সে এক মায়াবী নদী ।। সৈয়দ কামরুল হাসান

মায়াবী

ফুলের গন্ধটা তীব্র হয়ে নাকে লাগে। হু হু করে যখন বাতাস বইতে শুরু করল ঠিক তখন ঘুম ভেঙ্গে যায় আমার। কিন্তু এই নৌকায় ফুলের গন্ধটা  কোত্থেকে আসবে বুঝতে পারিনা প্রথমে। পরে কারণটা ধরতে পারি ধীরে সুস্থে। আসলে আমি মায়ের কোলে শুয়ে ছিলাম। মায়ের কোলে শুয়ে আশৈশব পেয়েছি এই ফুলের ঘ্রাণ। বড় হয়ে যখন কারণটা বুঝতে পেরেছি, ততদিনে মা আমাদের মায়া ত্যাগ করে পরপাড়ে পাড়ি জমিয়েছেন। মায়ের পছন্দ ছিল জবাকুসুম তেল, বরাবর বাবা তাই বাড়ি এনে দিয়েছেন, মা সেই তেল মাখতেন চুলে। কিন্তু, কারণ সনাক্ত হবার আগেই সেই যে অবুঝ শিশুর…

প্রাণের দোসর কালীগঙ্গা ।। সন্তোষ কুমার শীল

কালীগঙ্গা

জীবনের দৈনন্দিনতাটুকু আড়াল হলেই কল্পনায় শুনতে পাই দশদিক কাঁপিয়ে স্টীমারের ভোঁ বেজে উঠছে। অসংখ্য যাত্রীর ওঠানামায় কলমুখর হয়ে উঠেছে কালীগঙ্গার তীর। দারুণ নস্টালজিয়া ভর করে। ছুটে যাই নদীর তীরে। দেখি বিশ্বকবি একটা চেয়ার টেনে জানালার ধারে বসে আনমনে লিখে চলছেন। দখিনা বাতাসে তাঁর আলখেল্লা উড়ছে, শুভ্র দাড়ি-চুল বিপর্যস্ত। কোনদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই তাঁর, ধ্যান-মৌন ঋষি সৃষ্টিশীলতায় মগ্ন। তাঁকে ঘিরে রয়েছে একটা উজ্জ্বল জ্যোতি। হ্যাঁ, সেদিনের খরস্রােতা কালীগঙ্গার বুকের ওপর দিয়ে তুমুল আলোড়ন তুলে চলত কোলকাতা থেকে বরিশালগামী স্টীমার “সরোজিনী”। রবীন্দ্রনাথের মেজদা জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর বিলেতি কোম্পানীর সাথে পাল্লা দিয়ে এই জাহাজের ব্যবসায়…

আড়িয়াল খাঁ নদ- স্মৃতি ও বাস্তবতায় ।। হাসান মাহবুব

আড়িয়াল

জীবনের অনেকটা সময় কেটেছে যে নদীর কাছে, নদীর নাম মনে এলে যে ছবিটা ভেসে ওঠে প্রথমে, সে আমার শৈশবে একদিন হাঁটতে হাঁটতে নিজ থেকে খুঁজে পাওয়া নানাবাড়ির কাছের নদীটা। অনেকটা শীত বসন্ত গ্রীষ্মে প্রকৃতি বদলেছে তার রূপ, নদীটাও সেই সাথে তাল মিলিয়ে নানাভাবে দেখিয়েছে তার যৌবনদৃপ্ত খেলা, কখনো ম্রিয়মান হয়ে নিরবে বয়ে গেছে, বুক পেতে জায়গা করে দিয়েছে অনেক স্মৃতির, জন্ম দিয়েছে নানান বাস্তব-অবাস্তব গল্পের। যে নদীর কথা বলছি সেটা ঠিক নদী নয়, নদ, আড়িয়াল খাঁ নদ। সাধারনত প্রাত্যহিক নানা প্রসঙ্গে এর কথা এলে- নদী বলেই ডাকা হয়। যাইহোক, এই…

আমাদের ছোটো নদী ।। গৌতম অধিকারী

আমাদের

সেই কবে রবি ঠাকুর লিখেছিলেন, আর শৈশববেলায় মন্ত্রের মতো আউড়ে গেছি আমরা, নদীস্রোতের মতোই খলবল করে উঠতে গোটা ক্লাসরুম, আমাদের ছোটো নদী চলে বাঁকে বাঁকে, বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে। পার হয়ে যায় গরু, পাড় হয় গাড়ি, দুই ধার উঁচু তার ঢালু তার পাড়ি। আমি অবশ্য জন্মেছি এমন একটি ছোট্ট নদীর পাড়ে, ততোধিক ছোট্ট গ্রামে। কিন্তু নদীর সঙ্গে সখ্য গড়ে-ওঠার মে স্বাধীনতা দরকার, তা তো ছিল না শৈশবের কালে। সেই স্বাধীনতা কিঞ্চিৎ মিলল কিশোরবেলায়। এক নদীকে পেলাম, নাম তার ছোটো ভৈরব। মুর্শিদাবাদ জেলার হরিহরপাড়া আর ডোমকল ব্লকের বিভাজন-রেখা ছোটো…

যে নদীর কাছে মনখারাপ জমা আছে- তুহিন শুভ্র মন্ডল

হলং

নদী ও পরিবেশ বন্ধু লেখকে তুহিন শুভ্র মন্ডলের জন্মদিনে রিভার বাংলার নদীমাতৃক শুভেচ্ছা সেদিনটা মনে পড়ছে প্রিয় হলং নদী যেদিন তোমাকে ছেড়ে এসেছিলাম। ভেবেছিলাম আর যদি না আসা হয় কোনওদিনও। আর যদি না হয় দেখা! আর একটু ভাল করে দেখে নিই তোমাকে। প্রতিদিনের তোমাকে। মন খারাপের সব গল্প জমা রেখে এসেছিলাম তোমার কাছে। কেন রাখবোনা বলো? ছোটবেলা থেকে না দেখলেও, তোমার সাথে না মিশলেও অনুভবে মিশে গিয়েছিলে তুমি। পাঁচবছরেই হলং তুমি যেন পঞ্চাশের দীর্ঘ চিঠি দিয়েছিলে মনের ঠিকানায়। তাইতো তোমার গায়ে খেলা করা রোদের সংসার এই দেখো আজ পনের বছর…

শেষ পর্যন্ত আত্রেয়ী আর তিস্তার দেখা হয় নি, কথাও না

আত্রেয়ী

এই লেখা আসলে শ্রদ্ধেয় কথাশিল্পী দেবেশ রায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন।তাঁর সাথে আমার কোনদিন দেখাও হই নি, কথাও না। তবু আনত শ্রদ্ধা জানাই তাঁকে, নদীকে যিনি বুকে ধারণ করেছিলেন। ছোটবেলা থেকে সম্ভবত ১৯৬৮ সালে তিস্তা নদীর ভয়ংকর বন্যার কথা জেনে আসলেও তার সাথে আমার প্রথম দেখা হয় অনেক পরে।। নব্বই- এর দশকের শেষের দিকে। নদী যে তীব্র অভিঘাত তৈরি করে মনের ভিতর তখন সেটা করেনি। সেটা ছিল শুধু তাকানো। এখন বুঝি সেটা দেখা ছিল না। দেখার দৃষ্টি তো নয়ই। আর তিনি অর্থাৎ দেবেশ রায় তিস্তাকে গভীর ভাবে দেখেছেন না, তিনি শুধু…

সত্যজিৎ রায়ের সিনেমায় নদী সংকেত দেয় 

সত্যজিৎ

বিশ্ববরেন্য চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায় শতবর্ষে পদার্পন করলেন। গতকাল ছিল তাঁর জন্মদিন। তাঁর নির্মিত চলচ্চিত্র যে বাংলা তথা ভারতীয় সিনেমায় নতুন ভাষার আমদানী করেছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা।পথের পাঁচালী থেকে যে যাত্রাপথের দিকনির্দেশ তিনি করেছেন তা এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। জগত ও বিভিন্ন ধারার সম্পর্কের বিষয়ে কৌতুহল ও নিজস্ব একটা ব্যাখ্যা ছিল তাঁর। সেই ব্যাখ্যান এবং আখ্যান আমরা হয়ে উঠতে দেখি তার সিনেমায়। সত্যজিৎ নদী ভালবাসতেন। তাই তাঁর সিনেমায় নদী নানাবিধ সংকেত দেয়। সময়, সম্পর্ক, পরিস্থিতির একটা দ্যোতনা তৈরি করে।সেসব নিয়েই খন্ডিত ভাবে আলোচনা করবো নিবন্ধে। সত্যজিৎ নদীর…

এই সময়ে যেমন আছে আমার নদী : তুহিন শুভ্র মন্ডল

আমার

এই সময়।এই সময়টাকে কিভাবে ব্যাখ্যা করা যায়? বিশেষ সময়?  জরুরী সময়?  ভয়ংকর সময়? মহামারি পেরিয়ে অতিমারির সময়? কিভাবে? সব ভাবেই বলা যেতে পারে।আর একভাবে বলা যেতে পারে যে এটা মানব সভ্যতার বড় সঙ্কটের সময়। কিন্ত প্রকৃতির কাছে? আমার নদীর কাছে? এ বড় সুখের সময়, আনন্দের সময়। এই সময়ে কেমন আছে আমার নদী? আমার মনে হয় ভাল আছে এবং খুব ভাল আছে। এবং যতটুকু অনুভব করেছি এ নদীকে সে এমন ভালই সবসময় থাকতে চায়। করোনা ভাইরাসের ভয়ংকর এই সময়ে মানুষের পদচারণা কম। যান্ত্রিক সভ্যতা আর উন্নয়নের ভুল ব্যাখ্যায় মেতে থাকা মানুষ…

শিলিগুড়ির দুঃখ ফুলেশ্বরী-জোড়াপানি নদী : তুহিন শুভ্র মন্ডল

ফুলেশ্বরী

ভারতের দক্ষিণ দিনাজপুর থেকে>> ফুলেশ্বরী নদী প্রবাহিত হয়েছে শিলিগুড়ির মধ্য দিয়ে, যাকে বলে একেবারে বুকের ভেতর দিয়ে। আরেকটি নদী আছে, এর নাম জোড়াপানি। যদি বলা হয় এই দুটি নদী শিলিগুড়ির জীবনরেখা। অত্যুক্তি হয় না বোধহয়। এই লকডাউনের সময়তেও কি অবস্থা নদীগুলির? নালায় পরিণত হয়েছে। ঘন কালো জল। আবর্জনায় পরিপূর্ণ। ফুলেশ্বরী বাজারের কাছে, সূর্যসেন কলোনীতে যদি এই নদীগুলিকে দেখা যায় তাহলে বোঝা যায় এই নদীর বর্তমান অবস্থা কি?  আক্ষরিক অর্থেই নদীটি ডাস্টবিনে পরিণত হয়েছে।নদীর বুকে গাছের জঙ্গল।ইউট্রোফিকেশন কোথাও কোথাও সাকসেশনও হয়ে গিয়েছে। সংস্কারের অভাবে দীর্ণ এই নদী। খোঁজ নিয়ে দেখা গেল…

বিশ্ব জল দিবস: নদীর জল ও কিছু কথা- তুহিন শুভ্র মন্ডল

এই সেদিন গেলো বিশ্ব জল দিবস।সমগ্র পৃথিবী জুড়ে রাষ্ট্রসংঘের উদ্যোগে, বিভিন্ন দেশের পরিসরে, বেসরকারী উদ্যোগে, পরিবেশপ্রেমী সংস্থার প্রচেষ্টায় এই গুরুত্বপূর্ণ দিনটি উদযাপিত হয়। এবার অবশ্য তেমন ভাবে হয়নি, কারণ করোনা ভাইরাস। যে কোনো অনুষ্ঠান, জমায়েত এখন জরুরীকালীন ভিত্তিতে বাতিল হচ্ছে। আমাদের পরিবেশসচেতন সংস্থা দিশারী সংকল্পও ২২ মার্চের দিনভর এই জল সম্পর্কিত কার্যসূচি বাতিল করেছে। জলের আরেক নাম জীবন।আক্ষরিক অর্থেই তাই।জল ভাল না থাকলে আমরা ভাল থাকবোনা।কিন্ত যেভাবে জলের প্রতি অবহেলা, উদাসীনতা এখনও প্রবহমান তাতে সুদিন কবে আসবে? জল অপচয়, জলের ভান্ডার ক্রমশ: কমে যাওয়া ইত্যাদি নিয়ে সমগ্র বিশ্বজুড়ে হাহাকার দেখা…

নদীর জন্য একদিন নয়, প্রতিদিন 

শুধু সরস্বতী পুজোর জন্য একদিনের নয়, বা দুর্গাপুজো- কালিপুজো- ছটপুজোর সময় নয়, নদীর দিকে নজর থাকা উচিত প্রতিদিনের।একটা নির্দিষ্ট পরিকল্পনা দরকার। এবং সেটা পুজোর আগে থেকে। এবং শুধু একটি নদীর একটি ঘাট নয়। সব নদীর, কোন কোন নদীর ঘাট পুজোর জন্য ব্যবহৃত হয়, বিসর্জন দেওয়া হয় সেগুলো ঘিরে একটা বিশেষ পরিকল্পনা নিতে হবে। এবং সেটি অন্তত দু মাস আগে। কারা কোন নদীর ঘাটে প্রতিমা বিসর্জন দেবে তার একটা পূর্ণাঙ্গ তালিকা আগে থেকেই থাকা দরকার। সমস্যা শুধু ক্লাব- পুজো কমিটির পুজোর জন্য নয় বাড়ি বাড়ি প্রচুর পুজো হয়। সেগুলোও বিসর্জন দেওয়া…

জলপাইগুড়ির টেমস ‘করলা’ নদীর চিকিৎসা জরুরী

জলপাইগুড়ির

প্রিয় করলা, হ্যাঁ প্রিয়ই বললাম সমস্ত জলপাইগুড়িবাসী আর নদী সন্তানদের পক্ষ থেকে। কেননা কথা বলে বুঝেছি অসংখ্য মানুষ তোমায় ভালবেসে বুকে ধারণ করেছে। তাই তোমার যন্ত্রনায় তারা যন্ত্রনাক্লিষ্ট। তোমার দুর্দশা দেখে কষ্ট হয় তাদের। তাই তাদের হয়ে এই লেখা। জলপাইগুড়ির ‘জীবন রেখা’ করলা। এই নদী কথা ও কথকতার মেলবন্ধন, সৃজনের অবিসংবাদি উপজীব্য। শুধু কি তাই! পরিবহন এবং জলপাইগুড়ির অর্থনীতির সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সংযুক্ত। অথচ সেই নদী আজ মৃতপ্রায়। ধুঁকছে….. করলার উৎসমুখে যেমন জল স্পর্শহীনা, তেমনই শহরের অংশেও দীর্ণ। বর্ষার সময় ছাড়া জলপাইগুড়িবাসীর এই প্রিয় নদীর কী হাল হয় তা…