। পুকুরের চারপাশে বসার ব্যবস্থা করবেন তিনি। করবেন ছোট একটা দেশীয় সবজির বাগান। ছেলে-বউ, মেয়ে-জামাইরা আয়েশ করে থাকবে দেশে এসে। এছাড়াও ব্যাংক, তিনটা গার্মেন্টস, বেশকিছু…
কালীগঙ্গা ডেকেছিল ।। সন্তোষ কুমার শীল
দেখতে দেখতে কালীগঙ্গার বুকের মধু উথলে ওঠে। ক’দিন যাবত থেকে থেকে দমকা বাতাস বইছিল। সকাল থেকে বৃষ্টির সাথে মিলে তা ঝোড়ো হাওয়া হয়ে বইতে শুরু করে। আর আশ্বিনের জড়সড় কালিগঙ্গা হঠাৎ ফুলে ফেঁপে ওঠে। সাগর থেকে বয়ে আনা বিপুল জলরাশি দু’কুল ছাপিয়ে নাচতে নাচতে জনপদের দিকে ছুটতে থাকে। হারাধন সারাদিন তার ঝুপড়িতে বসে ক্ষণে ক্ষণে কালীগঙ্গার রূপ পরিবর্তন দেখেছে আর নানা স্মৃতির জাবর কেটেছে। দিনটা তার ভাগ্যবিড়ম্বিত জীবনের মত একটা দুর্দিন। তখনো সাঁঝের আঁধার নামেনি। শেষ বেলায় এক পশ্লা বৃষ্টি হয়ে আকাশ কিছুক্ষণের জন্য পরিস্কার হয়ে উঠেছিল। একখানা ইঞ্জিনচালিত ছোট্ট…
মেঘভাঙা বৃষ্টি ।। ইন্দ্রনীল সুমন
ইন্দ্রনীল সুমন এর একটি নদী বিষয়ক গল্প “মেঘভাঙা বৃষ্টি” পড়ুন রিভার বাংলা ডট কমে এক. ডুলুং এখানে হলুদ বিনুনি কিশোরীর মতো, লাফিয়ে লাফিয়ে চলে, অকারণে উচ্ছল! এদিকটায় বোল্ডার বেশী, তাই ডুলুং এর জলের শব্দও বেশী| ডুলুং কথা বলে| নদীভাষায়| ইমন মজা পায়| বোঝার চেষ্টা করে নদীর ভাষা| যেন সাংকেতিক কোনো ভাষায় নদী কিছু বলতে চাইছে ইমনকে, আর ইমন মন দিয়ে উদ্ধারের চেষ্টা করছে তার অর্থ| প্রথম যেবার এসেছিল তখন ডুলুং এর কথা একেবারেই বুঝত না, আজকাল অল্প হলেও বোঝে| এই যেমন ডুলুং এখন বেলা বারোটার রোদমেখে খুশী খুশী মুখে ডাকছে…
লাবণ্যবতী একটি স্রোতের নাম ।। সুস্মিতা চক্রবর্তী
গল্প সকাল… দু পায়ের ফাঁক দিয়ে মুন্ডুটা উলটো করে ঢুকিয়ে মাঝেমাঝে আমি আকাশ দেখি। একঘেয়ে লাগলে আর কাজ না থাকলে। খালের উপর কংক্রিটের ব্রীজের ফোকর দিয়েও দেখি। আর দেখি মাঝেমাঝে রাত্তিরে ঘুম ভেঙে গেলে আমাদের ঘরের টালির ফুকো দিয়ে। এইসব উলটো, গোলাটে, তেরচা আকাশগুলোর কথা অবশ্য কাউকে বলি না। আর বলবই বা কাকে। একবার লিটনকে বলতে গিয়েছিলাম। আমায় একটা ঠেলা দিয়ে বললে ‘ স্লা বাপের জম্মে শুনিনি। কোদ্দিয়ে এসব পাস গুরু।’ লিটনটা ওইরকম। আমার চেয়েও দু বছরের ছোট। দেখলে কেউ বুঝতেই পারবে না যে এরম সব কথার ফুলঝুরি মুখে। তা…
হামিদ কায়সার এর গল্প- ডুব
‘কী রে জয়নাল, হইল?’ জয়নাল বলে, ‘হয় নাই।’ আটটা থেকে নয়টার এই সময়ে লোকে লোকে নাও ভইরা গেলেও হয় না জয়নালের, আয়নালেরও হয় না। লোক আরও চাই। আরও আরও লোক। লোকের ভেতরে লোক। লোকের উপরে লোক। যতভাবে ঠাসা যায়। লোকেরও যেন এসবে বিকার নাই। নয়টা সাড়ে নয়টার মধ্যে পৌঁছাতেই হবে টাউনে। কেউ খুলবে দোকান, কেউ করবে অফিস। ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি স্কুল-কলেজের পোলাপানও কিছু আসে। আর থাকে কিছু আলগা মানুষ। যাদের কোনো কাম-কাজ নাই। খাইব ফিরব ঘুরব। এ অফিসে সে বাসায় ঢুঁ মারব। তবে, এ সময়ে যারা আসে তাদের কারোরই হুঁশজ্ঞান থাকে…
মহাদেব ও ইছামতীর গল্প ।। সুজয় চক্রবর্তী
বছরকয়েক ধরে শীতের এই মরশুমে অহরহ এ দৃশ্য চোখে পড়ছে। নদীর ধারে পিকনিক। ইছামতীর এই জায়গাটা এখন মফস্বলের পিকনিক স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। গাড়ি করে হুস হুস করে লোক আসছে দল বেঁধে। তারপর সারাদিন নাচা-গানা, খানাপিনা করে আবার সব হুস হুস করে বেরিয়ে যাচ্ছে। আজও বক্স বাজিয়ে একদল লোক পিকনিক করছে। জনাদশেকের দলটা এসেছে সকাল সকাল। এখন আড়াইটে বাজতে চললো। বড় ডেস্কিতে মাংস রান্না হচ্ছে। গন্ধ ছাড়ছে ভুর ভুর করে। পাশে বড় ঝুড়িতে ভাতের ফ্যান ঝরছে। খানিক তফাতেই ঘুর ঘুর করছে দু-একটা কুকুর। নদীর ধারে যেদিন পিকনিকপার্টিরা আসে, সেদিন মহাদেবের খুব…
রাজেশ ধর এর গল্প “শেকল”
“এত দেরি করি আসলি, চলে কী করি? একগাদা লোক দাঁড়ায়ে রয়েছে ঘণ্টা ধরি!” “কী করব? খেয়া তো দরকারের জন্যি। কত্ত সমিস্যের লোক আসতি নাগে। সবারে না নি এলি হয়। সক্কলের জন্যি দাঁড়ায়ে থাকতি হয়।” “হ, লগেন মাঝি,.তোমার মাথাডা এক্কেবারে গিইছে। কেডা কখন আসপে তার জন্যি তুমি ঐ পারে দাঁড়ায়ে থাকপা আর এই পারের লোকেরা রোদের তাপে বেগুন পোড়া হবে? তোমারে নে তো আর পারা যায় না!” “তা কী করবা কর! করি নাও… দুডো পারই তো এই ফুডিডার নাকি? ফুডিনদীর একপারের লোকের সুক দেখতে গি, অন্য পারের লোকে কষ্ট পাবে, তা…
নদী কীর্তিনাশা ।। রুখসানা কাজল
নীহারিকা আফরোজ ইঞ্জিন বোট থেকে পদ্মার কোলে ঢলে থাকা বিকেল দেখে অবাক হয়ে যায়। জমাট হলুদ পাকা চালতারঙের আকাশ। নদী আমোদিত করে আকাশের টকটক ঘ্রাণ ভেসে আসছে। প্রিন্টেড ওড়নার নেকাব খুলে মনে মনে ভাবে নীহারিকা, ইস্যি রে! একটুখানি নুনঝাল পেলে কি যে মজা হত এখন ! চটাস করে একটুখানি টক আকাশ ভেঙ্গে চটকেমটকে চেটেখাওয়া যেত! কাল্পনিক লোভ সামলে নদী দেখে নীহারিকা। পদ্মা এখানে বেশ শান্ত। কেমন শান্তি শান্তি হয়ে বয়ে যাচ্ছে অজস্র জলরাশি। পাশ থেকে চলে যাওয়া ইঞ্জিন বোটের ছুটেআসা ঢেউ ছাড়া পদ্মার কোনো অস্বাভাবিক নড়চড় নেই। ভাঁজে ভাঁজে একই…
মহানন্দার ডাকে ।। হামিদ কায়সার
গায়ের মধ্যে সইসষার তেল মাখতে দেখেই বুকের ভেতরটা দাড়াস করে কেঁপে উঠল আকলিমার। শোয়া থেকে লাফিয়ে উঠে ও ফয়জুরের সামনে দাঁড়াল, ‘তোমা যান কই?’ দুই ঠ্যাঙের আঙুলের গলিঘুপ্চি দিয়ে তেল পাচার করে, ফয়জুরের হাত ডান পা ডলতে ডলতে উপরের দিকে উঠে আসছিল। পাছার আগে পিছে মাখা শেষ করে ওর তৈলাক্ত হাত আবার নেমে যাচ্ছিল বাম নিতম্ব হয়ে নিচের দিকে। ওর চোখের সামনেই পায়ের পর্ব শেষ করে এবার হাতের তালুয় তেল মেখে বুকে-পিঠে তেলের ছোপ মারতে লাগল ফয়জুর। আকলিমাকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকতে দেখে তাড়া দিয়ে উঠল, ‘কী দেহো?…
মরা নদীর গল্প ।। অনিন্দ্য আাসিফ
সাপে তার ভয় ছিল না কখনও। এখনও নাই। লেজ ধরে মাথার উপর চড়কির মতো ঘুরিয়ে প্রথমে হঠাৎ শূন্যে ছুঁড়ে মারা, তারপর অদৃশ্য করে দেওয়া ছিল তার বাম হাতের খেলা। সামুদ্রিক জেলেদের মতো। জালে-পড়া বিষাক্ত সাপ খেলাচ্ছলে ছুঁড়ে ফেলে তারা। কখনও কখনও জানেই না, কী ভয়ানক খেলা অনায়াসে খেলে ফেলল। কিন্তু এটা সাপ না। শুকনো কচুরিপানায় যে শব্দ, সেটা ইঁদুর হতে পারে। উৎকট একটা গন্ধে এবার মনে হয়, এটা আসলে একটা চিকা। বয়স তার দৃষ্টি আর শ্রবণশক্তির কিছুটা হরণ করেছে, কিন্তু অনুপাতে কমই। তার সামনে – অদূরে কাঁচা কচুরিপানা আর নদীর…
যে নদীর কাছে মনখারাপ জমা আছে- তুহিন শুভ্র মন্ডল
নদী ও পরিবেশ বন্ধু লেখকে তুহিন শুভ্র মন্ডলের জন্মদিনে রিভার বাংলার নদীমাতৃক শুভেচ্ছা সেদিনটা মনে পড়ছে প্রিয় হলং নদী যেদিন তোমাকে ছেড়ে এসেছিলাম। ভেবেছিলাম আর যদি না আসা হয় কোনওদিনও। আর যদি না হয় দেখা! আর একটু ভাল করে দেখে নিই তোমাকে। প্রতিদিনের তোমাকে। মন খারাপের সব গল্প জমা রেখে এসেছিলাম তোমার কাছে। কেন রাখবোনা বলো? ছোটবেলা থেকে না দেখলেও, তোমার সাথে না মিশলেও অনুভবে মিশে গিয়েছিলে তুমি। পাঁচবছরেই হলং তুমি যেন পঞ্চাশের দীর্ঘ চিঠি দিয়েছিলে মনের ঠিকানায়। তাইতো তোমার গায়ে খেলা করা রোদের সংসার এই দেখো আজ পনের বছর…