নরসুন্দার জৌলুস উপল হাসান …………………………………………………………………………………………………………. বাঁশ পাতার পথটা পেরোলেই মনিপুর ব্রিজ…. তাকালেই আকাশে তারা’র মেলা ব্রিজের তলে বিধবার শুকনো ঠোঁটের মতোন নরসুন্দার বিষাদ… বিষন্ন নৌকায় ছেঁড়া জাল জেলেদের বিবর্ণ দিনের প্রতীক হয়ে ঝুলছে…. ছেলেবেলায় এখানেই দেখছি কত বেদেনীর নৌকা, বেদেনীর শাড়ি পরা, সর্পিল হাঁটা, সার্কাসের জীবন্ত হাতি- বাঘ-ভাল্লুক, স্কুল পালিয়ে কেটে যেত বেলা সেইতো আমার রুপকথার নরসুন্দা, একটুখানি বাঁক দিলেই মেলা বাজার দেশ বিদেশের কত সওদাগরি নৌকা ভিড়েছে, তামা…
Tag: নদী নিয়ে কবিতা
ইন্দ্রনীল সুমন এর একগুচ্ছ কবিতা
নদীর গান ……………………………………. নদীর কাছে হাত পেতেছি, নদী বলল এসো, চরায় বোসো, খানিক গল্প করি, চাইলে ঘর বাঁধতে পারো, জোয়ার এলে পা ভিজিয়ো আলতো করে, কলঙ্ক নয় রাখবো আমি চোখের আড়াল, তোমার বুকে তখন চাঁদের কাঞ্জিভরম, আখতারীবাই বসত করে কান্না জুড়ে পান্না চুনী তোমার চোখে, লাব-ডুব-লাব লাব-ডুব-লাব, শব্দটুকু ঝরতে থাকে, ঝরতে থাকে, দিগন্তে ঐ রাত্রিজুড়ে…… যাপন ……………………………………… লাল জামাটা উড়িয়ে দিলাম চৈতি মেঘে যা উড়ে যা যেমন তেমন ভীষণ বেগে সমুদ্রসাত চৌদ্দ নদী তোর সাথে যাক শুনছি নাকি তোর এখনও দারুণ দেমাক! অযুত পাখি রাত জোনাকি আঁকছে ছবি পলাশফুলে আবির…
কবি ইন্দ্রনীল সুমন এর একগুচ্ছ কবিতা
বাঁওড় ………….. ইছামতী পাশ দিলে রোদেজলে ঝিলমিল বাঁওড়ের বুক শুনেছি নদীর না কি মৃত্যুদিন হয় শোকসভা, ফুলমালা ধূপগন্ধে স্মৃতি দু-মিনিট নীরবতা, মৃদু কাশি, ব্যস, ঠিক আছে! মানুষ পাশ দিলে, মন অমরায়, পবিত্র ঘণ্টাধ্বনি মৃদুতর সুর নিয়ত বাজতে থাকে, স্মৃতির জীবন দীর্ঘ হয়, দীর্ঘতর অবহেলা ঘরে, ধূলির বসন! নদী তার ছেড়ে যাওয়া জলচলে রাখে আপনার কীর্তিকথা, সুখ শোক হাসি, আনন্দ হতাশার চূর্ণকুন্তল… স্মৃতি বড় অসহায়, অমরতা নিয়ে, এ ডালে সে ডালে বসে, শাপগ্রস্ত ফিঙে! ……………………………………………………… মোহনিয়া ………………. স্বপ্নে এক নদী আসে কেন? ভৈরবী ভোরে? অহেতুক জলছুঁই খেলাধুলা শেষে ও মোর বালকদিন…
আফজল হোসেন আজম এর কবিতা “নদীকথা”
পূবেতে বন্দনা করি জগৎ বন্ধু ভানুশ্বর নিধিরবি উঠে তুমি বিশ্ব করো যে পসর। পশ্চিমে বন্দনা করি মক্কা ও মদিনায় দয়াল নবী শুয়ে আছে নয় কারো যে অজানা। দক্ষিনে বন্দনা করি বঙ্গোপ সাগর যে সাগরে বাইয়া খাইতো চান্দু সওদাগর। উত্তরে বন্দনা করি হিমালয় পর্বত যেথায় ঋষি মনি ঠাঁকুর সদায় থাকতো ব্রত। এইবারে নদ- নদীর কথা যাবো তোলে তারা সবি মানবস্বত্তা এ ভূ- মন্ডলে। সৃষ্টিকর্তার অপার লীলা নদ ও নদী বসুন্ধরা রুগ্ন হবে তাদের হারাই যদি। হিমালয়ের হিমবাহে আসিলো মা গংঙ্গা মায়েরকোলে শুয়ে আমরা আজ চতুরঙ্গা। পদ্মভূষণ করলো মোদের কণ্যা তারি যমুনা…
তরুণ কবি সৌমেন মন্ডল এর কবিতা “এক যে ছিল নদী”
এক যে ছিল নদী ছলাৎ ছলাৎ ঢেউ তুলত রোজ পানসি নৌকা ভাসিয়ে দূরের যাত্রী হতাম জলে কান পাতলেই শোনা যেত মাছেদের কথোপকথন কত নিঃসঙ্গ বিকেলে মন খারাপের পর্দা খসে হু হু করে ঢুকেছে বসন্ত বাতাস অতঃপর উন্নয়নের ধ্বজাধারী ধর্ষকদের গলায় শোনা যায়—মাইকটেস্টিং, হ্যালো…হ্যালো চিৎকার, শোরগোল চলে ক্রুশকাঠে প্রথম পেরেক সাঁটা এখন ঘ্যোৎ ঘ্যোৎ শব্দে স্তনবৃন্তে যান্ত্রিক ক্লিপ লাগিয়ে শুষে নিচ্ছে বুকের সব রক্ত গর্ভবতী নদীর সমস্ত শরীর জুড়ে চলছে সারি সারি কংক্রিটের থাম গাঁথা অতীতের ছাল ছাড়িয়ে নদীর পাড়ে দাঁড়ালেই দেখি— চাপ চাপ রক্তে ভিজে গেছে চেনা উঠোন। ধূলো ঝেড়ে…
কবিতা : শাখা বরাকের আর্তনাদ- মো. আজাদ বারী শিপু
কুশিয়ারায় জন্ম নিয়ে ছিলাম আমি সুখে, ভরা যৌবন জোয়ার ছিল আমার দেহে। বুকে ছিল হাজার প্রজাতির মাছের আনাগোনা, মাছ ধরিয়া উদরপূর্তি করতো মানুষজনা। জল ছিল মোর কানায় কানায় ডেউ ছিল মোর বুকে, মোর জলে শ্বস্য ফলায়ে পারের মানুষ থাকতো মহা সুখে। উজান থেকে ভাটির দিকে অবাধ ছিল যাওয়া আসা, স্বাধীন যাত্রায় বাধ সাজিলো কিছু মানুষ নামের সর্বনাশা। বুকে আমার বাঁধ বাঁধিল করলো দালান ঘর, যৌবন জুয়ার থামিয়ে দিল মানব নামের লোভী স্বার্থপর। বাঁচাও আমায় ওহে মানব বাঁচতে বড় স্বাদ, ভেঙ্গে ফেলো দালানকোঠা তুলে ফেলো বাঁধ। তবেই হারানো যৌবন আসবে আবার…
কবি মীরন রশীদ এর কবিতা “আমি নরসুন্দা বলছি”
আমি নরসুন্দা বলছি – মীরন রশীদ ব্রক্ষ্রপূত্রে জন্মেছিলাম শত জনম আগে ধনুর সাথে মিশেছিলাম প্রেমের অনূরাগে। আমার কোলে জন্মেছিলো ফুলেশ্বরী সূতী দু’কন্যাও মরছে আজ যেন অতীত স্মৃতি। আমার নামটি জানে কিন্তু বিজ্ঞ সভাসদ আমিতো সেই প্রিয় তোমার নরসুন্দা নদ। শতশত গ্রাম ও পাড়া দু’তীরেতেই আছে তীর দখলে মারছে আমায় কিছু অ’মানুষে। ভাটীর দিকে আজও আমি প্রানে বেঁচে আছি উজান গাঁয়ে মারছে ক্রমে কেমনে বলো বাঁচি? ফিরিয়ে দাও আমার বুকে অবারিত জল অহর্নিশি চাতক সম আঁখিযে ছলছল! অবহেলায় আর মেরোনা বাঁচাও দয়া করে জেনো তোমার জনম আমার তোমাদেরই তরে। বাঁচাও হে…
কপোতাক্ষ নদ – মাইকেল মধুসূদন দত্ত
সতত, হে নদ তুমি পড় মোর মনে সতত তোমার কথা ভাবি এ বিরলে। সতত যেমনি লোক নিশার স্বপনে শোনে মায়া যন্ত্র ধ্বনি তব কলকলে জুড়াই এ কান আমি ভ্রান্তির ছলনে। বহু দেশ দেখিয়াছি বহু নদ দলে কিন্তু এ স্নেহের তৃষ্ণা মেটে কার জলে দুগ্ধস্রোতরূপি তুমি মাতৃভূমি স্তনে। আর কি হে হবে দেখা যত দিন যাবে প্রজারূপে রাজরূপ সাগরেরে দিতে বারি রূপ কর তুমি এ মিনতি গাবে বঙ্গজ জনের কানে সখে-সখারিতে। নাম তার এ প্রবাসে মজি প্রেমভাবে লইছে যে নাম তব বঙ্গের সঙ্গীতে। ‘সতত হে নদ তুমি পড় মোর মনে/…