নদী ভরা কূলে কূলে, ক্ষেত ভরা ধান আমি ভাবিতেছি বসে কী গাহিব গান। কেতকী জলের ধারে ফুটিয়াছে ঝোপে-ঝাড়ে, নিরাকুল ফুলভারে বকুল-বাগান কানায় কানায় পূর্ণ আমার পরাণ। -রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এখন ওই নদীর কাছে গেলে মনে হয় মায়ের মুখের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়েছি। তার স্বচ্ছ জলের চোখ আমায় দেখে যেন বলছেন, ‘কিমুন আছো, বাবা?’ বলছি কালী নদীর কথা। বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব-বাজিতপুর সীমানা হয়ে প্রিয় কুলিয়ারচরে প্রবেশ করে ভৈরবের মানিকদীর নিকটে শেষ হওয়া একটি নদী। আমার শৈশব, কৈশোর আর যৌবনের অনেকটা সময় কালী নদীর সাথে কেটেছে। ছোটবেলায় ওই নদীটার সাথে আম্মাই আমাকে পরিচয়…
Tag: নদী
নরসুন্দায় কচুরিপনা: বর্ষায়ও পানি দেখা যাচ্ছে না
এম জে এইচ বাতেন >> কিশোরগঞ্জ শহরের বুক দিয়ে প্রবাহিত নদী নরসুন্দা। এই সময়ে নদীতে প্রচুর কচুরিপনা জন্ম নিয়েছে। যে কারণে বর্ষাকালেও নদীতে পানি দেখা যাচ্ছে না। নষ্ট হচ্ছে নদীর সৌন্দর্য। এতে শহরবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। নদী খনন করার পর নদীতে যে স্রোত আসছে। সেই স্রোত কচুরিপনাকে ভাসিয়ে নেওয়ার মত শক্তি নেই। সরেজমিন গিয়ে শহরের পুরান থানা ব্রীজের কাছে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, কচুরিপনার উপর ভর করে নদীতে কচুগাছ ও এলশা গাছের জন্ম হয়েছে। যা দেখলে মনে হয় নদীর মাঝখানে পানির উপর কচু গাছের বাগান। মাছ শিকারীরা ধর্ম জাল দিয়ে…
আহা, এইখানে এক নদী ছিল… ।। প্রভাষ আমিন
সবারই শেষ জীবন কাটানোর একটা স্বপ্ন থাকে। কারো স্বপ্ন পূরণ হয়, কারোটা হয় না। আমার স্বপ্নটা ছোট, কিন্তু জানি পূরণ হবে না। আহা, আমার যদি ছোট্ট একটা নদীর পারে ছোট্ট একটা কুঁড়েঘর থাকত। সেখানে ফেসবুক দরকার নেই, ইন্টারনেট লাগবে না; খালি বই পড়া আর গান শোনার ব্যবস্থা থাকলেই হবে। সকালে নদীর পারে হাঁটব, বুক ভরে নেব, ফ্রেশ অক্সিজেন, দুপুরে নদীতে সাঁতার কাটব, বিকেলে নদীর পারে আরাম কেদারায় বসে বই পড়ব আর গান শুনব। রাতে নদী থেকে আসা ভেজা হাওয়া গায়ে মেখে, বাতাসে ভেসে আসা ফুলের গন্ধে ঘুমিয়ে যাব। আমার শেষ…
বুকের ভিতর একটা নদী ।। রাজু বিশ্বাস
আমার প্রথম প্রেমিকা ইছামতি। তার বুকের উপর আমার বসবাস। আমার ঘরের উঠোন জুড়ে আছে সে। আমার প্রাণের উপকূল জুড়ে তার প্রবাহমানতা। তার কোল ছেড়ে আমি বেশি দিন অন্য কোথাও গিয়ে থাকতে পারি না। সে আমার বাল্যকালের সখা; যৌবনের প্রেয়সী। আমি যতই বলবো তার কথা ততই কম বলা হবে। আমার গ্রামের নাম বাজিতপুর। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পুতুল নাচের ইতিকথা’র নায়িকা কুসুমের বাপের বাড়ি ছিল বাজিতপুর। কিন্তু সেই গ্রাম আর আমার গ্রাম এক না হলেও এ গ্রামের পথে আমি কুসুমকে খুঁজে পাই। সে আজো শশী দাদাবাবুর উদাসীন প্রেমে আকুল হয়ে কেঁদে চলে সারারাত।…
নদী ও পরিবেশের জন্য আশির্বাদ হয়ে এসেছে করোনা ভাইরাস ।। নদীপুত্র সুমন শামস
করোনাকালে অঘোষিত লকডাউনে দীর্ঘদিন নদীতে লঞ্চ-স্টিমার চলাচল বন্ধ থাকার কারণে বুড়িগঙ্গা নদীসহ দেশের প্রায় সকল নদ-নদীর পানির গুণগত মান বেড়েছে। পণ্যবাহী জাহাজ ছাড়া দীর্ঘ দুইমাস নদীতে চলেনি যাত্রীবাহী কোন ধরণের লঞ্চ-স্টিমার। ইঞ্জিনের ভট ভট বা ভোঁ ভোঁ শব্দ ছিলো না। একই সময়ে নদীর তীরের কলকারখানাও বন্ধ ছিল। পানিতে মিশতে পারেনি কল-কারখানার দূষিত বর্জ্য। তাই শান্ত নদীর বুকে এখন শুধু মৃদু ঢেউয়ের কলকল ধ্বনি। ঢাকার প্রধান নদী বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু, শীতলক্ষ্যা নদীর পানি এখন আগের চেয়ে অনেক বেশী স্বচ্ছ। এই রকম পরিস্কার পানির বুড়িগঙ্গা নদী বাঁচাতে কলকারখানার বর্জ্য শোধনাগার পরিবেশসম্মত করতে…
আমার শৈশবের তুরাগ এখন অর্ধমৃত! ।। মোহাম্মাদ এজাজ
দেশের অনেক নদীই আজ তার ঐতিহাসিক নাম হারিয়ে যেন এক নামে উপনীত হয়েছে- সেটি হলো ‘মরা নদী!’ একটি নদী মরে গেলে শুধু নদীই মরে না, তাকে ঘিরে গড়ে ওঠা জনসংস্কৃতিও মরে যায়! জনসাধারণের জীবিকা নির্বাহের প্রতিবন্ধকতা, নদীমাতৃক এলাকায় মরুকরণ, জীববৈচিত্র্যের বিপন্নতাসহ নানা সমস্যা দেখা দেয়। দেশের সেই সব মরণাপন্ন নদীর একটি তুরাগ। দখল, ভরাট আর দূষণে ‘নিখোঁজ’ হতে চলেছে তুরাগ নামের এই নদটি। এটিই আমার শৈশব ও কৈশোরের কহর দরিয়া। শৈশবে এই তুরাগই আমার উচ্ছলতা ও চঞ্চলতার নেপথ্যে ছিল। এটিই আমার ভালবাসার নদ। প্রিয় তুরাগ, আদালতের রায়ে জীবন্তসত্তা তুরাগ। আমার…
বাড়ির পাশে সিঙ্গুয়া নদী ।। এম জে এইচ বাতেন
ছোটকাল থেকে শুনে আসছি নদীমাতৃক দেশ বাংলাদেশ। এদেশের মানুষের জীবনও নদীকেন্দ্রিক। নদীর সাথে মানুষের সম্পর্ক মায়ের মতো। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এসব নদ-নদীর ভূমিকা অপরিসীম। এদেশে নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠেছে সর্বাধিক জনবসতি। নদীর সঙ্গে মানুষের জীবন-জীবিকা, সুখ-দুঃখ, আবেগ-ভালোবাসা জড়িত রয়েছে। হাজার বছরের গ্রামীণ ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিতেও রয়েছে নদ-নদীর প্রভাব। নির্বাচনের সময় নদীও রাজনৈতিক অঙ্গনে নদীর দুই পাড়ের মানুষের মধ্যে এক ধরনের বিভাজন তৈরি করে। নদীর এপার ও ওপারের বিষয়-আশয় নিয়ে চায়ের দোকানে চলে নানান যুক্তি-তর্কের ঝড়। মনে হয় যেন নদী ও মানুষ মিলেমিশে একাকার। তেরোশত নদীর দেশ বাংলাদেশ। যার মধ্যে…
যে জলে জীবন জ্বলে ।। রেজাউল করিম
ছেলেবেলা থেকেই নদী ও প্রকৃতির সাথে আমার জীবন জড়িয়ে আছে আষ্টেপৃষ্ঠে। নদী ও প্রকৃতির শান্ত-সৌম্য-স্নিগ্ধ রূপ মাধুর্য দেখে যেমন মুগ্ধ ও বিমোহিত হয়েছি তেমনি এর রুদ্র রূপ, ঝঞ্জা-বিক্ষুব্দ ভয়ংকর নিষ্ঠুরতা দেখে হয়েছি অস্থির, কখনোবা বেদনায় নীল। প্রবল ঢেউ ও ঝরো হাওয়ায় কখনো বা বিপন্নবোধ করেছি মেঘনা, পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার মাঝনদীতে। উত্তাল ঝড়ো হাওয়ায় ডুবে মরার হাত থেকেও দু’একবার প্রাণে বেঁচে ফিরেছি! আমার বেড়ে ওঠা খাল-বিল-নদী-নালা বিধৌত গ্রামীণ জনপদে। আশৈশব বিচরণ করেছি অনাবিল ও স্নিগ্ধ প্রকৃতির মাঝে। নানা ধরনের দেশীয় নৌকা, লঞ্চ, স্পীডবোট, স্টীমারসহ নানান ধরনের জলযানে চড়ে নদীপথে ভ্রমণ করেছি…
চাঁদপুরের নদী, প্রকৃতি ও ইলিশ ।। সৌম্য সালেক
‘নদীমাতৃক একটি ভূগোল ঘুরতে ঘুরতে আমি ঘুরে এলাম উড়তে উড়তে আমি উড়ে এলাম না কোনো রহস্য ছিল না না কোন চমক ছিল না কেবল একঘেয়ে এক ক্লান্তি দেখতে দেখতে আমি হয়ে উঠি যুগলতা আমি দেখতে দেখতে খসিয়েছিলাম শরীরের তাবৎ ক্লান্তি ওম শান্তি, ওম শান্তি’ –কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা আমরা নদীমাতৃক ভূ-ভাগের অধিবাসী। নদীর প্রভাবে আমরা নানাভাবে প্রতীকায়িত হয়েছি। নদীর বাঁধাহীন ছুটে চলার সাথে মিল রয়েছে মানব জীবনের প্রবাহমানতার। নদীর ইতিহাসও মানুষের ইতিহাসের মতোই প্রাচীন এবং বৈচিত্রপূর্ণ। বাংলাদেশের পুরো ভূগোলজুড়ে জালের মতো ছড়িয়ে বিছিয়ে রয়েছে অনেক নদী। শাখা-প্রশাখাসহ প্রায় ৮০০ নদ-নদীর…
আনন্দাশ্রু ফুলেশ্বরী
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে প্রাইমারি শেষ করে সবে হাইস্কুলের চৌকাঠে পা রাখছি। বন্ধুদের সাথে সকাল বিকাল নদীতে ডুবসাঁতার মলাই খেলা আর স্কুলে যাওয়া আসা। খেলাধুলা মন ও মগজ অষ্টপ্রহর। স্কুলের তোতাপাখির মুখস্ত বিদ্যা ছাড়া মেধা ও মনন বিকাশের বয়স হয়নি। খেলাধুলার ফাঁকে গ্রামে যেসব সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড হতো তা হলো পালাগান, মহরমের জারি, ছায়াবানি দস্তর আলীর প্রেমকাহিনীর পুঁথিপাঠের আসর, বাউল সন্ধ্যা এইসব। রহিম বাদশা ও রূপবানের পালাগান ও ঝুমুর যাত্রানাট্যে মাঝিদের গান ও অভিনয় আজো মনে দাগ কাটে। এসবের বাহিরে আপডেট সাংস্কৃতিক মাধ্যম ছিলো বিটিভিতে মাসে একটি বাংলা সিনেমা ও ভাড়ায় চালিত…
নদীস্নানের পর কিছু একলা মুহূর্ত ।। হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়
মুক্তগদ্য >> বৃষ্টিদিনে আমার একটা নদীর কথা মনে পড়ে। আমার নদী। আমার বাড়ির উঠোনের এক নদী। অনেকবার তাকে নাম দিতে গেছি। সে মুখ নামিয়ে নিয়েছে। ঠিক যেন মনে হবে নাম বুঝি মুখে পরিয়ে দেওয়া হয়। মুখ নামিয়ে নেওয়ার মানে কি? আমি আর নদী কি এক স্কুলে পড়তাম? সকলের চোখের আড়ালে গিয়ে আমি তো তাকে আমার প্রিয় কোনো নাম দিতে চাই নি। নাম প্রিয় হয় বুঝি? নাকি মানুষটা প্রিয় হয় আর নাম উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে তার সেই মুখটা ভেসে ওঠে। যখন বলি নামটা প্রিয় ততক্ষণে চোখের সামনে ভেসে ওঠা মুখটায় অনেকবার…
আমার প্রিয় নদী সুবর্ণরেখা ।। সুকন্যা দত্ত
নদীর সাথে আমার প্রথম সখ্যতা গড়ে ওঠে তার দর্শনে নয় শ্রবণে। শুনতে অদ্ভুত লাগলে ও একেবারেই সত্যি। তখন আমার বয়স আড়াই। দার্জিলিং মেল ট্রেন এ উত্তরবঙ্গে মামাবাড়ি যাওয়ার পথে, ফারাক্কাব্রীজ পার হওয়ার সময় প্রচন্ড শব্দের মাঝে ও রাতের আঁধারে কান পেতে শুনতে পেয়েছিলাম লক গেট এর ভিতর দিয়ে গঙ্গার জল স্রোতের কলতান। ব্যাস ঐ শব্দ শুনেই নিজের অজান্তে ভালোবেসে ফেলি নদীকে। তারপর ওই যাতায়াতের পথে আমার কাছে সবচেয়ে আকর্ষনীয় হয়ে উঠেছিলো রাতের অন্ধকার ভেদ করে নদীকে দেখার ইচ্ছেটা। নদীকে প্রথম দেখি জলপাইগুড়িতে। তিস্তার সাদা বালুকায় বসে জলের ওঠা নামা দেখতে…