বিভূতিভূষণের ‘ইছামতী’ : মহাজীবনের মেটাফোর- সৈয়দ কামরুল হাসান

ইছামতি

১. ১৯৪৭ সালের ১৭ জুলাই ছোটভাই নুটুবিহারী বন্দোপাধ্যায়কে লেখা এক পত্রে  বিভূতিভূষণ ‘অভ্যূদয়’ নামে সাময়িকীতে তাঁর ‘ইছামতী’ উপন্যাস ধারাবাহিকভাবে প্রকাশের কথা জানিয়েছিলেন। নিজের গ্রাম বারাকপুর, তৎসন্নিহিত নদী এবং এর আশপাশ, ইংরেজ নীল চাষী, তাদের পরিত্যক্ত স্থাপনা ইত্যাদি নিয়ে একটি উপন্যাস লেখার আকাঙ্ক্ষা তিনি পোষণ করেছিলেন, যখন তিনি প্রথম উপন্যাস ‘পথের পাঁচালী’ লিখছিলেন তখন থেকেই । এ-ব্যাপারে ১৯২৮ সালে তাঁর ডায়রী ‘স্মৃতির রেখায়’ তিনি লিখে রেখেছিলেন তাঁর আগ্রহের কথা। তাঁর ভাষায়: “ঐ আমাদের গ্রামের ইছামতী নদী । আমি একটা ছবি বেশ মনে করতে পারি – ঐ রকম ধূ ধূ বালিয়াড়ী ,পাহাড়…

বাংলা ছোটগল্পে নদী : মানব জীবনের কথকতা ।। রাজু বিশ্বাস

নদীমাতৃক এই বাংলা। বাংলাদেশ  ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ মিলিয়ে যে বৃহৎ বাংলা– তাকে মায়ের মত আদর স্নেহ ভালবাসা আর শাসন দিয়ে ঘিরে রেখেছে অসংখ্য নদ-নদী। নদীর তীরেই মানুষ সভ্যতার প্রথম সোপান রচনা করে। আমাদের বাণিজ্য যাত্রার ইতিহাস নদীকে কেন্দ্র করেই প্রসারিত হয়েছে। বাংলা মঙ্গলকাব্যের বিস্তৃত পটভূমিকায় নদীর একটা আলাদা তাৎপর্য আছে। সেই চর্যাপদের সময় থেকেই সাহিত্যে নদনদীর কথা এসেছে গভীরভাবে। মনসা মঙ্গলের বেহুলা এই বাংলার নদী পথেই ভেলায় মৃত লখিন্দরের শবদেহ নিয়ে পৌঁছে গিয়েছিল অমরাবতির দরজায়। আধুনিক বাংলা ছোটগল্পে নদী একটা বিস্তৃত জায়গা জুড়ে রয়েছে। সাহিত্য কখনো দেশ কাল নিরপেক্ষ হতে…

প্রিয় না হয়ে ওঠা একটি নদী ।। তাপস দাস

তাপস

রাস্তার নাম “করুণাময়ী ঘাট রোড”। ‘ঘাট’ কোন কালে ছিল?  সেই ঘাটের রাস্তায় কারা, কোথায়, কোথায় যাওয়া-আসা করতেন?  কী ছিল ঘাটের কড়ি?  সঙ্গে থাকতো কী?  জানা নেই। কে জানেন তাও জানা নেই। আমার ঐ পথ দিয়ে যাওয়া-আসা শুরু হয় ১৯৮৬-৮৭ সালে। তখনো করুণাময়ী ব্রীজ হয়নি। গাড়ী পথে কলকাতার সঙ্গে যোগাযোগ সিরিটি-ভাটিখানা-মহাবীরতলা হয়ে টালিগঞ্জ ব্রীজ পার পথে। সোদপুর বাজারে বাসের অপেক্ষায় দাঁড়ানো পথিককে কোথায় যাচ্ছো প্রশ্ন করলে উত্তর আসতো, “কলকাতা যাচ্ছি”। বেহালা মিউনিসিপালটি ‘এডেড এরিয়া’’রূপে কলকাতায় যুক্ত হলেও পুরনো অভ্যাস তখনো রয়ে গিয়েছে। আর হবে নাই বা কেন বড় বড় ইট ভাটার…

কানাই খাড়ির পাড়ে জীবনকে চেনা 

কানাই খাড়ির পাড়ে জীবনকে চেনা 

‘সারান্ডা’ সাতশো পাহাড়ের দেশ। সেই পাহাড়ের রূপ দেখে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, তিনি কাশ্মীর দেখতে চান না, কারণ লোকে বলে কাশ্মীরের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে মানুষ অন্য সব রূপ ভুলে যায়। তিনি সারান্ডা’র পাহাড়-জঙ্গলের রূপ ভুলতে চাননি। তেমনি ভারতের প্রায় সব বড় নদী এবং অসংখ্য ছোট নদী দেখার সুযোগ আমার জীবনে এসেছে নদীর কোন না কোন অবস্থায়। সেই নদীর মধ্যে একটি  ‘প্রিয় নদী’ বাছাই করার কোন ইচ্ছা আমার হয় না কখনো। সব নদী দেখার, নদীর একেক গতিতে দেখার একেক রকম আনন্দ। তাই একটি নদীর গুণ মুগ্ধতার  বর্ণনা করার চেয়ে ভালো কোন একদিনের…